Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বাতিল জিনিসে ঘর সাজানোই শখ যূথিকার

ইতিউতি পড়ে থাকা কাচের টুকরো সযত্নে কুড়িয়ে নিয়ে বাড়িতে রাখলেন। তারপরই ভাবনা শুরু। সেই সব কাচ জোড়া লাগিয়ে বানিয়ে ফেললেন একটা আস্ত ঘোড়া! ফ্রেমে বাঁধিয়ে টাঙিয়ে দিলেন দেওয়ালে।

নিজের সৃষ্টির মাঝে যূথিকাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের সৃষ্টির মাঝে যূথিকাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

ইতিউতি পড়ে থাকা কাচের টুকরো সযত্নে কুড়িয়ে নিয়ে বাড়িতে রাখলেন। তারপরই ভাবনা শুরু। সেই সব কাচ জোড়া লাগিয়ে বানিয়ে ফেললেন একটা আস্ত ঘোড়া! ফ্রেমে বাঁধিয়ে টাঙিয়ে দিলেন দেওয়ালে।

এ ভাবেই কাচভাঙা থেকে কাঠের টুকরো, প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে আইসক্রিম খাওয়ার চামচ, সিডি, ফোম, নারকেলের খোল, খেজুরের বিচি, ভাঙা চুড়ি থেকে দর্জির ফেলে দেওয়া ছোট ছোট কাপড়ের টুকরো— এমন নানা জিনিস সংগ্রহ করে বেড়ান তিনি। আর বানিয়ে ফেলেন ফুলের গাছ, তাতে বসে থাকা পাখি, লতানো গাছ কিংবা বক। শৌখিন মানুষ বাড়ি সাজানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কিনে আনেন রকমারি সরঞ্জাম। মেদিনীপুর শহরের কোতবাজারের যূথিকা দাসও বাড়ি সাজিয়েছেন। কিন্তু সব ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে। বাড়িতে ঢুকেই দেখা যাবে একটি মাটির তৈরি পাত্র। সেই পাত্রে রয়েছে প্লাস্টিকের ফুলের গাছ-পাখি, নুড়ি পাথর, কাঠের টুকরো। এক ঝলকে দেখে বোঝা দায়, জঞ্জাল আর আবর্জনার স্তূপে যে সব জিনিস পড়ে থাকার কথা, তা দিয়েই বাড়ি সাজিয়েছেন যূথিকাদেবী।

এ বাড়ির কোনও জিনিসই ফেলা যায়নি। একবার শখ করে বাড়িতে লাগিয়েছিলেন লাউ গাছ। সেই গাছের লাউয়ের ভেতরের অংশ বাদ দিয়ে খোল কেটে তৈরি করেছেন ঘর সাজানোর জিনিস। আকাশের ওড়া ঘুড়ি কেটে পড়লে কুড়িয়ে নেন। সেই ঘুড়ির সঙ্গে থাকা সরু বাঁশের ছিলকে, বাড়িতে হওয়া পোরুল জাল দিয়ে বানিয়ে ফেলেন গাছ। দর্জির ফেলে দিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ জুড়ে জুড়ে তৈরি করেন বিছানার চাদর। পুঁতি দিয়ে বানান সাইকেল, কুকুর। ফোম দিয়ে দরজার পর্দা। এমনকী বাদ যায় না ওষুধের স্ট্রিপও। তাকেও বদলে ফেলেন ফুলে। পুরনো দিনের ফোন, ভেঙে যাওয়া উইন্ডো এসিতে রং-তুলির ছোঁয়া বুলিয়ে করে তোলে সুদৃশ্য।

যূথিকাদেবী কোনওদিন আঁকা শেখেননি। কলেজ ভর্তি হওয়ার পরেই বিয়ে হয়ে যায়। তবে গানের চর্চা ছিল। স্বামী শ্যামাকান্ত দাস মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বোকারো স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করতেন। সারাদিন বাড়িতে বসে কী করবেন, ভাবতে ভাবতেই নানা ফেলে দেওয়া জিনিসকে কাজে লাগানোর কথা মাথায় আসে তাঁর। সেই শুরু। এখন ৭০ বছর বয়সেও পুরোদমে সৃজন-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যূথিকাদেবীর কথায়, “দুপুরে ঘুমোনোর অভ্যেস নেই। কত আর টিভি দেখব। সারা দুপুর ধরে ভাবি আর এই সব করি।” তাঁর স্বামী শ্যামাকান্তবাবু গর্ব করে বলছেন, “আমার বাড়িতে ঘর সাজানোর কোনও জিনিস কেনা নয়। বৌয়ের হাতের গুণই ঘরের শোভা বাড়িয়েছে ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suman ghosh juthika medinipur home decoration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE