সদ্য শুরু হয়েছে আলুর মরসুম। নভেম্বর থেকেই সাধারণত আলু চাষের কাজ জোর কদমে শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই কাজে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আলু বীজের দামএমনই অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুরের আলু চাষিদের। সার, কীটনাশক ও মজুরি খরচও যে হারে বাড়ছে, তাতে আলু চাষে আদৌ লাভ হবে কি না আশঙ্কায় খোদ জেলার চাষিরাও।
চলতি বছরে আলু চাষের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। জলদি জাতের আলু চাষ চাষ করছেন চাষিরা। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, আলু বীজের দাম বেড়ে গিয়েছে বিগত কয়েক বছরের থেকে দ্বিগুণের বেশি। গত বছর শুরুতেই বস্তা পিছু (৫০ কিলো) আলুবীজের দাম ছিল ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। পরে যদিও আমদানি কম থাকায় টাকার পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ১৬০০ টাকা। এবার প্রথমেই বস্তা পিছু (৫০ কিলো) আলুবীজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০০ থেকে ২৬০০ টাকায়। সার, কীটনাশক, সেচ-এসবের খরচ গত বছরই ছিল ১৮-২০ হাজার টাকা। তার আগের বছর বিঘা প্রতি খরচ পড়েছিল ১৩-১৫ হাজার টাকা। এবার জলদি জাতের আলুতেই খরচ পড়ছে বিঘা প্রতি ২৫০০০ টাকা। জেলার চাষিরা জানিয়েছেন, চাষের জন্য বিঘা প্রতি তিন বস্তা আলু বীজ প্রয়োজন। তাহলে বীজ কিনতেই যা খরচ উঠছে, তার থেকে লাভ কতটা হবে তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরাও।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এমনিতেই প্রতি বছর জেলায় গড়ে আলু চাষ হয় ৭০-৭৫ হাজার হেক্টর। আলু চাষের উপর অনেক চাষিই নির্ভরশীল। জেলায় কমবেশি সব শহরেই বীজ আলু বিক্রি হয়। তবে চন্দ্রকোনা রোডেই জেলায় মধ্যে প্রায় সত্তর ভাগ বীজ সরবরাহ হয়। ফি বছর জেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও অনান্য জেলা থেকে বীজ কিনতে এখানে আসেন চাষিরা। এ বার মরসুমের শুরুতেই আলুবীজের দাম এত বেশি কেন? চন্দ্রকোনা রোড আলু বীজ ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক বিদ্যুৎ প্রামাণিক বলেন, “সাধারণত পঞ্জাব থেকেই বীজ আনা হয়। কিন্তু এবারে পঞ্জাবে চাহিদার তুলনায় এখন বীজের আমদানি কম। তাই শুরুতেই বীজের দাম এত চড়া। পরে আরও বাড়বে কি কমবে-সবই চাহিদা অনুযায়ী নির্ভর করছে।” বীজের দাম লাগামছাড়া হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
চাষিদের অভিযোগ, বছর বছর আলু চাষে খরচ বাড়ছে, অথচ অভাব-সহ নানা কারণে আলু চাষিদের বেশিরভাগই লোন পান না। জেলায় নব্বই শতাংশের বেশি কিসান ক্রেডিট কার্ড হয়ে গিয়েছে। লোন নিলে চাষিদের বিমাও হয়ে যায়। চাষের কোনও ক্ষতি হলে চাষিরা পুরো টাকাই বিমা সংস্থার থেকেই পেয়ে যাবেন। তাহলে লোন মেলে না কেন? চাষিরা জানান, ব্যাঙ্কে লোন নিতে গেলে জমি বন্ধক রাখা-সহ আরও বেশ কয়েকটি সমস্যা থাকায় তাঁরা বিমা করাননি। জেলা বিমা আধিকারিক নবকৃষ্ণ দাসের কথায়, “চাষিদের জন্যই এই লোনের ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়মও কিছু বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অথচ অনেকেই এই নিয়মের দোহাই দিয়ে সুযোগ নিতে চান না।” তিনি জানান, বিগত কয়েক বছরে জেলার মোট চাষির ৫০ শতাংশও ঋণ নেননি।” এই কারণেই বেশিরভাগ চাষি মহাজনদের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। মহাজনদের উপর নির্ভরশীল হলে সহজেই চাষিরা বীজ, সার-সহ নগদ টাকাও পান। আর আলু ওঠার পরই যা দাম হবে সেই দামেই বিক্রি করতে তাঁরা বাধ্য হন। ফলে লাভ হয় না বললেই চলে।
গড়বেতার আলু চাষি অলোক ঘোষ, চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ির হাসাবুল মল্লিক, ঘাটালের অজয় কোলেদের কথায়, “ফি বছরই আমরা তিন-চার বিঘা করে আলু চাষ করি। আলু তুলে টাকা শোধ করে দিই। বাকি যা থাকে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।” জেলা বীমা আধিকারিক নবকৃষ্ণ দাস বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিলে চাষিরা যখন খুশি বিক্রি করতে পারবেন। এতে দু’পয়সা লাভ বেশি পাবেন চাষিরা। কিন্তু জেলায় মহাজনী প্রথা না কমলে ছোট চাষিদের কষ্টই সার। লাভের গুড় সেই ব্যবসায়ীরাই ভোগ করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy