জমির কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। রবিবার সন্ধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার ঘটনা। জখম ওই মহিলা তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। মহিলার পরিবারের তরফে গণধর্ষণের অভিযোগে এলাকারই তিন যুবকের নামে রবিবার রাতে পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন বলেন, “‘ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে ও ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়ার বছর ছেচল্লিশের ওই মহিলার স্বামীর ছোটখাটো ব্যবসা রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে নিজেদের বিঘে খানেক জমিতে চাষবাস করেন ওই দম্পতি। রবিবার বিকেলে ওই মহিলার স্বামী বাড়ি ছিলেন না। সেই সময় মহিলা একাই কাঁসাই নদী পেরিয়ে জমিতে রাসায়নিক সার দিতে গিয়েছিলেন। বিকেল ৫টে নাগাদ কাঁসাই নদী বাঁধ ধরে ফেরার সময় বাঁশবনের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তিন যুবক আচমকা ওই মহিলার মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। তারপর নদীর ধারে ওই যুবকরা মহিলাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অত্যাচারের সময় মহিলা এক যুবকের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়ায় তাঁর হাতে কামড় বসিয়ে দেয় ওই যুবক।
ঘটনার পর পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। হাতে কামড় ছাড়াও মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত নিয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে ছিলেন মহিলা। এলাকায় কালীপুজোয় মাইক বাজায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে কিছুই টের পাননি। পরে সন্ধ্যা নাগাদ বাঁধের দিকে আসার পথে কয়েকজন ওই মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা জখম অবস্থায় ওই মহিলাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। স্ত্রীকে নিয়ে পাঁশকুড়া থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে আসেন ওই মহিলার স্বামী। এরপর তাঁকে পাঁশকুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
তমলুক জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে পুলিশ এসে ওই মহিলার থেকে গোপন জবানবন্দি নিয়ে গিয়েছে। এ দিন দুপুরে ওই বধূর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। তবে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, ওই মহিলার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি এখনও বেশি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই মহিলা বলেন, “সোমবার থেকে আমাদের জমিতে ধান রোয়ার কথা ছিল। তাই রবিবার বিকেলে জমিতে সার দিতে গিয়েছিলাম। তখনই ওই ছেলেগুলো আমার উপর অত্যাচার করে।” মহিলার স্বামীও বলেন, “অভিযুক্তরা সবাই পাশের গ্রামের বলে জানতে পেরেছি। রাতেই পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আমি চাই ঘটনায় জড়িতদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।”
এ দিকে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সব অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য দাবি তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্তদের পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করতে না পারলে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। চৈতন্যপুর-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান রবীন্দ্রনাথ ভক্তা বলেন, “গতকাল রাতে এই ঘটনার কথা জানতে পেরেই থানায় আমি বিষয়টি জানিয়েছিলাম। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা চাই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইননুগ ব্যবস্থা নিক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy