Advertisement
E-Paper

প্রশিক্ষক নেই, অর্থ সঙ্কটে পিছোচ্ছে ক্রীড়া

আন্তঃবিদ্যালয় ক্রিকেট হোক বা জেলা স্তরের অ্যাথলিট মিট- প্রচারের অভাবে ফাঁকাই থাকে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের দর্শকাসন। কয়েকদিন আগে সংস্কার হয়েছে স্টেডিয়ামের গ্যালারির। তবে বরাদ্দ অর্থে মাঠের সংস্কার না হওয়ায় হতাশ জেলার ক্রীড়া প্রেমীরা। মাঠের উঁচু-নীচু মাটিতে খেলতে সমস্যায় পড়েন খেলোয়াড়েরা। দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবেও পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সম্প্রতি মাঠ সংস্কারের উপর জোর দিচ্ছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১৫
অরবিন্দ স্টেডিয়ামে গ্যালারির হাল ফিরলেও মাঠ এখনও বেহালই (বাঁ দিকে)। খেলার অনুপযুক্ত কলেজ-কলেজিয়েট মাঠও। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

অরবিন্দ স্টেডিয়ামে গ্যালারির হাল ফিরলেও মাঠ এখনও বেহালই (বাঁ দিকে)। খেলার অনুপযুক্ত কলেজ-কলেজিয়েট মাঠও। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

আন্তঃবিদ্যালয় ক্রিকেট হোক বা জেলা স্তরের অ্যাথলিট মিট- প্রচারের অভাবে ফাঁকাই থাকে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের দর্শকাসন। কয়েকদিন আগে সংস্কার হয়েছে স্টেডিয়ামের গ্যালারির। তবে বরাদ্দ অর্থে মাঠের সংস্কার না হওয়ায় হতাশ জেলার ক্রীড়া প্রেমীরা। মাঠের উঁচু-নীচু মাটিতে খেলতে সমস্যায় পড়েন খেলোয়াড়েরা। দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবেও পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সম্প্রতি মাঠ সংস্কারের উপর জোর দিচ্ছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ তাপস দে-র কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ায় অনেক কাজই করা সম্ভব হয়েছে। আগে স্টেডিয়ামের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। গ্যালারির সংস্কার, রং করা, বিদ্যুতের কাজ-সহ নানা কাজ হয়েছে। কিন্তু ওই টাকায় মাঠ সংস্কার করা যায়নি। নতুন করে মাঠ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন। সে জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি।”

অরবিন্দ স্টেডিয়াম ছাড়া শহরের কেন্দ্রে খেলার উপযোগী বড় মাঠ বলতে প্রথমেই আসে কলেজ-কলেজিয়েট মাঠের নাম। খেলার থেকে বেশি সভা-সমাবেশের দাপটে গর্তে ভরেছিল মাঠ। স্কুল-কলেজের খেলা তো বটেই, বিভিন্ন এলাকার খুদে খেলোয়াড়দের বিকেলবেলা স্কুল শেষে খেলার জায়গাও এটিই। মাঠ সংস্কারে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। সেই অর্থে মাটি ফেলে মাঠ সমতল করার কাজ হয়। যদিও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, বারবার মেলা-সভা-সমাবেশ হলে মাঠ যে শীঘ্রই গর্ত ও আবর্জনায় ভরবে মাঠ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়েছিল অরবিন্দ স্টেডিয়ামও। সংস্কারের অভাবে গ্যালারির অনেক অংশে ফাটল দেখা দিয়েছিল। ভেঙে পড়েছিল স্টেডিয়ামের তিনটি টিকিট কাউন্টারও। স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে আশিস চক্রবর্তী, তাপস দে-রা রাজ্যের কাছে অর্থ চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। বরাদ্দ ৫০ লক্ষ টাকায় শ্রী ফিরেছে স্টেডিয়ামের। জীর্ণ তিনটি কাউন্টারই সংস্কার করা হয়েছে। ক্লাব হাউসেরও অবস্থা ছিল তথৈবচ। বর্তমানে তা সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়াও ইতিউতি ঝুলতে থাকা পুরনো বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং সরিয়ে নতুন করে ওয়্যারিংও হয়েছে। তবে স্টেডিয়াম ঝাঁ চকচকে হলেও এবড়ো-খেবড়ো মাঠে খেলা কষ্টকর।

খেলার মাঠের সমস্যা কিছুটা মিটলেও দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে সমস্যায় খেলোয়াড়রা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, দক্ষ প্রশিক্ষকের সমস্যা রয়েছেই। এখানে অনুর্ধ্ব চোদ্দো ও ষোলো বছর বয়সী ছেলেদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শনিবার ও রবিবার— সপ্তাহে দু’দিন প্রশিক্ষণ চলে। সিএবি থেকে প্রশিক্ষক পাঠালেও সাধারণ মানের প্রশিক্ষক পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। আর সপ্তাহে চার দিন ফুটবলের প্রশিক্ষণ শিবির হয়। প্রশিক্ষণ হয় মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনি ও রবিবার। প্রশিক্ষণ দেন জেলার প্রশিক্ষকেরাই। তাপসবাবুর কথায়, “আমরা বারবার সিএবি এবং আইএফএ-র কর্তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, তাঁরা যাতে ভাল প্রশিক্ষক পাঠান। ছেলেরা ভাল প্রশিক্ষণ পেলে তবেই না বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারবে। কিন্তু প্রশিক্ষণ সাধারণ মানের হলে কলকাতার বড় ক্লাবগুলির ছেলেদের সঙ্গে এরা এঁটে উঠতেই পারবে না।”

শহরের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ ভকত বলেন, “আমার ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ফুটবলের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠাই। কিন্তু ভাল প্রশিক্ষকের বড্ড অভাব। বর্তমান সময়ে কলকাতা থেকে ভাল প্রশিক্ষক নিয়ে আসায় কী যে সমস্যা বুঝতে পারছি না। এভাবে চললে জেলায় খেলার মান উন্নয়ন সত্যিই অসম্ভব।” “অর্থ সঙ্কটের কারণে সাধারণ ক্লাবের পক্ষে হয়তো বড় মাপের কোচ বা খেলার সব ধরনের সামগ্রী নিয়ে আসা সম্ভব নয়। কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয়, তাহলে তা অতি দুর্ভাগ্যের।”, আক্ষেপ রামকৃষ্ণবাবুর। বেঙ্গল টাইগার ক্লাবের ক্রিকেট কোচ সুশীল শিকারিয়ার বক্তব্য, “পরিকাঠামোগত সমস্যা, ভাল প্রশিক্ষকের সমস্যা তো রয়েছেই। নিয়মিত মাঠ পরিষ্কারও জরুরি। না হলে কোনও ভাবেই মাঠ ভাল রাখা সম্ভব নয়। এই বিষয়গুলির উপর বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন।” তাঁর কথায়, “একই সঙ্গে স্কুল ক্রীড়ার উপরেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তবেই খেলার সার্বিক মান উন্নয়ন সম্ভব। অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখেছি, বর্তমানে টাকা খুব একটা সমস্যা নয়। সদিচ্ছাটাই প্রয়োজন।”

শুধু প্রশিক্ষক নয়, জেলায় ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত খামতিও রয়েছে। শহরে একটিও সরকারি ইন্ডোর স্টেডিয়াম নেই। টেবিল টেনিস, টেনিস, ভলিবল থেকে শুরু করে সব ধরনের খেলা মূলত ইন্ডোর স্টেডিয়ামেই হয়। দু’একটি বেসরকারি জায়গায় কিছুটা সুবিধা পাওয়া গেলেও এক ছাদের তলায় একাধিক খেলাধুলোর কোনও সুযোগ নেই। টেবিল টেনিস খেলোয়াড় এরিনা দত্তের কথায়, “শহরে ইন্ডোর স্টেডিয়াম থাকা খুব দরকার। বেসরকারি ক্লাবের উপরে আমাদের নির্ভর করে থাকতে হয়। সরকারি ভাবে ইন্ডোর স্টেডিয়াম গড়লে খেলার ব্যাপারেও সরকার নানা পদক্ষেপ করবে। কখনও টেবিল দিয়ে, কখনও ব্যাট বা বল দিয়ে। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগদানের ক্ষেত্রেও নানা সূযোগ মিলবে।”

প্রশ্ন উঠছে, ক্রিকেট ফুটবলের বাইরে কী তাহলে অন্য খেলার ক্ষেত্রে সরকার পদক্ষেপ করবে না? এ ব্যাপারে খেদ রয়েছে টেবিল টেনিস কোচ শ্রীপর্ণা নন্দেরও। তাঁর কথায়, “সরকারিভাবে ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি খুব জরুরি। যেখানে সব ধরনের খেলাধুলোর সুযোগ পাবেন খেলোয়াড়েরা। এতে অনেক দ্রুত খেলার মানের উন্নয়ন ঘটবে। টেবিল টেনিসের ক্ষেত্রে বলতে পারি, এই সুযোগ না পাওয়ার ফলে আমাদের বেসরকারি ক্লাবের উপর নির্ভর করতে হয়। তাঁরা সাহায্য করেন বলে সমস্যা হয় না। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে তো এমন সুযোগ নাও মিলতে পারে।”

সরকারিভাবে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধে থাকলে তা যে সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইন্ডোর স্টেডিয়ামের প্রয়োজনীয়তার কথা অবশ্য স্বীকারও করে নিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি আশিস চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “একটি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। আশা করি, ইতিবাচক সাড়াই মিলবে। ইন্ডোর স্টেডিয়াম করতে পারলে জেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলার মানের আরও উন্নতি ঘটবে।”

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর মেদিনীপুর’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

amar shahor suman ghosh medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy