অভিযোগের বহর কমাতে বাড়ানো হল অভিযোগ জানানোর ‘ফি’। দু’-চার টাকা নয়, তা একেবারে দ্বিগুণ করে দিল তৃণমূল পরিচালিত মেদিনীপুর পুরসভা।
বছর পাঁচেক আগেও এ ধরনের কোনও নিয়ম মেদিনীপুর পুরসভায় ছিল না। সাদা কাগজে লিখে অভিযোগ জানালেই হত। তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পুরবোর্ড গড়ার পর অভিযোগ জানানোর জন্য ৫০ টাকা ফি ধার্য করে। এ বার সেই ফি-র পরিমাণ বাড়িয়ে করা হল ১০০ টাকা। এখন কেউ কোনও অভিযোগ জানাতে গেলেই তাঁকে ১০০ টাকা দিতে হবে। নাহলে অভিযোগ গৃহীত হবে না।
কেন এই পদক্ষেপ?
পুরপ্রধান প্রণব বসুর কথায়, “সারবত্তাহীন অভিযোগ এড়াতেই এই ফি নির্ধারণ। আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি, প্রতিবেশী পরিবারের সঙ্গে সদ্ভাব না থাকায় প্রায়ই সারবত্তাহীন অভিযোগ করেন পুর-নাগরিকেরা। যাঁরা ১০০ টাকা জমা দিয়ে অভিযোগ জানাবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অকারণে টাকা খরচ করবেন না। সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বাড়ি করতে গিয়ে কেউ পুরসভার নিকাশি নালা বুজিয়ে ফেলছে। নক্সা না মেনে বাথরুম তৈরি করছে অন্যত্র। কিংবা অন্যের জমি দখলের উদ্দেশ্যে দোতলার ঝুল বারান্দাটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। মূলত, বাড়ি তৈরিকে কেন্দ্র করেই বেশি অভিযোগ আসে পুরসভায়। পুর-কর্তৃপক্ষের মতে, সারবত্তাহীন অভিযোগের ক্ষেত্রে ঝক্কি পোহাতে হয় যথেষ্ট। অভিযোগ পাওয়ার পর তা লিপিবদ্ধ করা, পুরকর্মীদের দিয়ে তদন্ত করানো, দু’পক্ষকে শুনানিতে ডাকা, এ সবে সময় যেমন নষ্ট হয় তেমনই পুরসভার খরচও হয়। শুধু কাগজ-কালি-শ্রমের খরচ নয়, তদন্তে যাওয়ার জন্য গাড়ির তেলের খরচও লাগে। ফি লাগু হলে অহেতুক ঝক্কি এড়ানো যাবে বলেই আশা পুর-কর্তৃপক্ষের
কিন্তু সকলের কি ১০০ টাকা দিয়ে অভিযোগ করার সামর্থ্য রয়েছে? বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, খেটে-খাওয়া শ্রেণির মানুষের! এ ক্ষেত্রে পুরপ্রধানের যুক্তি, “এখন এমন কোনও মানুষ নেই যে ১০০ টাকা খরচ করতে পারবেন না।” পুরসভার এই সিদ্ধান্তকে অবশ্য সমর্থন করছেন না অন্য দলের কাউন্সিলররা। কংগ্রেস কাউন্সিলর সৌমেন খানের কথায়, “পুরসভায় ভিড় কমাতে, কোনও অভিযোগ নেই এটা দেখাতেই ফি বাড়ানো হয়েছে। আমরাও ওয়ার্ডের কারও সমস্যা হলে নিজেরা গিয়েই সমাধানের চেষ্টা করি। কে ১০০ টাকা দিতে যাবে!” এই সিদ্ধান্তে আপত্তি রয়েছে পুরকর্মীদের একাংশেরও। এক পুরকর্মীর কথায়, “কত মানুষ এসে ফি-এর কথা শুনে, পকেট হাতড়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেনও।”
ক্ষুব্ধ পুর-নাগরিকরাও। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, অভিযোগ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কেন? যখন বাড়ি তৈরি হয়, তা তো পুরসভার নকশা মেনেই করার কথা। কিন্তু কোনওদিন পুর-কর্তৃপক্ষ কি দেখতে আসেন, নকশা মেনে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে কিনা। আসেন না বলেই সেই সুযোগ নিয়ে মানুষ বেআইনি কাজ করেন। তখনই প্রতিবেশীকে অভিযোগ করতে হয়। যেটা পুরসভার দেখার কথা, তা তাঁরা করবেন না, প্রতিবেশীকে করতে হবে, আবার তার জন্যে ফি দিতে হবে, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে। শহরবাসী সামসুল হক, জয়ন্ত পালদের কথায়, “অভিযোগ করলেও সুফল পেতে নাকের জলে চোখের জলে হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোনও সুরাহা মেলে না। সমস্যা সমাধানের পরও যদি টাকা নিত তাহলে একটা কথা ছিল। এতে তো টাকাও যাবে, কাজও হবে না।” তবে এর ফলে বেশিরভাগ মানুষই আর অভিযোগের পথে যাবেন না বলে মনে করছেন বেশিরভাগ শহরবাসী।
গত কয়েক দিনের তথ্যও বলছে ফি বাড়ানোর পরে পুরসভায় অভিযোগের বহর কমেছে। শুক্রবার মাত্র তিনটি অভিযোগ জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার জমা পড়েছিল চারটি অভিযোগ। আর বুধবার নথিভুক্ত অভিযোগের সংখ্যা তিনটি। এর আগে কিন্তু দিনে গড়ে ১৫টি অভিযোগ জমা পড়ত বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy