Advertisement
E-Paper

ত্রিনেত্রর টাকা নিয়ে মুকুলের চিঠি কমিশনে

ছিল অনুদান, হয়ে গেল ঋণ! ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেবে তৃণমূল দেখিয়েছিল, ‘ত্রিনেত্র কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটিড’-এর কাছ থেকে অনুদান বাবদ ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল তারা। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের কাছে ২৪এ ফর্ম মোতাবেক যে হিসেব দাখিল করেছিলেন দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, তাতেও ত্রিনেত্রর কাছ থেকে ওই টাকা অনুদান পাওয়ার উল্লেখ ছিল।

শুভাশিস ঘটক ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১১

ছিল অনুদান, হয়ে গেল ঋণ!

২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেবে তৃণমূল দেখিয়েছিল, ‘ত্রিনেত্র কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটিড’-এর কাছ থেকে অনুদান বাবদ ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল তারা। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের কাছে ২৪এ ফর্ম মোতাবেক যে হিসেব দাখিল করেছিলেন দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, তাতেও ত্রিনেত্রর কাছ থেকে ওই টাকা অনুদান পাওয়ার উল্লেখ ছিল। জানানো হয়েছিল, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের হরিশ মুখার্জি রোড শাখার উপরে কাটা চেক বা ডিমান্ড ড্রাফট মারফত পাওয়া গিয়েছে ওই টাকা।

কিন্তু ছবিটা পাল্টে গেল চার মাসেই। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এইচ এস ব্রহ্মকে চিঠি লিখে সেই মুকুলই জানালেন, অনুদান নয়, ঋণ হিসেবে টাকা এসেছে ত্রিনেত্র-র কাছ থেকে। অতএব আগে জমা দেওয়া নথিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হোক।

অনুদান আচমকা ঋণ হয়ে গেল কেন? মুকুল নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে লিখেছেন, ‘নির্বাচনী ব্যয়ভার বহনের জন্য আমাদের জরুরি ভিত্তিতে টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। তখন আমরা ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। ত্রিনেত্র কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড-এর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় আমরা জানতাম যে, অনুদান হিসেবেই ওই টাকা দেওয়া হচ্ছে। তাই আমাদের হিসেবে ওই টাকা অনুদান খাতে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু পরে আমরা ওই সংস্থার কাছ থেকে জানতে পারি যে, আমাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সাময়িক ভাবে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং তা শোধ করে দিতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনের কাছে কেন এই চিঠি লিখলেন মুকুল? এবং ঘটনাচক্রে এমন একটা সময়ে যখন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কার্যত তলানিতে! এই চিঠি লেখার কিছু দিন পরেই মুকুলকে দলের যাবতীয় পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা।

তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ত্রিনেত্র সংস্থাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে নানা কথা উঠেছে। ত্রিনেত্র-র খাতাপত্র ঘেঁটে সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তকারীরা দাবি করছেন, সংস্থার আয়ের উৎস নিয়েই বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। তৃণমূলকে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ত্রিনেত্র-র ছিল কি না, সে ব্যাপারেই তাঁরা সন্দিহান। ফলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। বিরোধী দলগুলিও ত্রিনেত্র-কে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। তৃণমূলের ওই নেতাদের মতে, এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ওই চিঠি লেখা হয়েছে, এমনটাও হতে পারে। অর্থাৎ ত্রিনেত্র এত টাকা চাঁদা দিতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরে ওই টাকাকে ধার হিসেবে দেখানো হল।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

ত্রিনেত্র-র আর্থিক অবস্থা বোঝাতে গিয়ে ইডি সূত্রের বক্তব্য, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে সংস্থার লোকসান হয়েছিল ৪ হাজার টাকা। তার পরের বছর সে লাভের মুখ দেখলেও তার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ হাজার টাকা। যদিও এই সময়কালে অন্তত ৮৩টি সংস্থার সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছে ত্রিনেত্র। সংস্থার অ্যাকাউন্টে এক দিকে যেমন কোটি কোটি টাকা ঢুকেছে, তেমনই প্রচুর টাকা বেরিয়েও গিয়েছে। ইডি সূত্রের , ত্রিনেত্র-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে দফায় দফায় কয়েক কোটি টাকা হরিশ মুখার্জি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তৃণমূলের একটি অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। অথচ ওই টাকার কোনও প্রতিফলন ত্রিনেত্র-র আয়-ব্যয়ের হিসেবে নেই বলে ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি।

ত্রিনেত্র-র মতো সংস্থার কাছ থেকে কেন টাকা নেওয়া হল, কেনই বা পরে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে সেই টাকা ধার হিসেবে গ্রাহ্য করার অনুরোধ করলেন— ওই সব প্রশ্নের জবাব মঙ্গলবার মুকুলের কাছ থেকে মেলেনি। আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি আর দলের কোনও পদে নেই। ফলে এ ব্যাপারে কিছু বলা আমার উচিত নয়।’’ যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে ত্রিনেত্র-র সঙ্গে লেনদেন কোনও গরমিল নেই বলেই দাবি করেছেন মুকুল। তৃণমূলকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টিও ত্রিনেত্রর খাতাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

যদিও ইডি এবং সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা বলছেন, ত্রিনেত্র-র থেকে টাকা কোথায় কোথায় গিয়েছে তার একটি প্রাথমিক হিসেব করা হয়েছে। পাশাপাশি ত্রিনেত্রকে কারা টাকা দিল সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই তদন্ত করতে গিয়ে রহস্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

এই রহস্যময় ত্রিনেত্রর পিছনে ভূমিকা কাদের, সেই ইঙ্গিত পেতে আগামিকাল চোখ রাখুন আনন্দবাজারের পাতায়।

abpnewsletters mukuls letter trinetra donation trinetra election commission trinetra consultant private limited
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy