Advertisement
২১ মে ২০২৪

সরকার ধান কেনা শুরু করেনি, বিপাকে চাষিরা

সরকারি খাতায় ধানের দাম প্রতি কুইন্ট্যাল ১৩৬০ টাকা। গত বছর ধানের সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্ট্যাল প্রতি ১৩১০ টাকা। অথচ সরকারি ভাবে এখনও এই দামে ধান কেনা শুরু হয়নি। তাই পরবর্তী চাষের খরচ জোগাড় করতে বহু চাষি খোলাবাজারে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। দাম পাচ্ছেন কুইন্ট্যাল প্রতি ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা! ফলে কুইন্ট্যাল প্রতি গড়ে দুশো টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩০
Share: Save:

সরকারি খাতায় ধানের দাম প্রতি কুইন্ট্যাল ১৩৬০ টাকা। গত বছর ধানের সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্ট্যাল প্রতি ১৩১০ টাকা। অথচ সরকারি ভাবে এখনও এই দামে ধান কেনা শুরু হয়নি। তাই পরবর্তী চাষের খরচ জোগাড় করতে বহু চাষি খোলাবাজারে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। দাম পাচ্ছেন কুইন্ট্যাল প্রতি ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা! ফলে কুইন্ট্যাল প্রতি গড়ে দুশো টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা।

সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়নি কেন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের ব্যাখ্যা, “এখনও সব ধান মাঠ থেকে ওঠেনি। ফলে এখনই ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই। তবু আমরা তাড়াতাড়ি ধান কেনার ব্যাপারে পদক্ষেপ করব।” জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়েরও আশ্বাস, “শীঘ্রই ধান কেনা শুরু হয়ে যাবে।” কিন্তু তার আগেই ধান বিক্রি করছেন চাষিরা।

গড়বেতার চাষি উত্তম পালের কথায়, “প্রশাসন যখন ধান কেনা শুরু করে, তখন চাষির ঘরে ধান প্রায় শেষ। আমি ৫ বিঘে জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। বিঘে প্রতি প্রায় ৮ কুইন্টাল ধান হয়েছে। ওই ধান কুইন্টাল প্রতি ১১০০ টাকাতেও বিক্রি হলে বিঘেতে ৮৮০০ টাকা মিলবে। ৫ বিঘেতে বড় জোর ৪৪ হাজার টাকা পাব। কিন্তু ৫ বিঘে জমিতে আলু চাষ করতে হলে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। বাধ্য হয়ে ধান বেচতে হচ্ছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় আলু চাষ হয়। ওই সব এলাকায় বর্ষাকালে জলদি জাতের ধান চাষ হয়। শীত আসার আগে ধান কেটে সেই জমিতে আলু চাষ করেন চাষিরা। আলু চাষে খরচও বেশি। তাই চাষিরা ধান বেচেই আলু বীজ, রাসায়ানিক সার, কীটনাশক কেনেন। কিছু ক্ষেত্রে একই ব্যবসায়ী, যাঁরা ধান কেনেন, তাঁরাই আবার আলুর বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশকের মতো আলু চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবসা করেন। চাষিরা ওই সব সামগ্রী কিনতে ওই ব্যবসায়ীদের উপর ভরসা করেন। চন্দ্রকোনার আলু চাষি বিমান ঘোষের কথায়, “এক বিঘে জমিতে আলু চাষ করতে আড়াই বস্তা আলুর বীজ লাগে। ৫০ কেজির এক বস্তা আলুর দাম আড়াই হাজার টাকা। এক বিঘেতে আলু চাষ করতে বীজ কিনতেই যদি ৬ হাজার টাকার বেশি লাগে, তাহলে ভাবুন সার, কীটনাশক, সেচের জল আর মজুরি মিলিয়ে কত টাকা খরচ। ধান বিক্রি না করলে আলু চাষের টাকা পাব কোথায়? এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।”

সাধারণ ভাবে দেখা যায়, সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হলেই খোলা বাজারে ধানের দাম বাড়তে শুরু করে। কখনও আবার খোলা বাজারে ধানের দাম সহায়ক মূল্যকে ছাপিয়ে যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মুনাফা যায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর হাতে। কারণ, যে সব ব্যবসায়ী চাষিদের অভাবী বিক্রিকে কাজে লাগিয়ে ধান মজুত করে রাখেন, তাঁরাই পরে খোলাবাজারে বেশি দামে তা বিক্রি করেন। প্রশাসনিক কর্তাদের এ সবই জানা। তবু ঠেকানো যায় না অভাবী বিক্রি।

কেন এই পরিস্থিতি এড়ানো যাচ্ছে না? প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে এর কোনও সদুত্তর নেই। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়ে জেলায় জেলায় নির্দেশিকা পৌঁছেছে। এরপর জেলা স্তরে বৈঠক হবে। তারপর শুরু হবে ধান কেনা। আর তা করতে মাস খানেক গড়িয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

farmers are in trouble farmer buying rice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE