Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sagardighi By Election

সোমে সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন, শাসক ও বিরোধীদের মাথাব্যথা পরিযায়ী শ্রমিকেরা

শিক্ষায় ‘নিয়োগ দুর্নীতি’র বিস্তর অভিযোগ এবং আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে ‘অনিয়ম’ ঘিরে ক্ষোভও এই নির্বাচনে বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।

সোমবার সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন। ফাইল ছবি।

সোমবার সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:০৪
Share: Save:

রাত পোহালেই সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন। আসন্ন পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে সব ক’টি রাজনৈতিক দলই। নির্বাচনী প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সকলেই। তবে এই নির্বাচনে সব দলেরই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।

ভোট-বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, সাগরদিঘি বিধানসভা এলাকার প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটারের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাই প্রায় ৩০ হাজার। তাঁদের অধিকাংশই ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছেন। ভোট দিতে এক দিনের জন্য ঘরে ফিরতে নারাজ তাঁদের অনেকেই। যার জেরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রদত্ত ভোট কমবে। যা শাসক-বিরোধী সব পক্ষেরই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তা স্বীকারও করে নিয়েছেন সাগরদিঘির তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রের ৩০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে ২৫ হাজার সংখ্যালঘু। যাঁরা আমাদের ভোটার। তাঁদের মধ্যে ২-৩ হাজার জন ফিরেছেন। বাকিদের না-ফেরাটাই আমাদের একমাত্র আশঙ্কার কারণ।’’

অন্য দিকে, উপনির্বাচনে পরিযায়ী শ্রমিকের উৎসাহ হারানো নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে বিরোধী শিবির। বিজেপির দাবি, ৫ হাজার হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকের অনেকেই ফিরে এসেছেন। যাঁদের ভোট পদ্ম শিবিরের পক্ষেই পড়বে। বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহার কথায়, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে না আসা এই ভোটে আমাদের ডিভিডেন্ড দেবে।’’ একই মত কংগ্রেসের। তবে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছে না বিরোধীরা। তাদের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকেরা না ফিরলে তাঁদের ভোট লুট করতে পারে শাসকদল। তা ঠেকানো গেলেই জয় মোটামুটি নিশ্চিত।

এ ছাড়াও শিক্ষায় ‘নিয়োগ দুর্নীতি’র বিস্তর অভিযোগ এবং আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে অনিয়ম ঘিরে ক্ষোভও এই নির্বাচনে বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনীতির বৃত্তের একাংশ। তাদের দাবি, নানা ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলের প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শাসকদলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কেও তার প্রভাব পড়তে পারে। কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত স্তরে সীমাহীন দুর্নীতি, আবাস যোজনায় স্বজনপোষণের জেরে তৃণমূলের প্রতি বহু মানুষের বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘুরাও ক্ষুব্ধ। আমরা এ বার বামেদেরও সমর্থন পাচ্ছি।’’ তবে গত নির্বাচনের ভোট ব্যবধান নিয়ে চিন্তায় হাত শিবির। তা মেনেও নিয়েছেন বাইরন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুন। যা উপনির্বাচনে বিজেপির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। দলের প্রার্থী দিলীপ বলেন, ‘‘হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আমাদের ভোট বরাবর বেশি। তবে সংখ্যালঘুদের সমর্থনও পাচ্ছি। অবাধ ভোট হলে আমরাই জিতব।’’

তবে বিরোধীদের দুর্নীতি-অস্ত্রের বিরুদ্ধে শাসকদলের তুরুপের তাস তাদের প্রার্থী দেবাশিস। দিলীপ এবং বাইরন দু’জনেই কোটিপতি এবং সাগরদিঘিতে ‘বহিরাগত’। সেখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয় দেবাশিস এই কেন্দ্রেরই বাসিন্দা। থাকেন মাটির বাড়িতে। অভিষেকও ভোট প্রচারে এসে বাইরনের পুরনো ছবি দেখিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের ‘আঁতাঁতের’ অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই ‘অশুভ আঁতাঁত’ ভেঙে বেরোনোটাই উপনির্বাচনের প্রধান লক্ষ্য। দেবাশিস বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে সাগরদিঘি আমাদের ঘাঁটি। শুধু সংখ্যালঘু নয়, হিন্দু অধ্যুষিত বুথে আমরা খুব ভাল ফল করেছি। জয় তো হচ্ছেই, এই নির্বাচনে সুব্রত’দার (সুব্রত সাহা, যাঁর মৃত্যুতে এই উপনির্বাচন) মার্জিনকে ছাড়িয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।’’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সাগরদিঘিতে মোট বুথের সংখ্যা ২৪৬টি। কেন্দ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ বুথ স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছে ২২টি ‘কুইক রেসপন্স টিম’। ১০০ শতাংশ বুথে থাকছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলাকালীন করা হবে ওয়েবকাস্টিং। যার মাধ্যমে সরাসরি দিল্লি থেকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার উপর নজরদারি চালাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকছে ৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রতিটি বুথ ও বুথের বাইরে ২০০ মিটারের মধ্যে থাকবেন জওয়ানরা। রবিবার গোটা দিন জুড়ে ভোটগ্রহণের শেষ মুহূর্তের কাজ চলেছে। সাগরদিঘি কলেজে শিবির করে বিতরণ করা হয়েছে ইভিএম। ভোটকর্মীদেরও ইভিএমের কাজকর্ম বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sagardighi By Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE