আর্থিক তছরূপের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। সরকারি তদন্তে তৃণমূল পরিচালিত চন্দ্রকোনা থানার বালা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণও মেলে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে স্বপদেই ছিলেন ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সমবায় সমিতির সম্পাদক তথা তৃণমূলের স্থানীয় কুঁয়াপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি শঙ্কর ঘোষ। শঙ্করবাবু চন্দ্রকোনা ২ পঞ্চায়েত সমতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্বেও রয়েছেন। তবে সময় মতো টাকা না পাওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমবায়ের গ্রাহক ও এলাকার বাসিন্দারা সমবায়ের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা বেপাত্তা হয়ে যান। পরে তল্লাশি চালিয়ে এ দিন রাতেই সমবায়ের হিসাবরক্ষক আনন্দ খামরুই ও কোষাধ্যক্ষ অসিত খামরুইকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাকিরা পলাতক। বুধবার ধৃতদের ঘাটাল আদালতে তোলা হলে দশ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।
পুলিশ ও সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪১ বছরের পুরনো এই সমবায় সমিতির উপর বালা, ছোট বালা-সহ দশ-বারোটি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরেই চাষের সময় স্থানীয় কৃষকেরা জমির নথি জমা রেখে এই সমবায় থেকে ঋণ নেন। কাছাকাছি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাও সমবায়ে টাকা রাখতেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, সমিতিতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঋণ দেওয়া কমে গিয়েছিল। ঋণের জন্য আবেদন করলেও আবেদন করা টাকার অর্ধেক পাওয়া যেত।
২০০৯ সালে সমিতিতে নির্বাচিত সিপিএম সদস্যরা পদত্যাগ করেন। তখন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শঙ্কর ঘোষ সমবায়ের হাল ধরেন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে সমবায়ের বর্তমান সম্পাদক তৃণমূলের শঙ্কর ঘোষ, সভাপতি সুজিত রায়, ম্যানেজার অলোক জানা, কোষাধ্যক্ষ আনন্দ খামরুই ও শঙ্কর ঘোষের ছেলে মানস ঘোষ-সহ ওই সমবায়ের মাদার ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজার-সহ ১২ জনের নাম রয়েছে। সমবায়ের প্রাক্তন সম্পাদক সিপিএমের শঙ্কর করণ ও সভাপতি আলি হোসেন খাঁর নামও রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পরই প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছিল। সম্প্রতি সমবায়ের আরও ৩৪ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের নাম জানা গিয়েছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম জানাতে চায়নি পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সমবায় প্রবন্ধক (এআরসিএস) মদনমোহন ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ওঠার পরই ওই সমবায়ে প্রায় ১ কোটি টাকার গরমিলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। সরকারি নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy