জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।
সাত মাসের ব্যবধানে জঙ্গলমহলে ফের সভা করতে আসছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরে রবীন্দ্রপার্কের সামনে রাহুলবাবুর সভাকে ঘিরে সাজো সাজো রব বিজেপি-র অন্দরে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক আবহে জঙ্গলমহলে ক্রমেই সংগঠন পোক্ত হচ্ছে বিজেপি-র। আর সেই কারণেই বিজেপি-কে ঠেকাতে তৎপরতা শুরু হয়েছে শাসক শিবিরে। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি রাজ্য সভাপতির সভা বানচাল করার জন্য শাসক দল ও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ একযোগে উঠেপড়ে লেগেছে। রাহুলবাবুর সভার আগেই রবিবার রাতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বেআইনি জমায়েত ও বেআইনি অস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে নয়াগ্রাম ব্লকের ২৯ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে বিজেপি-র নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি অর্ধেন্দু পাত্র ও তাঁর ভাই সুখেন্দু পাত্র আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে এবং বাকিরা জেল হাজতে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত বছর অগস্টে বেলিয়াবেড়া থানার বাহারুনায় সশস্ত্র জমায়েত ও সশস্ত্র মিছিল করার অভিযোগে সুয়োমোটো মামলায় ৯ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেলিয়াবেড়া থানার পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে না পারায় পরে সকলেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। রবিবার নয়াগ্রামের ক্ষেত্রেও সুয়োমোটো মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
বিজেপি শিবিরের দাবি, যেভাবে সাজানো মামলায় দলের নেতা-কর্মীদের নাম জড়িয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাতে আখেরে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি-ই লাভবানহচ্ছে। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, “রাহুলবাবুর সভায় লোক ভরানোর জন্য নয়াগ্রাম ব্লকের নেতা-কর্মীরা বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ ছাড়া নয়াগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সব ক’টি আসনে এবিভিপি প্রার্থী দিয়েছে। সেই কারণেই স্রেফ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগে ওই ২৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” অবনীবাবুর কটাক্ষ, “শাসক দলের রাজনৈতিক সংগঠন বলতে যখন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না, তখন পুলিশকে ব্যবহার করে বিরোধীদের যে কোনও উপায়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয়। তৃণমূলের শেষ ভরসা এখন পুলিশ। যথাসময়ে জনগণ এর জবাব দেবেন।”
বিজেপি শিবিরের দাবি, ক্ষমতার টানাপড়েনে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের একটি বড় অংশ এখন ভাঙনের মুখে। তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী ও উপ-গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে উন্নয়ন। পুরসভা ও পঞ্চায়েতের উন্নয়ন নিয়ে সীমাহীন স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে গেরুয়া শিবির। যদিও এসব গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়। তাঁর কথায়, “জঙ্গলমহলের অশান্তির দিনগুলিতে রাহুল সিংহের মতো নেতাদের দেখা যায় নি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জঙ্গলমহল শান্ত হওয়ার পরে অনেক পরিযায়ী পাখি এখানে আসছে। রাহুলবাবুও বেড়াতে আসছেন। অপপ্রচার ও কুৎসা সত্ত্বেও জঙ্গলমহলবাসী আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।”
এর আগে গত বছর জুন মাসে একই দিনে জঙ্গলমহলের তিন জায়গায় সভা করেছিলেন রাহুলবাবু। গত বার রাহুলবাবুর উপস্থিতিতে সিপিএম, সিপিআই, তৃণমূল ও আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডী দলের অনেক নেতা-কর্মী এবং পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। সাত মাসের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার ফের রাজ্য সভাপতির সভায় জঙ্গলমহলের বিজেপি নেতৃত্ব কী চমক দেন, সে দিকেই আপাতত দৃষ্টি রাখছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy