মেদিনীপুর কলেজ থেকে ভোটকেন্দ্রের পথে কর্মীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মেদিনীপুর লোকসভা বরাবর কাস্তে-ধানের শিষের। এই কেন্দ্র সিপিআইয়ের এতটাই নিশ্চিত আসন ছিল যে দেশের যে কোনও প্রান্তের মানুষকে এখান থেকে জিতিয়ে দল নিয়ে যেত সংসদে। তা সে ভি কে কৃষ্ণমেনন হোন বা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত।
এখন দিন বদলেছে। রাজ্যে পালাবদলও ঘটে গিয়েছে। আর তারই জেরে শাসক দলও এখন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটিকে নিশ্চিত বলে ধরে নিয়েই কলকাতা থেকে তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়কে নিয়ে এসেছেন এখানে।
প্রশ্ন উঠেছে, ধানশিষের শক্ত ঘাঁটিতে কী এবার তাহলে জোড়াফুল ফুটতে চলেছে। নাকি শেষ পর্যন্ত ধান শিষকেই বেছে নেবেন এই কেন্দ্রের মানুষ। ১৬ মে-র আগে অবশ্য তা জানা যাবে না। যদিও এই কেন্দ্রের ১৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৭৫৫ জন ভোটার আজই সেই রায় জানিয়ে দেবেন।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকেই জয়ী হয়েছিলেন এবারের বামফ্রন্ট প্রার্থী প্রবোধ পাণ্ডা। তৃণমূল প্রার্থী দীপক ঘোষকে প্রায় ৪৮ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন। বামফ্রন্ট যেখানে ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থী দীপকবাবু সেখানে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। আবার এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে ২০১১ সালে ব্যাপক তৃণমূল হাওয়া সত্ত্বেও তার চারটিতেই জয় ধরে রাখতে পেরেছিল বামফ্রন্ট। বাকি তিনটের মধ্যে ১টি পেয়েছিল কংগ্রেস। বাকি দু’টি তৃণমূল। দু’টি ক্ষেত্রেই কিন্তু তৃণমূল ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল। এবার জোট নেই। ফলে ভোট ভাগাভাগি নিশ্চিত। আর তারই জেরে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। প্রবোধবাবুর কথায়, “যদি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, তাহলে মানুষের রায় আমাদের পক্ষেই যাবে।” আর তৃণমূল নেতৃত্ব অঙ্ক কষছেন ঠিক তার উল্টোদিকে। লোকসভার পর বিধানসভা ভোট হয়েছে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কোথাও দেড় হাজার আবার কোথাও ২-৪ হাজার ভোটে হেরেছিলেন জোটের প্রার্থী। তারপর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবকে ধূয়ে মুছে সাফ করে তৃণমূলই সব পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিয়েছে। বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূলেরই দখলে। জেলা পরিষদও তাই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “ক্ষমতায় আসার পর যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, তার নিরিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে মানুষ ভোট দেবেন। ফলে আমাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে জিতবেন বলেই আমাদের ধারণা।”
বামফ্রন্টের ভরসা ভোট কাটাকাটি ও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভোটে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কোনও প্রভাবই পড়বে না। সবাই এককাট্টা হয়ে নিজেদের দিকে ভোট করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। অন্যদিকে বিজেপি ও কংগ্রেসও বসে নেই। কংগ্রেস প্রার্থী বিমল রাজ চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে গ্রামেগঞ্জে পরিচিতি রয়েছে। বহু রোগী তাঁকেই ভোট দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। একদিকে রোগীর ভোট অন্যদিকে দলীয় সমর্থকদের ভোট। ফলে খুব একটা কম ভোট পাবেন এমনটা ভাবার কারণ নেই। আবার বিজেপি-র পালে এখন মোদী হাওয়া। যে হাওয়ায় গতবারের থেকে বেশি ভোট পাবেন বলেই বিজেপি নেতৃত্বের আশা। ২০০৯ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৪.৯৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। মোদী হাওয়ায় যদি বেড়ে ১০ শতাংশ হয়, তাহলে তৃণমূল নেতৃত্বের কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য। কারণ, বামফ্রন্টের ভোট কাটা কঠিন। বিজেপি প্রার্থী প্রভাকর তিওয়ারির অভিযোগ, “তৃণমূল ভয় পেয়ে রিগিং করার পরিকল্পনা করেছে। তাই ভোটের দিন হামলার আশঙ্কাও রয়েছে।” কংগ্রেস প্রার্থী বিমল রাজের অভিযোগ, “আগের দিন থেকেই ভোটারদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র কেড়ে নিচ্ছে তৃণমূল। বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে বুথ দখল করে ছাপ্পা দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে। তাহলে কিভাবে অবাধ নির্বাচন সম্ভব।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আমরা শুধু সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছি, নিজের ভোট নিজে দিন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতোই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব। অকারণ কুৎসা রটাতে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy