Advertisement
E-Paper

কিরীটেশ্বরী মন্দিরে জমিদান হাবিবদের

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, বিষ্ণু যখন সুদর্শন চক্র ছুড়ে শিবের কাঁধে সতীর দেহ টুকরো করে ফেলেন, দেবীর কিরীটকণা বা মুকুটের টুকরো উড়ে গিয়ে পড়েছিল নবগ্রামে। সেখানে ওই মন্দির। হাজার বছরেরও বেশি আগে কে প্রথম সেটি তৈরি করেছিলেন, তা অজানা।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৯
একসঙ্গে: মন্দির পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন হিন্দু এবং মুসলিমরা।

একসঙ্গে: মন্দির পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন হিন্দু এবং মুসলিমরা।

ওঁরা প্রত্যেকেই নিষ্ঠাবান মুসলমান। পাঁচ ওয়ক্ত নমাজ পড়েন। সারা রমজান মাস রোজার নিরম্বু উপবাস করেন। কিন্তু মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে কিরীটেশ্বরী মন্দিরে জমি দান করতে দু’বার ভাবেননি লুতফল হক, হাবিব শেখ, রবিউল ইসলাম, আব্দুল গনি, সিরাজুল ইসলামরা।

মন্দিরের চাতালে বসেই মন্দির কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ দাস বলছেন, ‘‘যাঁদের জমিতে সৌধটি গড়ে উঠেছিল, তাঁদের অনেকেই মুসলমান। ওই জমি লিখিত ভাবে দান করতে চেয়ে ওঁরা আমাদের বংশ পরম্পরায় তাগাদা দিয়ে আসছেন। লুতফল হক, রবিউল ইসলামদের মতো অনেকে ইতিমধ্যে জমি দান করেছেন। আরও কয়েকজন আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করবেন।’’

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, বিষ্ণু যখন সুদর্শন চক্র ছুড়ে শিবের কাঁধে সতীর দেহ টুকরো করে ফেলেন, দেবীর কিরীটকণা বা মুকুটের টুকরো উড়ে গিয়ে পড়েছিল নবগ্রামে। সেখানে ওই মন্দির। হাজার বছরেরও বেশি আগে কে প্রথম সেটি তৈরি করেছিলেন, তা অজানা। তবে রানি ভবানী এক সময়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন বলে জানা যায়। প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মন্দিরটি উনবিংশ শতকে নতুন করে গড়েন লালগোলার মহারাজা দর্পনারায়ণ।

মন্দিরের জমিদাতাদের নাম।

এখন অরুণাভ, পঙ্কজ, বাপির সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণ সাফসুতরো রাখেন হাবিব, নাসির, আব্দুসরা। প্রতি পৌষে মহামায়ার পুজো উপলক্ষে মন্দির চত্বরের বিঘা দশেক এলাকায় মেলা বসে। মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ও বাপি ঘোষ একযোগে বলছেন, ‘‘পুজোয়, ইদে, মহরমে, বিয়ে-শ্রাদ্ধে এই তল্লাটের হিন্দু, মুসলমান ও সাঁওতালেরা এক সঙ্গে আনন্দ করেন।’’

জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে ভোগ রান্নাই হয় না জবর শেখ, রাজেশ শেখ, মতি শেখ, চিমু শেখ, আমিরুল ইসলাম, সাদেক মণ্ডলদের দান করা চাল, মুগ ডাল, তেল-মশলা ছাড়া। জমিদাতা হাবিব শেখ বলেন, ‘‘আমার দেওয়া পেল্লায় রুই, কাতলা আর শোল মাছ ছাড়া নবমী-দশমীর ভোগই হয় না!’’

সহাবস্থানের এই ইতিহাস কিন্তু আজকের নয়। ১২০ বছর আগে প্রকাশিত ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনী’ গ্রন্থে নিখিলনাথ রায় লিখেছেন, ‘‘নবাব মীরজাফর খাঁ তাঁহার প্রিয় ও বিশ্বাসী মন্ত্রী মহারাজা নন্দকুমারের অনুরোধে অন্তিম সময়ে কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত পান করিয়া চিরদিনের জন্য নয়ন মুদ্রিত করিয়াছিলেন।’’

মন্দিরের কাছেই এ দিন গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন সিরাজুল, হাবিব, বাপিরা। বসিরহাটের ঘটনা শুনেছেন তো? কথাটা তোলা মাত্র হইহই করে ওঠেন সকলে— ‘‘এটা মানুষের কাজ নাকি? বিচারবুদ্ধিহীন কেউ যদি একটা বাজে কাজ করেও, তার জন্য সকলে মারামারি-কাটাকাটি করতে হবে? আমরা তো ভাই ভাবতেই পারি না!’’

ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

Communal Harmony Hindu Muslim কিরীটেশ্বরী মন্দির হাবিব শেখ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy