Advertisement
২১ মে ২০২৪
খড়্গপুর

বাড়ছে ছিনতাই, রেলশহরে বিপন্ন নিরাপত্তা

বিপন্ন নিরাপত্তা। দিনেদুপুরে রেলশহরে একাধিক ছিনতাই, খুনের ঘটনায় আতঙ্কে শহরবাসী। মিশ্র ভাষাভাষির শহর খড়্গপুরে কুখ্যাত রেল মাফিয়াদের ত্রাস কমেছে। তবে রেলশহরে অপরাধে দাঁড়ি পড়েনি। শুধু তার রূপ বদলেছে। আগে যেখানে রেলের ছাঁট লোহার কারবার আর ঠিকাদারি নিয়ে মাফিয়ারাজ চলত, এখন সেখানে দাপট বেড়েছে চোর, ছিনতাইবাজদের।

দুষ্কৃতীদের গুলিচালনার পরেও বদলায়নি কিছুই। এখনও ৭ নম্বর রেল কলোনি এলাকায় আলো আঁধারি পথেই চলে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত।

দুষ্কৃতীদের গুলিচালনার পরেও বদলায়নি কিছুই। এখনও ৭ নম্বর রেল কলোনি এলাকায় আলো আঁধারি পথেই চলে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত।

দেবমাল্য বাগচি
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

বিপন্ন নিরাপত্তা।

দিনেদুপুরে রেলশহরে একাধিক ছিনতাই, খুনের ঘটনায় আতঙ্কে শহরবাসী। মিশ্র ভাষাভাষির শহর খড়্গপুরে কুখ্যাত রেল মাফিয়াদের ত্রাস কমেছে। তবে রেলশহরে অপরাধে দাঁড়ি পড়েনি। শুধু তার রূপ বদলেছে। আগে যেখানে রেলের ছাঁট লোহার কারবার আর ঠিকাদারি নিয়ে মাফিয়ারাজ চলত, এখন সেখানে দাপট বেড়েছে চোর, ছিনতাইবাজদের। বন্দুক দেখিয়ে দিনে-দুপুরে চলছে লুঠপাট। বিগত এক বছরে শহরের নানা প্রান্তে দুষ্কৃতীদের রমরমা বেড়েছে। টাকা ছিনতাই করতে এসে ঘটেছে দুষ্কৃতীদের গুলিচালনার ঘটনাও। যদিও কিনারা হয়নি অধিকাংশ ঘটনারই।

রামবাবু, শ্রীনুর দুনিয়া এই মুহূর্তে আর নেই। রেল মাফিয়াদের দাপটও সে ভাবে নজরে পড়ে না। তবে শহরের বুকে গুলি চলা হোক বা মোটরবাইক চেপে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। দুষ্কৃতীদের মধ্যে মারপিটেও বাড়ছে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রবণতা।

সাম্প্রতিক কালে চুরি-ছিনতাই-খুনের ঘটনায় খড়্গপুরের যে সব এলাকা শিরোনামে উঠে এসেছে:

বালিহাটি

১৯ জুলাই: মেদিনীপুর থেকে পাঁশকুড়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ১৩ লক্ষ টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে খড়্গপুর গ্রামীণের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বালিহাটিতে লুঠ হয়। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে টাকা লুঠ করে চম্পট দেয়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ খড়্গপুরের মালঞ্চ-র রাজা সিংহ (রসিম)-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় লুঠ হওয়া টাকাও। রাজা সিংহের বিরুদ্ধে ২০১২

সালেও খড়্গপুরের খরিদায় একটি সোনার দোকানে ডাকতি করতে এসে এক যুবককে খুন করার অভিযোগ রয়েছে।

ওটি রোড

৭ সেপ্টেম্বর: খড়্গপুর কলেজের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গ্যাস কাটার দিয়ে ব্যাঙ্কের ভল্ট কেটে টাকা চুরির চেষ্টায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের পিছনের বাতানুকূল যন্ত্রের একটি অংশ কেটে চোরেরা ভিতরে ঢোকে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশ অভিযোগ করলেও ওই ঘটনায় এখনও কেউ ধরা পড়েনি।

ইন্দা

৮ সেপ্টেম্বর: ইন্দার হাতিগলাপুল সংলগ্ন রেল কলোনির একটি কোয়ার্টারে কেউ না থাকার সুযোগে চোরেরা সর্বস্ব নিয়ে পালায়। ওই কোয়ার্টারের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাসের দাবি, বাড়ি থেকে দু’লক্ষ টাকার গয়না ও নগদ ৩৫হাজার টাকা খোওয়া গিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ কিছু টাকা উদ্ধার করলেও গয়নার হদিস মেলেনি। ধরা যায়নি দুষ্কৃতীদেরও।

২২ অক্টোবর: ইন্দার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে ব্যাঙ্কের সামনেই টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। আইআইটি’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রঞ্জিতকুমার দত্তের দাবি, লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। দিনেদুপুরে শহরের ব্যস্ততম এই এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এখনও সেখানে নিয়মিত পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা নেই। টহলরত পুলিশের একটি দল একইসঙ্গে শহরের মালঞ্চ ও ইন্দা এলাকায় নজরদারি চালায়। মালঞ্চ ও ইন্দার মধ্যে দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। ফলে ইন্দায় কোনও ঘটনা ঘটলে মালঞ্চ থেকে পুলিশের আসতে দেরি হয়। তাছাড়া এলাকায় মাঝে-মধ্যে পুলিশের নজরদারি চোখে পড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে ওই ব্যাঙ্কের পিছনের ফকিরমহল্লা এলাকা দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

দুষ্কৃতী সামলাতে গিরিময়দান থেকে নিমপুরা যাওয়ার
রাস্তায় টহলরত লাঠিধারী পুলিশ যেন নিধিরাম সর্দার।

ওয়ার্কশপ পোস্ট অফিস মোড়

১৩ সেপ্টেম্বর: পিছন দিক থেকে একটি মোটরবাইকে করে এসে পূরণ গুপ্ত নামে এক ব্যবসায়ীর টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। টাউন থানার অদূরে ওয়ার্কশপ পোস্টঅফিসের কাছের এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। পুলিশ ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করলেও তদন্ত আর বিশেষ এগোয়নি। বছর পাঁচেক আগে পোস্ট অফিসের কাছে রেলের বেশ কিছু পরিত্যক্ত কোয়ার্টার ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ওই এলাকা সুনসানই থাকে। ওই ঘটনার পর পোস্ট অফিস মোড়ে আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। এখনও সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায় পোস্ট অফিস মোড় থেকে খড়িদা যাওয়ার রাস্তা। চোখে পড়ে না পুলিশের টহলও।

ভগবানপুর

১৫ সেপ্টেম্বর: শহরের বুকে গুলির লড়াইয়ে স্তম্ভিত হন শহরবাসী। ভগবানপুরে গুলিবিদ্ধ হন শ্রীনু অনুগামী বলে পরিচিত দীপঙ্কর শুক্লা। অভিযোগ, এলাকা দখলের লড়াইয়ে শ্রীনুর দল থেকে ছিটকে যাওয়া একদল যুবকই ওই ঘটনায় যুক্ত। গ্রেফতার হন তিন জন। তারপরে ৩ অক্টোবর দুর্গাপুজোর নবমীর রাতে ভগবানপুর সংলগ্ন শাস্ত্রীনগরে দীপঙ্করের বিরোধী গোষ্ঠীর বছর একুশের সঞ্জীব যাদব গুলিবিদ্ধ হয়। এক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল ওঠে দীপঙ্কর-সহ পাঁচ জনের নামে। যদিও দীপঙ্কর বাদে চার জন গ্রেফতার হন। এখনও সন্ধ্যা নামলেই ভগবানপুরের গলিপথে বাড়ে অচেনা যুবকদের আনাগোনা। চলে নানা অসামাজিক কাজকর্মও। পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাশের মালঞ্চ মেন রোডে পুলিশি টহল শুরু হয়েছে। তবে গলিপথ এখন অরক্ষিতই। শাস্ত্রীনগরেও নেই নজরদারির ব্যবস্থা।

৭ নম্বর রেল কলোনি

২০ অক্টোবর: ছিনতাই করতে এসে গুলি চালাল দুষ্কৃতীরা। স্টেশন থেকে ফেরার পথে ৭ নম্বর রেল কলোনিতে এক সোনার দেকানের কর্মচারীর ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। দু’ রাউন্ড গুলিও চালায় তাঁরা। গুলি দু’টিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ঘটনার পর স্থানীয় একটি ক্লাবে আশ্রয় নেন প্রদীপ ধাওলিয়া নামে ওই কর্মী। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলেও কাউকে ধরা যায়নি। রেল কলোনি মোড়ে টিমটিম করে জ্বলে পথবাতি। তবে সারা বছর আঁধারেই ডুবে থাকে রেল কলোনির মধ্য দিয়ে যাওয়া গোলবাজারের ভান্ডারিচক থেকে খড়্গপুর স্টেশনের মালগুদাম যাওয়ার রাস্তা। এই সুনসান রাস্তা দিয়েই নিয়ে যাতায়াত করেন অসংখ্য রেলযাত্রী। ঘটনার পরেও বসেনি পুলিশ পিকেট।

পুরাতনবাজার ও দেবলপুর

২৮ অক্টোবর: পুলিশের নাকের ডগায় খড়্গপুরের পুরাতনবাজার এলাকায় তিনটি দোকানের শার্টার ও মন্দিরের প্রণামী বাক্স ভেঙে টাকা চুরি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। ওই রাতে দেবলপুরের একটি দোকানেও চুরির ঘটনা ঘটে। পুরাতনবাজারে ঘটনাস্থলের অদূরেই পুলিশ টহল দিলেও ঘটনার কিছুই টের পায়নি তাঁরা। দু’টি ক্ষেত্রেই চুরির কিনারা হয়নি।

৬ নভেম্বর: দুই গোষ্ঠীর গোলমালে পুরাতনবাজারে খুন হলেন শেখ ইলিয়াস (৩৫)। ওই ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে।

এই ঘটনাগুলির তদন্তে নেমে কী বলছে পুলিশ, শহরের বাসিন্দাদেরই বা প্রতিক্রিয়া কী।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(ক্রমশ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor kharagpur devmalya bagchi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE