গঙ্গার এক পাড়ের পুরসভা হাওড়ার মতো ডেঙ্গি মোকাবিলায় সামিল এই পারের বরাহনগর আর কামারহাটি পুরসভা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই পুরসভাগুলির পরিকাঠামো যথেষ্ট ‘দুর্বল’। কোথাও সপ্তাহে এক দিন এলাকায় তেল ছড়ানো, কামান দাগা হচ্ছে। কোথাও আবার সচেতনতা শিবিরে বক্তব্য রেখেই দায় সারছেন পুরকর্তারা। কিন্তু মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় যে পরিকাঠামো থাকা দরকার, তা দু’টি পুরসভার কোনওটিতেই কার্যত নেই।
হাওড়ার পাশাপাশি বরাহনগর এবং কামারহাটি পুরসভাতেও নেই কোনও পতঙ্গবিদ। ভরসা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরাই। কিন্তু সেখানেও পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব। ফলে সব এলাকায় নিয়মিত পুরকর্মীদের দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। আরও অভিযোগ, প্রতিটি এলাকায় সপ্তাহে এক দিন করে কামান দাগা হচ্ছে। এক বার তেল ছড়িয়ে চলে যাওয়ার পরে আর দেখাই মিলছে না পুরকর্মীদের।
ফলে গঙ্গার পূর্ব পাড়ের ওই দুই পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। প্রায় প্রতি ঘরে অজানা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি অসংখ্য রোগী। তাঁদের ৩৩ জনের রক্তে ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে বলে দাবি করেছেন সুপার জয়ব্রতী মুখোপাধ্যায়।
অন্য দিকে, কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালেও জ্বর নিয়ে ভর্তি আছেন অনেকে। প্রতিদিন আউটডোরে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও হাসপাতাল সুপার গৌতম জোয়ারদারের দাবি, এখনও পর্যন্ত ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারও ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। কামারহাটি ও বরাহনগরের স্থানীয় সূত্রের অবশ্য খবর, ওই দুই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই স্থানীয় বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। যাঁদের অনেকের রক্তে ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে।
এই পরিষেবা কি মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত?
কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহা বলেন, ‘‘যে পরিকাঠামো আছে, তা যথেষ্ট। স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়েও রোজ অভিযান চালাচ্ছি। তাতে অনেকটাই কাজ হচ্ছে। অনেক জায়গাতেই লার্ভা মিলছে।’’ খোদ পুরকর্তাদের একাংশ মশাবাহিত রোগ প্রকোপ বাড়ার পিছনে পরিকাঠামোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এর পরেও অবশ্য তাঁদের দাবি, ‘দুর্বল’ পরিকাঠামোকে কোনও মতে চাঙ্গা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।
যেমন বরাহনগরের চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) ব্রজেন মণ্ডল বলেন, ‘‘পুরোপুরি পরিকাঠামো না থাকলেও যতটা সম্ভব তৈরি করে নিয়েছি। গত বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আগে থেকেই তৈরি ছিলাম। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েও রাখা হয়েছিল। মাস দেড়েক আগে থেকেই তাঁরা রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন।’’
মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার পরে কেন ঘুম ভাঙল পুরসভার? কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘পুরসভার যে পরিকাঠামো আছে, তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই যতটা সম্ভব কাজ করা হচ্ছে। কোথাও খামতি রাখা হচ্ছে না। নিকাশি ও স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ে তৈরি কমিটি যৌথভাবে কাজ করছে।’’ যদিও কামারহাটির সিপিএম বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু দিন স্বাস্থ্যকর্মীদের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে ঠিকই। তবে আরও আগে পুরসভার ঘুম ভাঙা উচিত ছিল।’’
বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বেহাল পরিকাঠামোর কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, যাঁরা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের এ বার আগে থেকেই জেলার আধিকারিকদের দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেটি খুব উন্নত নয়। তবে অপর্ণাদেবীর দাবি, ‘‘শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর ভরসা করা হচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে চিকিৎসক ও কর্মীরা এসেও যৌথ ভাবে কাজ করছেন।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, বরাহনগরের যে সমস্ত এলাকায় মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেখানে শিবিরের পাশাপাশি বেশি সময়ও দিচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অন্য এলাকাতেও ধোঁয়া দেওয়া, তেল ছড়ানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy