Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বিপদ বুঝেই পিয়ালিকে বারণ করি: শেরপা

পিয়ালির এভারেস্ট অভিযানের আয়োজক সংস্থার প্রধান মিংমা শেরপা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ওই শেরপাকে পছন্দ করেছিল পিয়ালিই। ওই শেরপা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তবে ও জানিয়েছে যে, পিয়ালিকে গালি দিয়ে ব্যালকনি থেকে নামিয়ে এনেছে। কারণ, না-হলে মেয়েটা মরে যেত।’’

এভারেস্টের পথে পিয়ালি।

এভারেস্টের পথে পিয়ালি।

নিজস্ব সং‌বাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

এভারেস্টের পথে জন-জট নয়। অসুস্থতাও নয়। সঙ্গী শেরপার গালিগালাজ এবং ‘ভুল’ তথ্যে প্রভাবিত হওয়ার কারণেই শৃঙ্গ ছোঁয়ার স্বপ্ন অধরা রয়ে গেল বলে অভিযোগ করেছেন অভিযাত্রী পিয়ালি বসাক। আরও অভিযোগ, আট হাজার মিটার উচ্চতায় পেম্বা থেন্ডুক নামে ওই শেরপা পিয়ালিকে চড়থাপ্পড়ও মেরেছেন, যা তাঁর মনোবল ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।

পিয়ালির এভারেস্ট অভিযানের আয়োজক সংস্থার প্রধান মিংমা শেরপা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ওই শেরপাকে পছন্দ করেছিল পিয়ালিই। ওই শেরপা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তবে ও জানিয়েছে যে, পিয়ালিকে গালি দিয়ে ব্যালকনি থেকে নামিয়ে এনেছে। কারণ, না-হলে মেয়েটা মরে যেত।’’ নেপালের বাসিন্দা পেম্বা এ দিন ফোনে উত্তেজিত ভাবে বলেন, ‘‘পিয়ালিকে আগেই বলেছিলাম নীচেই বাথরুম করে যেতে। উপরে কোথাও সেটা সম্ভব হবে না। কিন্তু ও শোনেনি। ব্যালকনিতে দু’ঘণ্টা বসে ছিল! এর পরে সামিটে গেলে নামার পথে অক্সিজেন আর জল শেষ হয়ে যেত। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেই এগোতে বারণ করি।’’ পিয়ালি বলছেন, ‘‘সন্ধ্যা ৬টায় ক্যাম্প ফোর থেকে বেরিয়ে ১০টায় ব্যালকনিতে পৌঁছই। রাত ১টায় ফের ক্যাম্পে ফিরেছি। এর মধ্যে দু’ঘণ্টা বসে থাকার সময় কোথায়? ওই উচ্চতায় এক জায়গায় বসে থাকা মানেই তো মৃত্যু। কয়েক মিনিটের বিশ্রামকে দু’ঘণ্টা বলে চালাচ্ছে।’’

গত ১৮ মে এভারেস্টের শৃঙ্গজয়ের লক্ষ্য নিয়ে বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করেন পিয়ালি। অভিযোগ, সে-দিন বেস ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প টু যাওয়ার পথে প্রথম সঙ্গী শেরপার থাপ্পড় খান পিয়ালি। যাওয়ার পথে খাবার বা জল দেওয়া হয়নি তাঁকে। উল্টে জোটে অশ্রাব্য গালিগালাজ। ২২ মে সন্ধ্যায় ‘সামিট পুশ’ শুরু হয় পিয়ালির। অভিযাত্রীর অভিযোগ, ‘‘তখন পেম্বা স্যরকে বলেছিলাম, অক্সিজেন মাস্কটা খারাপ, মুখে চেপে বসছে। শুনে মুখে ঘুষি মারেন উনি! বাকি পথটা কাঁদতে কাঁদতে যাই।’’ ব্যালকনিতে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ায় তাঁকে ফের গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। পিয়ালির কথায়, ‘‘পেম্বা স্যর জানান, ওখান থেকে সামিট ১৮ ঘণ্টার রাস্তা! কাঞ্জনজঙ্ঘা-মাকালুতে দুর্ঘটনাগুলোর কথা মনে করিয়ে উনি বলেন, ‘তোমার কি বাবা-মা নেই। কেন মরতে চাইছ?’ বাবা-মায়ের কথা শুনেই আমার গোলমাল হয়ে যায়। ফোকাস নষ্ট হয়ে যায়।’’

পিয়ালির আরও অভিযোগ, ক্যাম্প টু-তে নামার মুখে বিপজ্জনক জায়গায় ওই শেরপা পিছন থেকে ধাক্কা মারেন তাঁকে। সেফটি রোপের সঙ্গে নিজেকে আটকাচ্ছিলেন পিয়ালি। হাত দিয়ে দড়ি ধরে ফেললেও মাথা নীচের দিকে চলে যায়। অন্য শেরপারা বাঁচান।

নিগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে পেম্বা বলছেন, ‘‘ও (পিয়ালি) মিথ্যে বলছে। কেউ কি আমায় মারধর করতে দেখেছে? হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক কি বলেছেন যে, ও নিগ্রহের শিকার? এভারেস্টকে মানাসলু ভেবে বসেছিল ও। হাঁটতেই পারছিল না। নইলে সামিটে না-নিয়ে যাওয়ার কী আছে! ওর পয়সা ফেরত দিয়ে দেব। মিথ্যা অভিযোগ বন্ধ করুক।’’

অভিযুক্তের বক্তব্য জানানো হলে পিয়ালি বলেন, ‘‘আশপাশের শেরপারা ওর গালিগালাজ শুনেছেন। একটি চিনা দলের সঙ্গে থাকা শেরপারা আশেপাশে ছিলেন। তাঁরাই বলবেন, আমি মিথ্যে বলছি কি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Piyali Basak Everest Mingma Sherpa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE