Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সংস্কারের শুরু?

রোগী কল্যাণ থেকে সরানো হল নেতা-মন্ত্রীদের

শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে। অগস্টে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয় বিধায়ক সুব্রত সাহাকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে। অগস্টে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয় বিধায়ক সুব্রত সাহাকে। দায়িত্ব পান মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। শুক্রবার একসঙ্গে রাজ্যের আরও চার মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে সরানো হল চার রাজনৈতিক নেতাকে। তাঁদের কেউ কেউ মন্ত্রীও। বদলে দায়িত্ব পেলেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকেরা।

নবান্নের এই সিদ্ধান্তের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এই ভাবে রোগী কল্যাণ সমিতিগুলিতে সংস্কারের কাজ শুরু করল রাজ্য? আরও প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও হাত পড়বে? নাকি এর পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে? জেলা হাসপাতালগুলির রোগী কল্যাণ সমিতির মাথায়ও আছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা। দীর্ঘদিন এটাই নিয়ম। এ বার এই বদল কেন, তা নিয়ে জেলাগুলি তো বটেই, স্বাস্থ্য দফতরেও আলোচনা শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির শীর্ষে জেলাশাসককে বসানোর পরে সেখানে উন্নতি হচ্ছে। তাই আরও ক’টি জায়গায় বিষয়টি অনুসরণ করা হল।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, এর বাইরে তাঁদের কিছু বলার নেই। সুশান্তবাবু আর কিছু না বললেও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এর পর ধাপে ধাপে অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও এই পথে হাঁটার কথা ভাবা হচ্ছে। এক কর্তা বলেন, ‘‘সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত লোক সরালে পরিষেবায় তার সুফল মিলতে বাধ্য। জেলার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়েছে।’’

তা হলে কি এর পর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকেও মন্ত্রী-বিধায়কদের সরানোর কথা ভাবা হচ্ছে? এর সরাসরি উত্তর দেননি তাঁরা। দফতর সূত্রের খবর, কোন মেডিক্যাল কলেজে কোন জনপ্রতিনিধি ক’টি বৈঠকে থাকছেন, কলেজের ভাল-মন্দের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কোনও সিদ্ধান্ত জোর করে চাপাচ্ছেন কি না, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বার সে সবও খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে কিন্তু রাজনৈতিক কারণও দেখাতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। যেমন, এ দিন উত্তরবঙ্গের দুই মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে। মালদহে সরানো হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে সরানো হল পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে। এক শিবিরের দাবি, দু’জনকেই শারীরিক কারণে সরানো হয়েছে। তাঁদের হালে হৃদরোগে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলেরই একাংশের বক্তব্য, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনের ডানা ছাঁটা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের প্রক্সি হাজিরা থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল। আবার বদলি সংক্রান্ত আর্জি, সুপারিশ নিয়েও চিকিৎসকদের তরফে পাল্টা অভিযোগও যায় নবান্নে। ২০১১ -য় পরিবর্তনের পর থেকেই গৌতম দেব এখানকার রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। এই ডামাডোলেই কি তাঁর পদ গেল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। গৌতমবাবুর ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা বলেন, শারীরিক কারণেই পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব কমিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনও কিছু জানা নেই।’’ মালদহের বেলাতেও আলোচনার কেন্দ্রে কৃষ্ণেন্দু। এমনও বলা হচ্ছে, এখন আর তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থাভাজন নন তিনি। তাই তাঁর ঘাড়েও কোপ। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে কেউ এখনও জানায়নি।’’

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এই পদে ছিলেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি। সেই বাম আমল থেকে চেয়ারম্যান পদ বরাবর রাজনীতিকরাই দখলে রেখেছিলেন। এক সময় এই পদে ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র স্বয়ং। একই ভাবে বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হল প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূলের মিনতি মিশ্রকে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, মিনতি দেবী সমিতির বৈঠকে নিয়মিত গেলেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাঁর কাছে যে সক্রিয়তা দরকার ছিল, তা ঠিকমতো মেলেনি। এই অভিযোগ নিয়ে মিনতি দেবী মুখ খুলতে চাননি।

স্বাস্থ্য দফতরের সূত্র বলছে, এ ভাবে খুঁজলে সব ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু রাজনৈতিক কারণ মিলতে পারে। কিন্তু আসল কথা হল, জনপ্রতিনিধিদের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। তাই তাঁরা কঠোর অবস্থান নিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে মেডিক্যালের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে জেলাশাসকের মতো আমলা থাকলে সুবিধা হবে। প্রতিষ্ঠানও ঠিক চলবে। পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন রাজনৈতিক লোকেরা। তাঁরা বলছেন, আমলা থেকে মন্ত্রী-বিধায়করা অনেক বেশি কাছের লোক। এর পরে রোগী কল্যাণের কাজটাই মাটি হবে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE