Advertisement
E-Paper

সঙ্গী অভাব, তবু লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখে সৌরভ-দেবরাজরা

একজনের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার আর আর একজন হতে চায় আইএএস অফিসার। দু’জনের জীবনের এই স্বপ্নের পথে বাধা একটাই, অর্থাভাব। তবে আর্থিক এই বাধাকে অতিক্রম করে নিজেদের ইচ্ছার জোরেই মাধ্যমিকে ভাল করেছে সৌরভ ও দেবরাজ। দাসপুরের ব্রাহ্মণবসান হাইস্কুলের ছাত্র সৌরভ পাত্র মাধ্যমিকে ৬৩২ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম সারিতে রয়েছে। আর কলোড়া হাইস্কুলের ছাত্র দেবরাজ চৌধুরীর প্রাপ্ত নম্বর ৬২৪।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০০:৪৪
সৌরভ পাত্র (বাঁ দিকে), দেবরাজ চৌধুরী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

সৌরভ পাত্র (বাঁ দিকে), দেবরাজ চৌধুরী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

একজনের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার আর আর একজন হতে চায় আইএএস অফিসার। দু’জনের জীবনের এই স্বপ্নের পথে বাধা একটাই, অর্থাভাব। তবে আর্থিক এই বাধাকে অতিক্রম করে নিজেদের ইচ্ছার জোরেই মাধ্যমিকে ভাল করেছে সৌরভ ও দেবরাজ। দাসপুরের ব্রাহ্মণবসান হাইস্কুলের ছাত্র সৌরভ পাত্র মাধ্যমিকে ৬৩২ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম সারিতে রয়েছে। আর কলোড়া হাইস্কুলের ছাত্র দেবরাজ চৌধুরীর প্রাপ্ত নম্বর ৬২৪।

স্থানীয় ব্রাহ্মনবসান গ্রামের বাসিন্দা সৌরভ পড়াশোনায় বরাবরই ভাল। তার বাবা মহাদেব পাত্র রঙ মিস্ত্রির কাজ করেন। প্রতিদিন কাজ থাকে না। মা নমিতা দেবী একশো দিনের কাজ করেন। সৌরভ জানিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি থেকেই ওই স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে নানা রকম ভাবে সাহায্য করেছেন। নিজে উদ্যোগী হয়ে সৌরভকে যাতে স্কুলের ফি না দিতে হয়-তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আশিস মাইতি। আশিসবাবুর কথায়, “এতদিন আমরা নানা ভাবে সাহায্য করেছি। এখনও সাধ্যমতো সাহায্য করব।” স্কুলের শিক্ষকেরা ভরসা দিলেও মন ভার সৌরভের। তার কথায়, “একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলে টিউশনি নিতেই হবে। এছাড়াও জয়েন্টের কোচিং নেওয়াও জরুরি। এত টাকা কোথায় পাব?” তবে তার চোখে স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার।

এক ছেলেকে নিয়ে পাত্র দম্পতিরও বহু স্বপ্ন। কিন্তু এবার পড়াশোনার খরচ শুনেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। ছেলেকে জড়িয়ে নমিতাদেবী বলেন, “জানেন, এত ভাল ফল করেও মনে আনন্দ নেই। আমাদের অবস্থা স্বচ্ছল থাকলে ও আরও ভাল নম্বর পেত। এখন ছেলের কথা ভাবলেই শুধু কষ্ট পাচ্ছি। জানি না কীভাবে ওর পড়ার ব্যবস্থা করব!”

অন্য দিকে স্থানীয় কুঞ্জপুরের বাসিন্দা দেবরাজ চৌধুরীর বাবা বলরাম চৌধুরী পেশায় গ্রামীণ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। রোজগার তেমন নেই বললেই চলে। ভরসা বলতে ছিল দেড় বিঘা জমি। তাও স্থানীয় সমবায় সমিতিতে বন্ধক দিয়েছেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে পড়ানো এবং সংসার চালাতে গিয়ে দেনায় জর্জরিত বলরামবাবু। মাধ্যমিকে ছেলে ভাল নম্বর পেয়েছে। তবে ছেলেকে এ বার আর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করাতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে বলরামবাবু। তাঁর কথায়, “বাজারে আমার আশি হাজারের বেশি টাকা দেনা। দুই মেয়ের বিয়ে কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না।ছেলের মনের অবস্থা ভেবেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমার যে আর সাধ্য নেই। চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।”

এতদিন কলোড়া স্কুল থেকে নানা সাহায্য পেয়ে এবং মনের জোরে দেবরাজ জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ভাল সারিতে জায়গা করে নিয়েছে। দেবরাজের কলোড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার রাণার বক্তব্য, “দেবরাজ পড়াশোনায় ভাল। এতদিন আমরা যেমন সাহায্য করেছি, এখনও করব।” কিন্তু এবার পরের স্বপ্ন আইএএস অফিসার হওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা দারিদ্র। দেবরাজ বলে, “আমাকে পড়াতে গিয়ে বাবার অনেক দেনা হয়ে গিয়েছে। এবার আরও টাকা প্রয়োজন। ভর্তির টাকাই এখনও জোগাড়

করতে পারিনি। তবে আমি ভয় পাই না। আমার বিশ্বাস, ঠিক একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

madhyamik result ghatal sourabh debraj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy