রাজ্যের বিশতম জেলা হতে চলেছে আলিপুরদুয়ার। যাবতীয় প্রশাসনিক প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের দাবি মেনে আগামী ২৫ জুন থেকে আলিপুরদুয়ারকে নতুন জেলা হিসাবে গণ্য করা হবে। দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হওয়ায় ইতিমধ্যেই উৎসবে মেতেছে আলিপুরদুয়ার। অন্য দিকে, কিছু ক্ষেত্রে ভাগ হলেও প্রশাসনিক ভাবে সেই একই থেকে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। কত দিনে জেলা ভাগ চূড়ান্ত হবে, এ বিষয়ে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কাছেও নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। তবে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা ভাগের জন্য যে ভাবে এগিয়ে তলা উচিত, ধীর গতিতে হলেও রাজ্য সরকার সে পথেই চলছে।
২০০২ সালে ভাগ হয়েছিল মেদিনীপুর জেলা। কাঁথি, তমলুক ও হলদিয়া মহকুমা নিয়ে তৈরি হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। পরে কাঁথিকে ভেঙে এগরা মহকুমা হয়। মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটাল ও ঝাড়গ্রাম এই চারটি মহকুমা থেকে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে। তবু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আয়তন বা জনসংখ্যা এতটাই বেশি যে, এই জেলাকেও প্রশাসনিক সুবিধের জন্যই ভাগ করা জরুরি বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা।
বৃহৎ এলাকায় উন্নয়নে গতি আনতে হলে জেলাকে ভাঙা জরুরি বলে বাম আমলেই সওয়াল শুরু হয়। পরে নির্দিষ্ট করে ঝাড়গ্রাম মহকুমাকে আলাদা জেলা করার দাবি ওঠে। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ঝাড়গ্রাম মহকুমাতেই হয়েছে ৮ টি ব্লক ও একটি পুরসভা। জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ।
ঝাড়গ্রামের চারদিকে রয়েছে ঘন জঙ্গল। ভাল চাষের সুযোগ নেই। পিছিয়ে পড়া জনজাতির সংখ্যা বেশি। সেই সুযোগে অতি বামপন্থা জন্ম নেয় জঙ্গলমহলে। জনযুদ্ধ, এমসিসি জঙ্গলমহলে সংগঠন বাড়িয়ে নেয়। পরে শুরু হয় মাওবাদীদের দাপট। উন্নয়ন ছাড়া জঙ্গলমহলে যে শান্তি ফেরানো অসম্ভব, তা অনুভূত হতে শুরু করে। তাই বামফ্রন্টের আমল থেকেই জেলাভাগের প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রথমেই ঝাড়গ্রামকে আলাদা করে পুলিশ জেলা হিসাবে ঘোষণা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
২০১১ সালে বাম সরকারের অবসান হয়। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামকে আলাদা করে স্বাস্থ্য জেলা হিসাবে ঘোষণা করেন। ভাগ করা হয় আবগারি দফতরকেও। ঝাড়গ্রামে নতুন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও আবগারি সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ করা হয়। ডব্লুবিএসইডিসিএল, বিএসএনএল-ও ভাগ হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু বেশির ভাগ দফতরই এখনও ভাগ হয়নি। জেলা ভাগ হলে প্রতিটি দফতরের প্রধান কার্যালয় খুলতে হবে জেলায়। নতুন করে তৈরি করতে হবে জেলাশাসকের অফিস। প্রয়োজন অতিরিক্ত জেলাশাসকও। চাই জেলা পরিষদ। রাজ্য সরকারের যে ৫৬টি দফতর রয়েছে, প্রতিটি দফতরেরই পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। বর্তমানে কী পরিকাঠামো রয়েছে, যদি উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকে তার জন্য জমি রয়েছে কি না, কী ভাবে তা তৈরি করা যাবে, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও রিপোর্টও তৈরি হয়েছে।
জেলা ভাগ হলে কোন কোন ব্লক ভাগ হবে, নতুন মহকুমা করার প্রয়োজন রয়েছে, তা কোথায় করা হবে, যাবতীয় নক্সা বানিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা ভাগ নিয়ে রাজ্য সরকার বসে রয়েছে এমন নয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এখুনি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা না করলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চলছে। জেলা ভাগের জন্য সর্বস্তর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি ও প্রস্তুতি চূড়ান্ত হলেই জেলাভাগের কথা ঘোষণা করা হবে।”
তবে কত দিনের মধ্যে তা হতে পারে, এ ব্যাপারে অবশ্য সকলেই অন্ধকারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy