Advertisement
০৭ মে ২০২৪
migrants

Migrant Labourers: হেনস্থার বিরুদ্ধে পরিযায়ীরা সরব, অগ্রণী বাঙালিরা

পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার শর্মিলা খাটুয়া বলেন, “কোনও সমস্যায় ভিন রাজ্যে থাকা শ্রমিকেরা এই হেল্পলাইনে (১৮০০১০৩০০০৯) যোগাযোগ করতে পারেন।

বুধবার বেঙ্গালুরুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বৈঠক।

বুধবার বেঙ্গালুরুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৯
Share: Save:

এপ্রিলে শেষ বার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পান্ডুয়ায় বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। ফের আসবেন ২০২৪-এ। তত দিন বেঙ্গালুরুতেই পড়ে থাকা ছাড়া গতি নেই গৃহপরিচারিকা কাজিউন্নিসা খাতুনের।

ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব। মা গত হলেও অসুস্থ বাবা আছেন। দাদা নিজের সংসারে থিতু। গ্রামে চারটে আইবুড়ো বোনের বিয়ে দিয়ে পার করার দায়িত্ব কাজিউন্নিসার। ঠিক যেন মেঘে ঢাকা তারা-র গল্প! বেঙ্গালুরুতে সকাল-বিকেল কন্নড়, তামিল, তেলুগু, মালয়ালি, বাঙালি পরিবারে ৮ বাড়ির কাজ সামলে মাসান্তে মেরেকেটে ১৮-২০ হাজার টাকা উপায়। নিজের ভবিষ্যৎ ভুলেই গিয়েছেন ২৯ বছরের কাজিউন্নিসা। বুধবার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে বলছিলেন, “আমি ২০১৪ থেকে আছি বলে এত কাজ পাচ্ছি। লকডাউনে ম্যাডামরা প্রায়ই আসতে বারণ করেন। এত দূরে পড়ে থেকেও খাওয়া না-খাওয়ার ঠিক থাকে না অনেকেরই। আর সবার উপরে ভয়, কথায় কথায় বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে জুলুম।”

অসংগঠিত শ্রম ক্ষেত্রে এই ধরনের নানা সমস্যা নিয়ে কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিতে এ দিন বেঙ্গালুরুতে একটি বৈঠকে শামিল হন কয়েক শো পরিযায়ী শ্রমিক। বিভিন্ন গণসংগঠনের হিসেব, বেঙ্গালুরুর অসংগঠিত শ্রমশক্তির অর্ধেকই কম-বেশি বাংলার। ১৩-১৪ হাজার জঞ্জাল কুড়ানির মধ্যে ৬-৭ হাজার গ্রামবাংলার। চার লক্ষ গৃহশ্রমিকের ৪০ হাজার বাংলার। কাপড় কলের কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, হোটেল কর্মী, খাবার বা অন্য সামগ্রী সরবরাহ কর্মীদের মধ্যেও বাঙালিরা দলে যথেষ্ট ভারী। নিজ ভূমে কার্যত পরবাসী তাঁরা। বাংলা বললেই অনেক
ক্ষেত্রে বাংলাদেশি তকমা লাগে গায়ে। তখন ন্যূনতম অধিকারগুলো পেতেও সমস্যা।

দু’দশক বেঙ্গালুরুবাসী আনাজ বিক্রেতা অভিজিৎ কুণ্ডু সদ্য বাবাকে হারিয়েছেন। স্থানীয় একটি হাসপাতালে দু’লক্ষ টাকা জমা রাখতে বলেন কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে ছিল মেরেকেটে ৩০ হাজার। অভিযোগ, বাংলাদেশি সন্দেহে চিকিৎসায় অবহেলার শিকারও হন তাঁরা। বাবার মৃত্যু হয়েছে তিন দিন আগে। দেহ ছাড়াতেও তাঁরা রীতিমতো হেনস্থা হয়েছেন বলে অভিজিতের অভিযোগ।

হেব্বলের বাসিন্দা নদিয়ার করিমপুরের জিয়ারুল মণ্ডল রাতভর প্লাস্টিক, জলের বোতল কুড়োন বেঙ্গালুরুতে। মহাজনকে বিক্রি করেন। তিনিও বলছেন, “কন্নড় বুঝি না! হিন্দিও নড়বড়ে। অতএব আকছার পুলিশ জ্বালায়। বাংলাদেশি বলে টাকা চায়। বৈধ কাগজ দেখালেও নানা হুমকি দেয়।”

নির্মাণ ক্ষেত্রে কর্মরত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বেঙ্গালুরুবাসী বিপ্লব মণ্ডল বলছেন, “মিথ্যে চুরি বা গাঁজা রাখার মামলায় ফাঁসিয়েও বাংলাভাষীদের উপরে পুলিশি জুলুম চলে।”

গত বছর, অতিমারিতেই দেশ জুড়ে বিপন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তায় মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নেটওয়ার্ক মঞ্চ গড়ে ওঠে। বেঙ্গালুরুর শ্রমিকদের সমস্যায় পশ্চিমবঙ্গেও জেলায় জেলায় এই বিষয়ে নোডাল অফিসার নিয়োগ এবং সব রাজ্যেই ওয়েলফেয়ার বোর্ডের দাবিতে তাঁরা সরব হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার শর্মিলা খাটুয়া বলেন, “কোনও সমস্যায় ভিন রাজ্যে থাকা শ্রমিকেরা এই হেল্পলাইনে (১৮০০১০৩০০০৯) যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া, শ্রম দফতরে ইমেলও করা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE