ভরসা সাইকেল। —নিজস্ব চিত্র।
জেলায় ভোটের প্রচারে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সোমবার ভোর ভোর হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল। সেইমতো হাজিরও হয়ে গিয়েছিলেন সিভিক পুলিশের কর্মীরা। কিন্তু রোল-কলের পর কোতয়ালি থানার পুলিশ অফিসাররা জানান, কেশপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ডিউটি রয়েছে। পৌঁছাতে হবে বেলা ১০টার মধ্যে। কিন্তু মেদিনীপুর থেকে কেশপুর প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে। এতটা দূরে যাওয়ার উপায়? পুলিশের সাফ উত্তর, কোনও গাড়ির ব্যবস্থা নেই। নিজের মতো করে সময়ের মধ্যেই সভাস্থলে পৌঁছাতে হবে। বাধ্য হয়ে কেউ সাইকেলে, কেউ মোটর সাইকেলে, কেউ বা বাস-অটোয় করে কেশপুর পৌঁছান। এই চরম অব্যবস্থার জেরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সিভিক পুলিশের কর্মীদের মধ্যে।
সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে তিনটি সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেশপুরের সভার জন্য মেদিনীপুর থেকে সিভিক পুলিশের কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এঁদের সভাস্থলের আশপাশেই মোতায়েন করা হয়। পুলিশের এক সূত্রে খবর, নির্দেশ মতো এ দিন সকালে মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার অদূরে স্কুল মাঠে ১৫০ জন সিভিক পুলিশের কর্মী হাজির হয়েছিলেন। রোল-কলের পর এঁদের মধ্যে ১০০ জনকে কেশপুরে যেতে বলা হয়। সিভিক পুলিশের কর্মীদের প্রশ্ন ছিল, মেদিনীপুর থেকে কেশপুরে যাওয়ার জন্য অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের মতই কি কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে? কিন্তু সেরকম কোনও ব্যবস্থার কথা তাঁদের জানানো হয়নি। তাই সময়ের মধ্যে সাইকেল, বাস-অটো ভাড়া করে তড়িঘড়ি সভাস্থলে পৌছানোর ব্যস্ততা।
ভোটের ডাক। লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে সোমবার পশ্চিম
মেদিনীপুরে তিনটি সভা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১) গড়বেতার সভায় দুই প্রার্থী দেব এবং উমা সরেনের সঙ্গে মমতা।
২) ভ্যাপসা গরমেও কেশিয়াড়ির সভায় উদ্বেল ভিড়।
৩) কপ্টার-বিভ্রাটে আসতে দেরি হয়েছে। সন্ধেয় কেশপুরের
সভায় পৌঁছে চতাই মাফ চাইলেন খোকাবাবু।
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ।
ভিক পুলিশের কর্মী সৌতম খাটুয়া মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়ার বাসিন্দা। তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, কেশপুরে যখন ডিউটি পড়েছে, তখন নিশ্চয়ই গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে। না হলে এতটা পথ যাব কী করে? পরে আমাদের জানানো হয়, কোনও গাড়ি নেই। যে যার মতো করে কেশপুরে পৌঁছবে।” অব্যবস্থার প্রতিবাদে সরব হয়েছে ‘সিভিক পুলিশ সংগ্রাম কমিটি’ও। কমিটির সম্পাদক হিঙ্কু দাস বলেন, “সিভিক পুলিশের কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কী এক-দু’টো গাড়ির ব্যবস্থা করা যেত না?” গত বছর যাঁদের উদ্যোগে এই কমিটি গড়ে ওঠে, তাঁদেরই অন্যতম খড়্গপুরের অনিল দাস। সোমবার তিনি বলেন, “এটা অমানবিক ব্যাপার। পুলিশ কর্মীদের তো কখনও বলা হয় না, যে যাঁর মতো করে চলে যাবেন। সিভিক পুলিশের কর্মীদেরই কেন বলা হবে?”
গত বছর রাজ্য জুড়েই সিভিক পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৬ হাজার ২০০ জনকে এই পদে নিয়োগ করা হয়। সিভিক পুলিশের চাকরি কোনও সরকারি চাকরি নয়। নিয়োগের পর কোনও যুবক-যুবতী বছরে একদিনও কাজ না পেতে পারেন। পুলিশের সংখ্যা কম থাকার জন্য কোথাও সমস্যা হলে তখনই এঁদের কাজ দেওয়ার কথা। কাজের জন্য দিন প্রতি মেলে ১৪১ টাকা। সোমবার সিভিক পুলিশের যে সব কর্মী মেদিনীপুর থেকে কেশপুরে ডিউটি করতে গিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন বলেন, “একদিন ডিউটির জন্য ১৪১ টাকা পাই। আার এ দিন বাস ভাড়া-খাওয়াদাওয়ার খরচ বাবদই ৮০ টাকা চলে গেল।” কেন এক-দু’টো গাড়ির ব্যবস্থা করা হল না? সদুত্তর এড়িয়ে কোতয়ালি থানার পুলিশ জানিয়েছে, আলাদা করে কোনও গাড়ির ব্যবস্থা ছিল না। তাই সিভিক পুলিশের কর্মীদের গাড়ি দেওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে সিভিক পুলিশের কর্মীদের মধ্যে কোনও অসন্তোষ নেই। কর্মীরা থানায় কিছু জানানওনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy