Advertisement
E-Paper

বর্ষার মেঘ দেখে রাইখরের আশায় বইছে খুশির হাওয়া

কালো মেঘ দেখে রুপোলি রাইখরের জন্য অপেক্ষা শুরু করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর। পাঁচ-ছ ইঞ্চির এই মাছ এক সময় ছিল আত্রেয়ীর গর্ব। জুন-জুলাইয়ের বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে নদীর উজান ঠেলে বাংলাদেশের দিক থেকে বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীতে আসতে শুরু করে রাইখরের দল। ছানাপোনা নিয়ে নদীতে তখন ওই রুপোলি মাছের ভরা সংসার।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:১০
গায়ে থাকে একটি রুপোলি রেখা, তাই থেকেই নাম রাইখর। ফাইল চিত্র।

গায়ে থাকে একটি রুপোলি রেখা, তাই থেকেই নাম রাইখর। ফাইল চিত্র।

কালো মেঘ দেখে রুপোলি রাইখরের জন্য অপেক্ষা শুরু করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর।

পাঁচ-ছ ইঞ্চির এই মাছ এক সময় ছিল আত্রেয়ীর গর্ব। জুন-জুলাইয়ের বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে নদীর উজান ঠেলে বাংলাদেশের দিক থেকে বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীতে আসতে শুরু করে রাইখরের দল। ছানাপোনা নিয়ে নদীতে তখন ওই রুপোলি মাছের ভরা সংসার।

কিন্তু গত কয়েক বছরে আত্রেয়ীর এই নিজস্ব রুপোলি ফসল বাড়ন্ত। আত্রেয়ী পাড়ের মৎস্যজীবী ভীম হালদার, রবি হালদারেরা বলেন, ‘‘পাঁচ-ছয় ইঞ্চির সেই প্রমাণ আকারের রাইখরের ঝাঁক অমিল। নদীময় জাল টেনেও মেলে না।’’ তাঁদের দাবি, ভারী বর্ষায় আত্রেয়ীতে সেই জোয়ার না এলে বাংলাদেশের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে রাইখরের দেখা মিলবে না। সাধারণত অগস্টের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের চলন বিল হয়ে আত্রেয়ীতে রাইখরের আসা শুরু হয়। এ বারে সেই আশা নিয়ে নদীতে কাঠা করে ঘিরে রাইখ়র আটকাতে তোড়জোর শুরু হয়েছে মৎস্যজীবীদের।

আত্রেয়ী পুব দিকে বাংলাদেশ থেকে এ জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া সীমান্ত হয়ে ঢুকে বালুরঘাট শহরের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিকে ডাঙি সীমান্ত পেরিয়ে ফের বাংলাদেশে গিয়ে মিলিত হয়েছে চলনবিলে। বিশাল ওই চলনবিল থেকে রাইখরের ঝাঁক ওই দক্ষিণ দিক থেকে বালুরঘাটের দিকে যাত্রা শুরু করে। বর্ষায় পুষ্ট ভরা নদীতে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে চুনোরা বড় হয়ে বালুরঘাটে আত্রেয়ী দাপাতে থাকে। আর সেই সময়টারই অপেক্ষায় থাকেন মৎস্যজীবীরা।

তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, বাংলাদেশের দিক থেকে শুরু করে এ পারের সীমান্ত এলাকায় কয়েক জায়গায় নদীতে আড়াআড়ি জাল ফেলে মাছ ধরায় রাইখরেরা উজানে যেতে বাধা পায়। আগেই ধরা পড়ে যায় চুনো পোনারা।

পরিবেশপ্রেমী সংস্থার তরফে অভিযোগ, জেলা মৎস্য দফতর থেকে নদীতে মশারি জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দায়িত্ব সেরেছে। কোনও সময় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। আত্রেয়ী নিয়ে সারা বছর আন্দোলন করে যাওয়া শহরের দু’টি পরিবেশ প্রেমী সংস্থার তরফে মিলিত অভিযোগ, সারা বছর জেলা মৎস্য দফতর হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতার প্রচার হয়নি। জেলার মৎস্য দফতরের সহকারী ডিরেক্টর সজল দাস বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন।

সারা রাত জেগে বালুরঘাটে নদী বরাবর মশারি জালটানার জেরে চ্যালা, চুনোপুঁটিদের সঙ্গে উঠছে রাইখরের ছানাপোনাও। অধিকাংশই আকারে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি। একটু বড় মাপের রাইখর পাঁচশো টাকা দর। সকালে বালুরঘাটের মাছবাজারে আসতেই নিমেষে উধাও। অপেক্ষাকৃত ছোট রাইখর দুশো থেকে আড়াইশো টাকায় মিলে যেতে পারে।

তিস্তার যেমন বোরোলি, আত্রেয়ীর রাইখর নিয়েও ফি বছর আলোচনা বালুরঘাটে নতুন নয়। কেননা এক রাইখর মাছের পাঁচ-ছয় রকম রান্নার স্বাদে রসনা মেটাতে শহরবাসী অধীর আগ্রহে বর্ষা পরবর্তী সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

আত্রেয়ীপাড়ের প্রবীণ মৎস্যজীবী দেবেন হালদার বলেন, আত্রেয়ীর উজানে ওপারের দিকে বাঁধ দিয়ে জল আটকে মাছের গতিপথ আটকানো হয়। এ বারে ভারী বর্ষার আভাস মিলেছে। ভরা আত্রেয়ীর সেই খড়স্রোতের টান থাকলে রাইখরদের আটকানো সম্ভব হবে না। উজান ঠেলে আত্রেয়ীতে এসে ডিম পাড়বে রাইখরের দল। ছানা পোনাদের নিয়ে বালুরঘাটের আত্রেয়ীর বুকে তখন রাইখরের ভরা সংসার। পুরনো দিনের সেই পরিচিত রুপোলি মাছের আগমনের বার্তা এনে দেয় ঘোর ঘনবর্ষা। সেই অপেক্ষায় দক্ষিণ দিনাজপুর।

Hilsa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy