পুতুলের সাজে। —নিজস্ব চিত্র।
দেবী বোধনের আগে জঙ্গলমহলে এ এক অন্য শারদোৎসব!
শিশু-দর্শকদের সামনে উড়ে বেড়াচ্ছে টুনটুনি! লোপামুদ্রা মিত্রের গলা ধার করে টুনটুনি বলছে: ‘রাজা ভারী ভয় পেল, টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল/টুনিকে যে ভয় পায়, সেই রাজারে কে-বা চায়!’ রাগে রাজা ফোঁস ফোঁস করছেন। সব্যসাচী চক্রবর্তীর ভারী গলায় রাজামশাই লম্পঝম্প করে পেয়াদাদের বলছেন, ‘এ্যাই কে আছিস! হতচ্ছাড়া পাখিটাকে ধরে নিয়ে আয় তো!’ পাখি ধরতে গিয়ে নাজেহাল রাজার পেয়াদাদের দেখে কুটোপাটি হচ্ছে শিশুরা। রাজার নাক কাটা যেতেই রাম কিঙ্কর মঞ্চ জুড়ে শয়ে শয়ে শিশুর কোরাস: ‘টুনটুনা-টুনটুন কী জয়!’
নেট-প্রযুক্তির যুগে বাংলার ক্লাসিক সাহিত্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলতে শরৎকালকেই বেছে নিয়েছেন ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী রচিত টুনটুনির তিনটি গল্পকে নিয়ে ‘টুনটুনা-টুনটুন’ নামে নতুন মোড়কে একটি পাপেট ও মাপেট ড্রামার মহড়া চলছে সংস্থার নিজস্ব রামকিঙ্কর মঞ্চে। ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি প্রযোজিত সেই পুতুল আর মানুষের মিশেলে নাটকের মহড়া দেখার জন্য রামকিঙ্কর মঞ্চে রোজই কচি-কাঁচাদের ভিড়। সংস্থার অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্র’র কথায়, “বাংলার ধ্রুপদী শিশু সাহিত্য সম্পর্কে শিশুদের আগ্রহী করে তোলার জন্য আমরা টুনটুনির গল্পকে বেছে নিয়েছি। এখন রোজ মহড়া চলছে। আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বিনা টিকিটে তিনটি দিন মহরত শো করা হবে শিশুদের জন্যই।” সংস্থা সূত্রের খবর, ওই তিনটি দিন অরণ্যশহর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন স্কুলের কয়েকশো খুদে পড়ুয়াদের কোনও প্রবেশ মূল্য ছাড়াই নাটকটি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঞ্জীববাবুর বক্তব্য, “পুতুল আর মানুষের মিশেলে এই নাটকটি করার ক্ষেত্রে বহু বিশিষ্টজন বিনা পারিশ্রমিকে অকুন্ঠ সাহায্য করেছেন। তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এই নতুন প্রযোজনাটির মহরত ঘিরে শিশুদের মধ্যে উৎসবের মেজাজ। আমাদের কাছে এটাই শারদোৎসব!” উপেন্দ্রকিশোরের লেখা টুনটুনির তিনটি গল্পকে একত্রে নাট্যরূপ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্যকার সংগ্রামজিৎ সেনগুপ্ত। গীত রচনা, সুর ও আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করছেন কবি শুভ দাশগুপ্ত। রাজার ভূমিকায় কণ্ঠদান করেছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। টুনটুনির গান গেয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র। সব্যসাচী, লোপামুদ্রা, শুভ দাশগুপ্তেরা কেউই পারিশ্রমিক নেন নি। তাঁদের কথায়, “জঙ্গলমহলের শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে ভাল লাগছে।” এ ছাড়া বিভিন্ন চরিত্রের কন্ঠ ও গানে যোগ দিয়েছেন ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি এবং ঝাড়গ্রাম কথাকৃতির শিল্পীরা। এক বছর ধরে সংস্থার স্টুডিয়োয় চব্বিশটি পাপেট ও মাপেট তৈরি হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে মঞ্চসজ্জার অনুসঙ্গ। কলকাতার একটি স্টুডিয়োতে নাটকটির অডিও রেকডিংও হয়ে গিয়েছে। মহড়া দেখতে আসা সুনাসির, গোগোল, শ্রীপর্ণা, সোলাঙ্কি-রা বলছে, “রাজা টুনটুনিকে কষ্ট দিয়েছিল বলে নাক কাটা গেল! খারাপ কাজ করলে শাস্তি পেতে হয়। আমরা রাজা হতে চাই না।” চওড়া হেসে সঞ্জীববাবুরা বলছেন, “শারদোৎসবে এটাই আমাদের পরম-প্রাপ্তি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy