Advertisement
২১ মে ২০২৪

ভরদুপুরে বাড়িতে বৃদ্ধা খুন, ধন্দে পুলিশ

বাড়িতে একা থাকা এক বৃদ্ধাকে মাথায় আঘাত করে খুনের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল রেলশহরে। শনিবার দুপুরে খড়্গপুর শহরের ইন্দার বিদ্যাসাগরপুরে বাড়ি ঢুকে সুনীতি মুখোপাধ্যায় (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধার মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। সেই সময় মৃতার স্বামী পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বাড়িতে ছিলেন না। কিছুক্ষণ পরে বাড়ি ফিরে এসে তিনি স্ত্রীকে রক্তাত্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন বলে অভিযোগ। ঘটনায় আতঙ্কে চিত্‌কার করতে থাকেন পূর্ণেন্দুবাবু। প্রতিবেশীদের সাহায্যে বৃদ্ধাকে গুরুতর আহত অবস্থায় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সুনীতি মুখোপাধ্যায়

সুনীতি মুখোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫২
Share: Save:

বাড়িতে একা থাকা এক বৃদ্ধাকে মাথায় আঘাত করে খুনের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল রেলশহরে। শনিবার দুপুরে খড়্গপুর শহরের ইন্দার বিদ্যাসাগরপুরে বাড়ি ঢুকে সুনীতি মুখোপাধ্যায় (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধার মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। সেই সময় মৃতার স্বামী পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বাড়িতে ছিলেন না। কিছুক্ষণ পরে বাড়ি ফিরে এসে তিনি স্ত্রীকে রক্তাত্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন বলে অভিযোগ। ঘটনায় আতঙ্কে চিত্‌কার করতে থাকেন পূর্ণেন্দুবাবু। প্রতিবেশীদের সাহায্যে বৃদ্ধাকে গুরুতর আহত অবস্থায় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বৃদ্ধাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও ওই ঘটনায় বাড়ি থেকে কোনও কিছু খোওয়া যায়নি বলে পূর্ণেন্দুবাবুর দাবি। তাহলে দুষ্কৃতীরা কী উদ্দেশ্য নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিল? সুনীতিদেবীকে মারার কারণই বা কী? তদন্তে নেমে এই সকল প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর হিজলি হাইস্কুলের ইংরেজির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। তাঁদের পুত্র ধ্রুবধী কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকেন। কন্যা প্রিয়ঙ্কা পুনেতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় আইনজ্ঞের কাজ করেন। রবিবার সকালে পুনে থেকে বাড়িতে ফেরেন প্রিয়ঙ্কা। বছর কুড়ি আগে অদূরেই পৈতৃক বাড়ির সম্পত্তি ভাগাভাগির পরে কাছেই নতুন বাড়ি করেন পূর্ণেন্দুবাবু। সেই বাড়িতেই পরিবার নিয়ে থাকেন পূর্ণেন্দুবাবু। তাঁর দুই ভাই পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। পূর্ণেন্দুবাবুর অন্য চার ভাই খড়্গপুরের বাইরে থাকেন। পূর্ণেন্দুবাবুর দাবি, দুপুরে বাড়িতে রান্নার কাজ করছিলেন সুনীতিদেবী। বাড়িতে টম্যাটো না থাকায় স্ত্রীর কথায় বাজারে যান পূর্ণেন্দুবাবু। বেলা একটা নাগাদ বাজার থেকে ফিরে তিনি দেখেন, বাড়ির রান্নাঘরে তাঁর স্ত্রী রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। বাড়ির আলমারিও খোলা ছিল। এরপরই প্রতিবেশীদের ডেকে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও পরে আলমারি ও বাড়ির সামগ্রী মিলিয়ে দেখা হয়, কোনও কিছুই খোওয়া যায়নি। এমনকী বিছানায় পড়ে থাকা ল্যাপটপও ঠিক জায়গাতেই ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।

বাড়ির রান্নাঘরের এখানেই রক্তাত্ত অবস্থায় পড়েছিলেন সুনীতিদেবী।

পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমি যখন দেখেছি তখন সব শেষ। আমার স্ত্রী শুধু বলছিল, কেন আমাকে ওরা মারল জানিনা। কিন্তু বাড়ির সমস্ত কিছু ঠিক থাকায় এই ঘটনার কারণ বুঝে উঠতে পারছি না।” সম্পত্তি সংক্রান্ত শত্রুতার জেরেও এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। পূর্ণেন্দুবাবু বলছেন, “বহু বছর আগে আমাদের পৈতৃক সমস্ত সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই এই ঘটনার পিছনে সেই সম্ভাবনা আছে বলে বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, “আমার ধারণা, যারা মা-কে মেরেছে, তারা পরে আমার বাবাকে মেরে আমাদের বাড়িটি দখল করতে চায়। তাই আমি বাবাকে আর এখানে রাখব না।”

শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে তদন্তে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর, এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল-সহ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরা। তদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয় স্নিফার ডগ। রবিবারও উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। সোমবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ঘটনায় এখনও কোনও সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চুরির উদ্দেশে যে এই ঘটনা ঘটেনি, তা নিশ্চিত। এই ঘটনার পিছনে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ বা ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা রয়েছে কিনা, তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সাম্প্রতিক কালে রেলশহরে একাধিকবার চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী চুরি করতে এসে দুষ্কৃতীরা গুলিও চালায়। তবে ভরদুপুরে বাড়িতে ঢুকে এ ভাবে খুনের ঘটনায় ক্রমশ রহস্য দানা বাঁধছে। যদিও ২০১৩ সালে খড়্গপুরের মালঞ্চতে এক বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। ২০১২ সালে মেদিনীপুর শহরে বাড়িতে একা থাকা এক বৃদ্ধাকে খুন করে বাড়ির মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। পূর্ণেন্দুবাবুর প্রতিবেশী রাজা রায় বলেন, “প্রতিদিন দুপুরে স্থানীয় কিছু যুবক ওখানে ক্রিকেট খেলে। তারাও অপরিচিত কাউকে পূর্ণেন্দুবাবুর বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে কিনা, তা মনে করতে পারছে না। পরিচিত কেউ এই ঘটনার পিছনে থাকতেও পারে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE