Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বিদ্যাসাগরের সমাবর্তনে ব্রাত্য পড়ুয়ারাই

যাদবপুরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কিছু পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের হাত থেকে শংসাপত্র নিতে রাজি হননি। আর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বড় অংশের পড়ুয়া সমাবর্তনের মঞ্চে উঠতে চেয়েও পারলেন না। অল্প ক’দিনের ব্যবধানে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বিপরীত ছবি দেখা গেল।

সমাবর্তনে জেলা তৃণমূল নেতারা (বাঁ দিকে)। মঞ্চে তখন আচার্য-উপাচার্য-শিক্ষামন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

সমাবর্তনে জেলা তৃণমূল নেতারা (বাঁ দিকে)। মঞ্চে তখন আচার্য-উপাচার্য-শিক্ষামন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

যাদবপুরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কিছু পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের হাত থেকে শংসাপত্র নিতে রাজি হননি। আর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বড় অংশের পড়ুয়া সমাবর্তনের মঞ্চে উঠতে চেয়েও পারলেন না। অল্প ক’দিনের ব্যবধানে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বিপরীত ছবি দেখা গেল।

২০১৩ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দা ববিতা দাস। এ বছরের সমাবর্তন অনুষ্ঠান থেকে তাঁর পদক নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পাননি। তাঁর কথায়, সমাবর্তনে থাকতে হলে যে আবেদন করতে হবে, সে কথা জানানোই হয়নি! যখন জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তখন তাঁরা জানান, আবেদন জানানোর সময় শেষ হয়ে গিয়েছে! পরে এসে পদক নিয়ে যেতে। ক্ষোভের সঙ্গে ববিতা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফিলতির জন্যেই সমাবর্তনে থাকতে পারলাম না।” এক ধাপ এগিয়ে পদার্থবিদ্যার ছাত্র পুলক পাল বলছেন, “আমরাই যদি উপস্থিত হতে না পারি তা হলে এমন অনুষ্ঠানের দরকার কি!”

যাঁদের জন্য সমাবর্তন, তাঁদের একটা বড় অংশই অনুপস্থিত রইলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, যাতে সকল পড়ুয়া ১৭ তম সমাবর্তনে যোগ না দিতে পারেন সে জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের তেমন প্রচারই করেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সমাবর্তন নিয়ে নোটিস দেওয়া হলেও তাতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে থাকতে হলে আবেদন করতে হবে তা-ও জানানো হয়নি। সেখানে শুধু শিক্ষকেরা যেন ছুটি না নেন ও সহযোগিতা করেন তার উল্লেখ করা হয়েছিল। রেজিস্ট্রেশন করার উল্লেখ ছিল না। ফলে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই, এমনকি বিভিন্ন বিভাগের প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্রছাত্রীরাও অনুষ্ঠানে আচার্যের হাত থেকে পদক নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অভিযোগ, যে সভাকক্ষে অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে সেখানে আসন সংখ্যা কম (৭০০) বলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীরবে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।

এই সমাবর্তনে ২০১১-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে পাশ করা স্নাতকোত্তর ও ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকস্তরের এবং পিএইচডি প্রাপকদের শংসাপত্র দেওয়া হয়। পিএইচডি প্রাপকের সংখ্যা ১৪৫। আর স্নাতক, স্নাতকোত্তর মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় বাইশশো। এঁদের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন মাত্র ৩০৮ জন। তাঁরা কী ভাবে জানলেন? উপস্থিত পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাঁদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়নি। মুখে মুখে জেনে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

এ বারই প্রথম বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তাতেও এড়ানো গেল না বিতর্ক! কেন? সদুত্তর এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন, “আমরা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন জমা দিতে বলেছিলাম। তার মধ্যে যাঁরা সমাবর্তনে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তাঁদের নাম রয়েছে। তাঁরা উপস্থিত হয়ে শংসাপত্রও নিয়েছেন।”

পড়ুয়াদের বড় অংশ সমাবর্তনে উপস্থিত হতে না পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষের তিনটি সারির অর্ধেকটা জুড়ে এবং গোটা ব্যালকনিতেই উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিতেরা। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। যেমন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরিরা! আর ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা। এমনকি কিছু আসন ফাঁকাও ছিল। কারণ, সব আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত থাকতে পারেননি।

যা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে জেলার ছাত্র ও শিক্ষক মহলে। যদিও এর মধ্যে ত্রুটির কিছু দেখছেন না কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, “স্থানীয় গুণী মানুষদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েই থাকি। এক্ষেত্রেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। এতে অন্যায় কিছু নেই।”

এ দিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য রাখেন আচার্য তথা রাজ্যপাল। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পুণের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এর ডিরেক্টর কৃষ্ণ এন গণেশ। অনুষ্ঠানে তিন জনকে সাম্মানিক ডি লিটও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং আইনজীবী বৈভবভূষণ উপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE