Advertisement
২০ মে ২০২৪
মানিকপাড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়

স্কুলের অনুষ্ঠানেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উত্‌সবের সূচনাতেই তাল কাটল। প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না-পেয়ে শুক্রবার স্কুলের সামনে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল সম্পাদকের কুশপুতুল ও প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশ।

স্কুলের প্রবেশপথের সামনে প্রাক্তনীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের প্রবেশপথের সামনে প্রাক্তনীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১১
Share: Save:

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উত্‌সবের সূচনাতেই তাল কাটল। প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না-পেয়ে শুক্রবার স্কুলের সামনে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল সম্পাদকের কুশপুতুল ও প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশ। যাঁদের সিংহভাগই স্থানীয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত। মাথায় কালো ফেট্টি বেঁধে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে মানিকপাড়া বাজারে মিছিলও করেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির ক্ষমতায় রয়েছেন তৃণমূলপন্থীরা। এদিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে দলের সমর্থক প্রাক্তন পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাও। পুলিশের হস্তক্ষেপে স্কুলে ঢোকেন মন্ত্রী। পরে অবশ্য বিক্ষোভকারী প্রাক্তনীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সুকুমারবাবু। মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ প্রশমিত হয়।

মানিকপাড়ায় পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদ এলাকায় সর্বজন বিদিত। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা স্কুল পরিচালন কমিটির ক্ষমতায় রয়েছেন। অন্যদিকে, মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডলের অনুগামীরা। দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে নানা প্রশ্নে বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলের অনুষ্ঠানকে ঘিরেও কিছুদিন ধরে সেই বিরোধের ছায়া দেখা যাচ্ছিল। অনিলবাবুর গোষ্ঠীর লোকজনকে গুরুত্ব না দিয়ে উত্‌সব উদ্‌যাপন কমিটি তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ।

শুক্রবার উত্‌সব শুরুর আগেই প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশ স্কুলের সামনে মাইক নিয়ে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তৃণমূল তথা টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত স্থানীয় ওই যুবকদের বিক্ষোভে সামিল হন আরও বেশ কিছু প্রাক্তন পড়ুয়া। তাঁদের অভিযোগ, প্রাক্তনীদের বাদ দিয়ে প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর পূর্তি-অনুষ্ঠান হচ্ছে। বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের চাপ দিয়ে চাঁদা নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই টাকায় উত্‌সব হচ্ছে। প্রাক্তনীদের এমন কাণ্ডকারখানায় অস্বস্তিতে পড়েন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতেই সকাল দশটা নাগাদ বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে উত্‌সবের পদযাত্রা শুরু হয়। স্কুলের পদযাত্রা শেষ হওয়ার পরে প্রাক্তনীরা মানিকপাড়া বাজারে পাল্টা ধিক্কার মিছিল করেন। সকাল এগারোটা নাগাদ এসে পৌঁছন উত্‌সবের উদ্বোধক পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। মন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন প্রাক্তনীরা। মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে মন্ত্রীর গাড়িটিকে স্কুলের ভিতর ঢুকিয়ে দেন। স্কুল প্রাঙ্গণে স্কুলের দুই প্রতিষ্ঠাতা সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও সতীশচন্দ্র পালের আবক্ষ মূতির আবরণ উন্মোচন করেন সুকুমারবাবু। অনুষ্ঠান চলাকালীন স্কুলের বাইরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন প্রাক্তনীরা। এর মধ্যেই উদ্বোধনী বক্তৃতায় সুকুমারবাবু বলেন, “আজান্তে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনও সমালোচনা না হয়।” এরপর সমস্যা মেটাতে নিজেই উদ্যোগী হন মন্ত্রী। বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সুকুমারবাবু। ওই আলোচনায় ছিলেন প্রধান শিক্ষক, স্কুল সম্পাদক ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এরপর স্কুল সম্পাদক সুধীররঞ্জন মাহাতো মঞ্চে উঠে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভুল বোধাবুঝির জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। প্রাক্তনীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে পুনর্মিলন অনুষ্ঠান করা হবে।” তবে এই ঘটনায় আন্দোলনকরীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডল। তিনি বলেন, “প্রাক্তনীদের বিক্ষোভ যুক্তিসঙ্গত। স্কুল কর্তৃপক্ষ তো আমাকেও আমন্ত্রণ জানান নি। এমন কী দলের মাানিকপাড়া অঞ্চল সভাপতি সুকুমার সিংহকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তপনবাবু নিজে গোষ্ঠীবাজি করছেন।” তপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিল। আলোচনায় সমস্যা মিটে গিয়েছে। প্রাক্তনীদের আন্দোলনে কেবল তৃণমূল নয়, ঝাড়খণ্ড পার্টি ও কংগ্রেস সমর্থকেরাও ছিলেন। এখন কিছু ঘটলেই আমাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে চালানো হচ্ছে।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভঙ্কর দত্ত বলেন, “প্রাক্তনীরা কয়েকবার আলোচনার পরে নিজেরাই উত্‌সবে যোগ দিতে অসম্মত হন। অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ছাত্রছাত্রীদের থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। এ দিনের ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক।” মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার বক্তব্য, “আমার সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। পুনর্মিলনকে ঘিরে স্থানীয় দ্বন্দ্বেই এটা হয়েছে। এতে দলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। আমি সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jhargram tmc conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE