Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ভোট মিটতেই হিংসা, অভিযুক্ত শাসকদল

কোথাও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তো কোথাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থককে মারধরের অভিযোগ। সোমবার ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। এ দিন ছিল জেলার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। ভোট পর্ব মিটতেই সোমবার রাতে খড়্গপুর ২ ব্লকের লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর ও পপরআড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পপরআড়া গ্রামে কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

মেদিনীপুর শহরে বামেদের প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর শহরে বামেদের প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

কোথাও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তো কোথাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থককে মারধরের অভিযোগ।

সোমবার ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। এ দিন ছিল জেলার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। ভোট পর্ব মিটতেই সোমবার রাতে খড়্গপুর ২ ব্লকের লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর ও পপরআড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পপরআড়া গ্রামে কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ, ওই দু’টি গ্রামে কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী-সমথর্কদের ২৬টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। রাধানগরের ঘটনায় জখম ১২ জন কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মী-সমর্থককে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিপিএমের পক্ষ থেকে লক্ষ্মণ সরেন, নান্টু দোলই, রবি সিংহ, সুব্রত সিংহ-সহ তৃণমূলের ১৪জনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে রাধানগরের ঘটনাস্থল থেকেই লক্ষ্মণ সরেন ও রবি সিংহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে রাধানগরে ভোট কেন্দ্রের একশো মিটারের মধ্যে তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত ঘিরে প্রতিবাদ জানিয়েছিল সিপিএম ও কংগ্রেস। সেই সময় কোনও গোলমাল না হলেও এ দিন রাতে তৃণমূল কর্মীরা সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। তৃণমূল কর্মীদের কটূক্তি ঘিরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, এরপরই রাধানগর গ্রামের ২৪টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। উত্তেজিত স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে চড়াও হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। খড়্গপুর গ্রামীণ থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্য দিকে, পপরআড়া গ্রামে এ দিন রাতেই সিপিএম-তৃণমূলের লোকেদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে তৃণমূল কর্মীরা সিপিএম নেতা অমূল্য ঘোড়াই, নিত্যানন্দ নায়েকের বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের স্বপনকুমার সেন ও সিপিএমের সপ্তর্ষি নাগকে মারধর করা হয়। স্বপন সেনকে খড়্গপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, তাদের দু’জন কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে।

রাধানগরে বাড়ি ভাঙচুরের পর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

রাধানগরের ঘটনায় আহত সিপিএম কর্মী নকুল সিংহ, সুজয় সিংহ, দীপক সিংহ এবং কংগ্রেসের প্রভাস সিংহ, লক্ষ্মণ সিংহ, নন্দন মুদি, সনু পাসারিয়া-সহ ১২জনকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রভাস সিংহ, লক্ষ্মণ সিংহ-সহ ৭জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। নন্দন মুদিকে প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ও পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক কামের আলি বলেন, “নির্বাচনের দিন তৃণমূল জোর করে মানুষের সমর্থন পেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের কর্মীরা তাঁদের বাধা দেওয়াতেই রাধানগর ও পপরআড়াতে তৃণমূলের লোকেরা গরীব মানুষের বাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করেছে।” যদিও তৃণমূলের পিংলা বিধানসভার নির্বাচনী চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বলেন, “সিপিএম পায়ের তলার মাটি হারিয়ে উত্তেজিত হয়ে ভোটপর্বের শেষে আমাদের কর্মীদের মারতে এসেছিল। সাধারণ মানুষ তা প্রতিহত করলে হাতাহাতি হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা সাজানো।” মঙ্গলবার দুপুরে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে আক্রান্ত কর্মীদের দেখতে আসেন কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। মানসবাবু বলেন, “রাধানগরের আদিবাসী পাড়ায় আমাদের কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর হয়। কয়েকজন বামপন্থীও আক্রান্ত। আমি এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছি। জাতীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী কমিশনে ঘটনার বিঢ়য়ে জানাবো।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “কয়েকজন মানুষের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। রাধানগরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। এলাকা জুড়ে তল্লাশি চলছে।”

এ দিন রাতে ঘাটাল, দাসপুরের নানা জায়গায় কংগ্রেস ও বাম কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, দাসপুরের ঢোল, রাজনগর পশ্চিম, ঘাটালের রাধাবল্লভপুর, দীর্ঘগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের লোকজন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোট দিতে যাওয়া ও কংগ্রেসের পোলিং এজেন্ট হওয়ার অপরাধে ঘাটাল থানার মসরপুরে তাদের দলের কর্মীদের মারধর করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ভয়ে দশ জন কংগ্রেস কর্মী গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। দাসপুরের ঢোল এলাকার একাধিক সিপিএম পরিবারের অনেক লোকও ঘরছাড়া বলে অভিযোগ।

কেশপুরে সংঘর্ষে আহত সিপিএম কর্মীকে দেখতে
মেদিনীপুর মেডিক্যালে সিপিএম নেতা তরুণ রায়
ও দলের নেত্রী রুবি রায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে রাধানগরে
আহত দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন কংগ্রেস
প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা ও কংগ্রেস নেতা জগন্নাথ গোস্বামীর অভিযোগ, “ভোট মিটতেই সোমবার রাত থেকে বহু এলাকায় অশান্তি শুরু হয়েছে।” যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “কোথাও যাতে গণ্ডগোল না হয়, সে জন্য স্থানীয় নেতৃত্ব সচেষ্ট আছেন। কংগ্রেস ও সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।” পুলিশ জানিয়েছে, মৌখিক ভাবে কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় টহল চলছে।

কেশপুরের মাজুরহাটি, ছুতারগেড়্যা, বেলডাঙ্গা, উঁচাহার-সহ বেশ কিছু এলাকাতেও এ দিন রাতে বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়েছে। নানা জায়গায় বাম ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘাটালের বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণা বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। গোলমাল এড়াতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলেন, “তৃণমূল প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। জ্যোতি বসুর ২৩ বছর, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ১১ বছর দেখেছি। কিন্তু এমন ভোট দেখিনি।” প্রয়োজনে তিনি রাজ্যপালের কাজে যাবেন বলেও জানান মানসবাবু।

এ দিন বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসে কেশপুরের জখম কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরুণ রায়। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে মেদিনীপুর শহরে মিছিলও করে বামফ্রন্ট। বিকেলে মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিআইয়ের জেলা নেতা তপন গঙ্গোপাধ্যায়, জোনাল নেতা সারদা চক্রবর্তী, সুকুমার আচার্য প্রমুখ। জেলার অন্যত্রও এ দিন প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE