পিছিয়ে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় লোডশেডিং আর বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। বহু এলাকাতেই আলো টিমটিম করে জ্বলে। লো ভোল্টেজের কারণে মার খায় চাষ। পরিস্থিতি দেখে জেলায় আরও দশটি নতুন সাব-স্টেশন তৈরিতে উদ্যোগী হল বিদ্যুৎ দফতর। পাঁচটি সাব-স্টেশনের জন্য ইতিমধ্যে জমির সংস্থানও হয়েছে। প্রতিটি সাব-স্টেশন তৈরি করতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। বিদ্যুৎ কর্তারা মনে করছেন, প্রস্তাবিত সাব-স্টেশনগুলো গড়ে উঠলে জেলায় আর লো-ভোল্টেজ সমস্যা থাকবে না।
জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “জেলাতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে নতুন সাব-স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন লো-ভোল্টেজর সমস্যা মিটবে, অন্যদিকে লাইনগুলো ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।”
কোথায় কোথায় তৈরি হবে নতুন সাব-স্টেশন?
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, শালবনির, গড়বেতা-১, কেশপুর, ডেবরা, সবং, খড়্গপুর-২, নারায়ণগড়, বিনপুর-১ এবং বিনপুর-২ ব্লকে একটি করে ৩৩- ১১ কেভি সাব-স্টেশন তৈরি করার প্রস্তাব রয়েছে। মেদিনীপুর শহরের পুলিশ লাইনেও নতুন সাব স্টেশন হবে। এর মধ্যে শালবনির দক্ষিণশোল, গড়বেতার ফুলবেড়িয়া, সবংয়ের বরোদা, খড়্গপুর ২ ব্লকের শ্যামচকের মতো এলাকায় ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় জমি কিনে নিয়েছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। বাকি এলাকায় জমির খোঁজ চলছে।
জেলায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২৯টি ব্লক এবং ৮টি পুরসভা রয়েছে। আর জেলায় বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। অথচ বিস্তীর্ণ এই এলাকার জন্য বিদ্যুতের সাব-স্টেশন রয়েছে ২৭টি। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। প্রতি মাসে গড়ে ১০-১৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে হঠাৎ কোনও সাব-স্টেশনের ট্রান্সফরমারে ত্রুটি ধরা পড়লে আশপাশের এলাকা দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে ডুবে থাকে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতের কাজ শুরু হলেও চটজলদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। টানা লোডশেডিংও হয় বহু এলাকায়। বিস্তীর্ণ এলাকায় লো ভোল্টেজের সমস্যাও রয়েছে। বিশেষ করে চাষের মরসুমে লো-ভোল্টেজের সমস্যা হলে কৃষকেরা সমস্যায় পড়েন। ধর্না-বিক্ষোভ থেকে অবরোধ, পথে নামতে বাধ্য হন কৃষকেরা।
জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবুর অবশ্য দাবি, “জেলায় লোডশেডিংয়ের সমস্যা নেই! লাইন মেরামতের জন্য কখনও-সখনও শাট-ডাউন করতে হয়। সেই কারণেই লোডশেডিং হয়। আর ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ- বিভ্রাট হতে পারে। দুর্যোগ তো আর জানিয়ে আসে না!”
পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় বিদ্যুৎ দফতর লোকসানেই চলে। জেলার জন্য যে পরিমাণ অর্থে বিদ্যুৎ কেনা হয়, বিদ্যুৎ বিক্রি করে তার মাত্র ৫০ শতাংশ অর্থ উঠে আসে। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার কথায়, “যদি মাসে ১৮৬ থেকে ১৯০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হয়, তাহলে তা বিক্রি করে মাসে ৮৬ থেকে ৯০ কোটি টাকা উঠে আসে। অর্থাৎ, প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঘাটতি বা লোকসান হয়।” ওই কর্তার মতে, “বিদ্যুৎ চুরি ঠেকানো গেলে লোকসানের পরিমাণ অনেক কমবে। ইতিমধ্যে এ জন্য কিছু কঠোর পদক্ষেপও করা হচ্ছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, সার্বিক পরিস্থিতি দেখে অস্থায়ী সংযোগগুলোকে স্থায়ী করার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। দাঁতন, কেশপুরের মতো এলাকায় ইতিমধ্যে অনেক অস্থায়ী সংযোগকে স্থায়ী করা হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের ওই কর্তার কথায়, “জেলায় বিদ্যুৎ দফতর লোকসানের মধ্য দিয়ে চলছে। এই ভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। বিদ্যুৎ চুরির বিষয় কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে।”
এখন খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক, মেদিনীপুরের খাসজঙ্গলে সাব-স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। চলতি বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের সাব-স্টেশন থেকে আশপাশের কলকারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবু বলেন, “অস্থায়ী সংযোগগুলো স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় সামান্য সমস্যা রয়েছে। সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হচ্ছে। যে সব লাইনের অবস্থা একটু খারাপ সেগুলো মেরামতেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন সাব-স্টেশনগুলো গড়ে উঠলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন। এলাকায় এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহও হবে।”
এরই মধ্যে আবার জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার তোড়জোর শুরু হয়েছে। জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। বাকি সাড়ে পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনটি করে ঘর রয়েছে, তাদের ৫ হাজার টাকা এবং যে সব প্রতিষ্ঠানে তিনটির বেশি ঘর রয়েছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সেই অর্থেই বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy