তমলুক আদালতে।—নিজস্ব চিত্র।
সিপিএম থেকে বহিষ্কারের পর প্রথম জেলায় পা রেখেই বিতর্ক উস্কে দিলেন প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় হাজিরা দিতে শুক্রবার তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতে এসেছিলেন লক্ষ্মণবাবু। সেখানেই তিনি বলেন, “যে সব পার্টি-কর্মী ও জনগণ আমাকে ভালবাসেন, আমার প্রতি অবিচার ও অপমানের যোগ্য জবাব তাঁরাই নির্বাচনে দেবেন।”
তাহলে কি সিপিএমকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন? লক্ষ্মণবাবু এই প্রশ্নের জবাব খোলসা করে দিতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আমি কী বলতে চেয়েছি, তা যাঁরা বোঝার ঠিক বুঝে যাবেন।” সিপিএমের যে সব নেতা-কর্মী কোর্টে লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, ‘যোগ্য জবাব দেওয়া’র প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরাও। সিপিএমের হলদিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুদর্শন মান্না থেকে শুরু করে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রণব দাস, শক্তি বেরারা বলছেন, “লক্ষ্মণবাবু দলে নেই। তাই মন্তব্য করব না।” সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন আদালতে এসেছিলেন তমালিকাদেবী। তিনি বলেন, “আমি দলীয় অনুশাসন মেনে চলছি। উনি (লক্ষ্মণবাবু) আমাকে প্রভাবিত করেননি। দলের বাইরে থেকে উনি এ কথা বলতেই পারেন। আমার মনে হয় না নেতা-কর্মীরা দলের বিরুদ্ধে যাবেন।” লক্ষ্মণবাবুর দাবি, তমালিকাদেবীকে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে তিনিই শিখিয়েছেন। লক্ষ্মণবাবু বলেন, “তমালিকা শুধু আমার স্ত্রী নয়, পার্টির ক্যাডার। আমি পার্টিতে ওর গুরু। গুরু হিসেবে ওকে যে শৃঙ্খলা মেনে চলার শিক্ষা দিয়েছি, সেটা মেনে চলছে।”
দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ২৭ মার্চ সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয় লক্ষ্মণবাবুকে। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমে শক্তিশালী লক্ষ্মণ-অনুগামীদের গুরুত্ব কমানো হয়নি। উল্টে লোকসভা ভোটের দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় লক্ষ্মণ ঘনিষ্ঠদের। বেশিরভাগ বিধানসভা এলাকাতেই ভোটের কাজের দায়িত্ব বর্তায় লক্ষ্মণ অনুগামীদের উপরে। তমালিকাদেবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় হলদিয়া বিধানসভা এলাকার, লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ প্রণব দাসকে মহিষাদলের দায়িত্বে, নন্দকুমারের দায়িত্ব পান আর এক লক্ষ্মণ-অনুগামী জেলা নেতা শক্তি বেরা।
লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ প্রায় সব জেলা নেতাই তমলুক আদালতে এসেছিলেন। সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। লক্ষ্মণবাবুকেও চেনা মেজাজেই ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। নন্দীগ্রাম-পর্বের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের পাশে থাকারও বার্তা দেন লক্ষ্মণবাবু। বলেন, “যাঁরা মিথ্যা মামলায় জর্জরিত, নিপীড়িত আমি তাঁদের পাশে থাকব, প্রাণপণে সাহায্য করব।” তবে এ দিনও সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন লক্ষ্মণবাবু। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক ভাবে আমাকে শেষ করতেই আমার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গড়ে আমাকে জনসমক্ষে হেয় করা হয়েছে। বিচারের আগেই শাস্তি হয়েছে।”
নন্দীগ্রাম মামলার শুনানিতে অভিযুক্ত সিপিএম নেতা অমিয় সাহু, অশোক বেরা, বিজন রায় ছিলেন। চার্জ-গঠন সংক্রান্ত শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২১ এপ্রিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy