সিপিএমের জেলা সম্পাদক।—ফাইল চিত্র।
এ-ও এক পালাবদল! এক সময়ে শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী তৃণমূল, পরিবর্তনের পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগেই সরব হচ্ছে বিরোধী সিপিএম।
তৃণমূলের ‘বাইক বাহিনী’ নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক গুলাম আলি আনসারিকে দিন কয়েক আগে দু’পাতার চিঠি দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। অভিযোগপত্রে দীপকবাবু আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘এই বাইক বাহিনীর দৌরাত্ম্য এখনই বন্ধ করা না গেলে জেলায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। তৃণমূলের বাহিনী নীরবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, অভিযোগ পেয়েই জেলাশাসক চিঠিটি পাঠিয়ে দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আর অর্জুনের কাছে। চিঠিতে দীপকবাবু যে সব এলাকার নাম উল্লেখ করেছেন, সেগুলি ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুর সদর মহকুমার অন্তর্গত। অতিরিক্ত জেলাশাসক এই দুই মহকুমাশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন।
তৃণমূল অবশ্য এ প্রসঙ্গে সিপিএমকে বিঁধতে ছাড়ছে না। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এ তো চোরের মায়ের বড় গলা! বাইক বাহিনী কারা তৈরি করেছে? জঙ্গলমহলে এই বাহিনী নিয়ে কারা দিনের পর দিন সন্ত্রাস চালিয়েছে? মানুষ সব জানেন!”
দু’পাতার চিঠিতে ঠিক কী অভিযোগ করেছেন দীপকবাবু? সিপিএমের জেলা সম্পাদকের দাবি, জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের ‘বাইক বাহিনী’ সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আগেও এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তবু পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি। চিঠিতে কেশপুর, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড, শালবনি, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, বেলিয়াবেড়া এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকের নাম রয়েছে। এই সব এলাকায় তৃণমূলের ‘সশস্ত্র বাহিনী’ও সক্রিয় বলে অভিযোগ সিপিএমের। যারা মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য শূন্যে গুলি ছুড়ছে। বাম কর্মী-সমর্থকদের অনেক জায়গায় ধান কাটতে দেওয়া হচ্ছে না এবং এ ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশও তৃণমূলকে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
চিঠিতে এমন কয়েকটি ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। যেমন, কেশপুরের সান্তা গ্রামে গত ৬ এপ্রিল বামেদের মিছিলে হামলা চালায় মোটর বাইকে আসা তৃণমূলের লোকজনই। জখম হন ১৬ জন বাম কর্মী-সমর্থক। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর হয়। সিপিএমের অভিযোগ, সবই হয় পুলিশের উপস্থিতিতেই। অথচ, পুলিশ মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেনি। তারপর গত ১৯ এপ্রিল মেদিনীপুর সদর ব্লকের পালজাগুলে বাম কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের গাড়ি যাতে এলাকায় ঢুকতে না পারে, সে জন্য তৃণমূলের লোকজন রাস্তাও কেটে দেয়। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ মূল অভিযুক্তদের ধরেনি বলেনি অভিযোগ।
একটা সময় তো এই সব অভিযোগই উঠত সিপিএমের বিরুদ্ধে? কেশপুর-গড়বেতার মতো জেলার বহু এলাকায় লাল-সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলত বিরোধী কংগ্রেস-তৃণমূল? সদুত্তর এড়িয়ে দীপকবাবু বলেন, “এখন তৃণমূলের বাইক বাহিনীর দাপটে মানুষ সন্ত্রস্ত। যা জানানোর জেলাশাসককে চিঠিতে জানিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy