শোকার্ত পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
পাশাপাশি কবর দেওয়া হল স্বামী-স্ত্রী রেজিনাবিবি ও ইয়াসিন মণ্ডলকে।
অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনায় বুধবার রাতে মারা গিয়েছেন তাঁরা। কুমারগঞ্জের চাঁদ হরিপুর গ্রামের মানুষ শোক সামলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এলাকার তাঁদের শেষকৃত্য করলেন। পাশের গ্রাম পশ্চিম কাটলা এলাকায় রেজিনার মা রসিদা বিবির (৪৫) দেহ কবর দেওয়া হয়। এদিন দিনভর গরিব ওই চাষি পরিবারের পাশে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা কোনও সরকারি অফিসারকে গিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। মৃতদের মাটির বাড়ি আগলে জল ভেজা চোখে বসে ছিলেন বৃদ্ধ ফইমুদ্দিন সরকার। আত্মীয়রা তখন সামলাচ্ছিলেন মৃত দম্পতির একমাত্র ছেলে সাড়ে তিন বছরের রুবায়েতকে। এদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মরদেহগুলি গ্রামে ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীরা।
বুধবার রাত ২টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার মেহেন্দিপাড়া এলাকায় ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ওই দুর্ঘটনার খবর ভোর রাতেই গ্রামে পৌঁছে যায়। পুলিশ গিয়ে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে স্থানীয় রসিদপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর থেকে সারাদিন ধরে গোটা এলাকায় আলোচনার বিষয় ছিল গভীর রাতে কেন বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে করে বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে রোগীকে মালদহে রেফার করা হলো।
মৃতার মামা ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘‘রেজিনার শারীরিক অবস্থা তেমন খারাপ দেখিনি। ঠিক কী কারণে রেফার করা হলো তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়’’। দুর্ঘটনার গাড়িতে হাসপাতালের রেফার করা কাগজ তারা খুঁজে পাননি। এদিন দুপুর ১২ টার পর হাসপাতাল সুপার তপন বিশ্বাস তার এক আত্মীয়ের অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়ে চলে যান। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাগজ কলমে মালদহ মেডিক্যালে রেফার লেখা হলেও মালদহের একটি বেসরকারি নার্সিংহোম এবং তাদের অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে রেজিনাবিবির আত্মীয়দের প্রভাবিত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে কুমারগঞ্জের চাঁদ হরিপুর এলাকার দরিদ্র কৃষক বৃদ্ধ ফইমুদ্দিন সরকারের তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে ছিলেন ইয়াসিন। বাড়িতে তার সাড়ে তিন বছরের ছেলে রুবায়েত ও স্ত্রী রেজিনাকে নিয়ে থাকতেন। ফইমুদ্দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘সংসারে অভাব। ইয়াসিনই ছিল একমাত্র রোজগেরে ছেলে। ছোট্ট নাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।’’ ইয়াসিনের দুই ভাই বড় মফিজুদ্দিন এবং মেজ মোকবুলেরা আলাদা থাকেন। বৃদ্ধ ফইমুদ্দিন এখন দুধের শিশুকে কী ভাবে সামলাবেন, এই প্রশ্ন এদিন বিকেলের পর থেকে এলাকাবাসীর মনে ঘুরপাক খেতে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy