Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

গরহাজির মন্ত্রী, বাজেট বইয়ে নেই মদন-নামও

এক দফতরের মন্ত্রী বাজেট-বিতর্কের সময় উপস্থিত নেই। তাঁর হয়ে বাজেট পেশ এবং জবাবি ভাষণ দিলেন অন্য দফতরের মন্ত্রী! আরও দু’টি দফতরের বাজেট পুস্তিকায় মন্ত্রীর নামই নেই! মন্ত্রীর নাম ছাড়াই ওই দুই দফতরের বাজেট উঠে গেল গিলোটিনে! এমন ‘অনুপস্থিতি’ নিয়েই মঙ্গলবার সরগরম হল বিধানসভা! সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর রয়েছে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

এক দফতরের মন্ত্রী বাজেট-বিতর্কের সময় উপস্থিত নেই। তাঁর হয়ে বাজেট পেশ এবং জবাবি ভাষণ দিলেন অন্য দফতরের মন্ত্রী! আরও দু’টি দফতরের বাজেট পুস্তিকায় মন্ত্রীর নামই নেই! মন্ত্রীর নাম ছাড়াই ওই দুই দফতরের বাজেট উঠে গেল গিলোটিনে! এমন ‘অনুপস্থিতি’ নিয়েই মঙ্গলবার সরগরম হল বিধানসভা!

সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর রয়েছে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই। তিনি অবশ্য এখন উত্তরবঙ্গ সফরে। কিন্তু তাঁর দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লাও এ দিন সংখ্যালঘু উন্নয়ন বাজেটের সময় বিধানসভায় আসেননি। তাঁর পরিবর্তে বাজেট পেশ করেছেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এরই পাশাপাশি ক্রীড়া ও পরিবহণ দফতরের বাজেট পুস্তিকায় মন্ত্রীর নামই ছাপা হয়নি! অথচ প্রথা মেনে পুস্তিকায় লেখা হয়েছে, ‘রাজ্যপালের সুপারিশক্রমে আমি ... টাকা মঞ্জুর করার প্রস্তাব রাখছি’!

বিরোধীদের প্রশ্ন, মন্ত্রীর যখন নামই নেই, তা হলে এই ‘আমি’ কে? মন্ত্রীর নাম না থাকলেও ক্রীড়া ও পরিবহণের বাজেট অবশ্য এ দিন আরও ১৪টি দফতরের সঙ্গে গিলোটিনে চলে গিয়েছে। অর্থাৎ আলোচনা ছাড়াই পাশ করানো হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, মন্ত্রীর নাম ছাড়া এমন বাজেট পুস্তিকা এবং তাকে গিলোটিনে চাপানো ‘অবৈধ’। বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমও গোটা ঘটনাটিকে ‘উদ্ভট কাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন!

ঘটনাচক্রে, ক্রীড়া ও পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র এখন সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেলে। তাই অস্বস্তি আড়াল করতেই সরকার পক্ষ বাজেট পুস্তিকায় কারাবন্দি মন্ত্রীর নাম রাখেনি বলে বিরোধীদের দাবি। মন্ত্রীর নাম বাদ দিয়েই বাজেট তৈরির প্রতিবাদ করে এ দিন গিলোটিনের সময় বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেছেন বাম বিধায়কেরা। সঙ্গে বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও। সভায় এই নিয়ে হইচই করে তাঁরা স্পিকারের রুলিং দাবি করেছিলেন। পরে ডিএসপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন পরিষদীয় মন্ত্রী প্রবোধ সিংহ সংসদীয় পদ্ধতি ও রীতিনীতির বই উদ্ধৃত করে দাবি করেন, ‘‘বাজেট প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নাম থাকতে হবে। তিনিই ব্যয়বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পেশ করবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী উপস্থিত না থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কেউ পেশ করতে পারেন। কিন্তু মন্ত্রীর নাম ছাড়া বাজেট বইয়ের ওই ‘আমি’ কে?’’ সিপিএমের আনিসুর রহমানের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি আমরা ধরে নেব ক্রীড়া ও পরিবহণ দফতরে এখন আর মদনবাবু মন্ত্রী নেই?’’

ঘটনার কথা জেনে প্রাক্তন স্পিকার হালিম প্রবোধবাবুর সুরেই বলেছেন, ‘‘এটা পদ্ধতিগত ভাবে বিধিভঙ্গ। আলোচনা হবে, না গিলোটিনে যাবে, সেটা পরের কথা। বাজেট প্রস্তাব কে পেশ করছেন, তার নাম তো থাকতে হবে! উদ্ভট সব কাণ্ড ঘটছে বিধানসভায়!’’ বর্তমান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মেনে নিয়েছেন, ‘‘এটা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি। না হলেই ভাল হতো।’’

তা হলে বিরোধীদের দাবি মেনে তিনি রুলিং দিলেন না কেন? নিজের ঘরে স্পিকারের জবাব, ‘‘গিলোটিন শুরু হয়ে গেলে অন্য বিষয়ে বলা যায় না। গিলোটিন শেষ করে আমি হয়তো ওঁদের কথা শুনতাম। কিন্তু ওঁরা অপেক্ষা না করে আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন।’’ আনিসুরেরা অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অনিচ্ছাকৃত’ হলেও ভুল হয়েছে বলে যদি জানাই ছিল, তা হলে সেটা সংশোধন না করেই গিলোটিনে তোলা হল কেন?

তার আগে বিতর্ক বেধেছিল সংখ্যালঘু বাজেট নিয়েও। বাজেটের আলোচনা শেষে ফিরহাদ জবাব দিতে উঠলে আনিসুর স্পিকারের কাছে ব্যাখ্যা চান। বাম বিধায়কেরা চিৎকার করে প্রশ্ন করতে থাকেন, কেন সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী অনুপস্থিত? সে সময় স্পিকার তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা বলেছেন। মন্ত্রীকে বলতে দিন। কই শমীকবাবু (বিজেপি বিধায়ক) যখন বলছিলেন, তখন আপত্তি করেননি তো!’’ পরে অবশ্য নিজের ঘরে স্পিকার জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী অনুপস্থিতির কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন। ফিরহাদকেই পদ্ধতি মেনে জবাব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া (অথরাইজ) হয়েছিল।

বিধানসভায় জবাব দিতে গিয়ে পুরমন্ত্রী বামেদের বলেন, ‘‘আপনারা যত চিৎকার করবেন, তত পিছিয়ে পড়বেন! গিয়াসুদ্দিন মোল্লার শরীর খারাপ। তিনি আসতে পারেননি। তা বলে বাজেট পাশ হবে না? সরকারের তো একটা দায়িত্ব রয়েছে। সেই কারণেই আমি বাজেটের জবাবি ভাষণ দেব।’’

কিন্তু কেন বাজেটের দিন বিধানসভায় এলেন না? যোগাযোগ করা হলে গিয়াসুদ্দিন বলেন, ‘‘আমার সুগার বেড়েছে। শরীর খুব খারাপ। সেই কারণেই যেতে পারেনি।’’ ফোনে এ দিন সন্ধ্যায় গিয়াসউদ্দিন যখন এ কথা বলছেন, তখন তাঁর গাড়ির হুটারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দিনভর বাড়িতেই ছিলাম। এখন একটু নিজের বিধানসভা এলাকায় বেরিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE