চলছে মাঠ পরিষ্কারের কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
বারো দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী সভা করে গিয়েছেন ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। মঙ্গলবার প্রায় জনা পঞ্চাশ সিভিক ভলান্টিয়ার্স নামিয়ে ‘বহিরাগতদের’ ঢোকার সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়ে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের মাঠ সাফাই ও মেরামতির কাজ হল। কেন এই গোপনীয়তা? স্টেডিয়ামের দুই কেয়ারটেকারের জবাব, “ উপর মহল থেকে মাঠ সাফাইয়ের সময় সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। মাঠ সাফাইয়ের ছবি তোলায় নিষেধ আছে।” এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।” অলিখিত ভাবে স্টেডিয়ামের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ঝাড়গ্রাম মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার ‘অ্যাড হক কমিটি’। কমিটির আহ্বায়ক জয়ন্ত মাহাতো ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগে স্টেডিয়ামের মাঠ নষ্ট হওয়া নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের জেরে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয় প্রশাসন ও শাসক দলকে। তাই এবার মাঠ সাফাইয়ের ঘটনাটি যাতে ‘খবর’ না হয় সে জন্য শাসক দল ও প্রশাসনের তরফে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় ক্রীড়ামহলের একাংশ। সেই জন্যই এই কড়াকড়ি। পুলিশের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রীর ওই সভা হয়েছিল গত ১৬ অক্টোবর। বারো দিন পরে তড়িঘড়ি মাঠ সাফাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হল কেন? প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কাল, বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর থেকে স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ‘ঝাড়গ্রাম মহকুমা বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’। সেই কারণেই মাঠ সাফাই ও মেরামতি করা হল।
বাম জমানায় ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামটির দেখভালের দায়িত্বে ছিল ঝাড়গ্রাম মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওই সংস্থার একটি অ্যাড হক কমিটি গঠিত হয়। ইতিমধ্যে স্টেডিয়ামের সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে পূর্ত নির্মাণ পর্ষদ। মাঠটি সংস্কারের জন্য আরও ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে স্টেডিয়াম ও মাঠের সংস্কার-সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়। সংস্কারের পর স্টেডিয়ামটির দায়িত্ব এখনও মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে হস্তান্তর করে নি পূর্ত দফতর। অলিখিত ভাবে মাঠের দেখভাল করে ক্রীড়া সংস্থা। ফলে, স্টেডিয়ামের মাঠ পরিষ্কার ও মেরামতির কাজ কারা করবে তা নিয়ে চাপান উতোর চলছিল। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সভাটি হয়েছিল পুলিশের উদ্যোগে। সে জন্য শেষ পর্যন্ত মহকুমা পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ দিন মাঠের সাফাই-মেরামতির কাজ হল।
২০১১ সালের অক্টোবরে এই স্টেডিয়ামেই এক সভামঞ্চে স্টেডিয়াম সংস্কার ও সম্প্রসারণের শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মাঠ সংস্কারের পরেও সেখানে বারবার মুখ্যমন্ত্রীর সভার আয়োজন করা হচ্ছে। গত ১৬ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য মাঠের সিংহভাগ এলাকা জুড়ে মঞ্চ ও দর্শকদের বসার জায়গা করা হয়। মাঠ খুঁড়ে প্রায় সাতশো শালবল্লি ও বাঁশ পোঁতা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ঢোকার জন্য মাঠের একাংশে মোরাম ও বালি ফেলা হয়। এর ফলে মাঠটির দফারফা হয়ে গিয়েছে। যদিও প্রশাসন ও শাসক দলের নেতারা ওই সময় দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য মাঠের ক্ষতি হয় নি। বাস্তব অবশ্য অন্য কথা বলছে। সেই কারণেই এ দিন মাঠ সাফাইয়ের সময় এত গোপনীয়তা নেওয়া হয় বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বিকেলে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেল, মোটামুটি মাঠটি পরিষ্কার হয়েছে। গর্তগুলি বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে এ দিন সকালে মাঠময় পড়ে থাকা অজস্র পেরেক তুলতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় সিভিক ভলান্টিয়ার-দের। ফলে, খেলার পক্ষে মাঠটি কতটা উপযোগী রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy