Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
PMAY

বাড়ি বিলির নয়া প্রচারে ধন্দ নবান্নে, বন্ধ যাচাই

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৩
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি বিলির প্রকল্প নিয়ে ফের চর্চা চলছে বাংলার গ্রামে গ্রামে। সম্প্রতি পঞ্চায়েতগুলিতে একটি করে তালিকা পৌঁছেছে। তাতে এক-একটি গ্রামে ২৫০-৩০০টি পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে প্রচার চালাচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। বাড়ি প্রাপকদের কাছ থেকে নতুন করে আবেদন নেওয়াও শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনও নির্দেশই দেওয়া হয়নি বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা। তা হলে কিসের ভিত্তিতে গ্রামে গ্রামে বাড়ি বিলির প্রচার চলছে? ধন্দে নবান্নের কর্তারাও।

ওই তালিকা ঘিরে পঞ্চায়েত দফতর এত সতর্ক কেন? কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত সাত বছরে এক কোটিরও বেশি পাকা বাড়ি হয়েছে। তার পরেও বাড়ি চেয়ে ৫৬ লক্ষ আবেদন এসেছে। জনগণনা এবং জাতি সমীক্ষার নথি অনুযায়ী যা আসার কথাই নয়। এত বিপুল সংখ্যক আবেদনের কতটা ঠিক আর কতটা জল মেশানো, ভোটের আগে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেটা যাচাই করা ঝুঁকির ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতাদের আত্মীয়স্বজনের নাম ওই তালিকায় রয়েছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। আমপানের ত্রাণ বিলি নিয়ে যে-কাণ্ড হয়েছে, তার পরে শাসক দলের তৃণমূল স্তরের নেতাদের নিয়ে ফের এক দফা বিতর্কের আঁচ পাচ্ছিলেন নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। তার উপরে ‘কাটমানি’ চাওয়ার অভিযোগ তো আছেই। এই অবস্থায় নেতাদের বা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তালিকা যাচাই প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করতে বলেছে নবান্ন। যদিও সেই নির্দেশের পরেও বেশ কিছু জায়গায় নেতারা তালিকা নিয়ে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছেন বলে খবর।

“আবাস যোজনায় বার্ষিক কোটার প্রায় ১০ লক্ষ বাড়ি তৈরি করছে সরকার। প্রথম কিস্তির টাকাও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনও বাড়ি বরাদ্দের কথা জানা নেই,” বলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

তবে জেলা স্তর থেকে অন্য খবর মিলেছে। কর্তারা জানাচ্ছেন, কারা পাকা বাড়ি পাবেন, তার
তালিকা চূড়ান্ত হয়েছিল আর্থ-সামাজিক জাতি সমীক্ষার ভিত্তিতে। কিন্তু দেখা যায়, তার পরেও বহু মানুষ আছেন, যাঁদের পাকা বাড়ি পাওয়ার কথা। সেটা জানানোর পরে কেন্দ্র ২০১৭ সালে নতুন আবেদন নিতে রাজি হয়েছিল। ‘আবাস-প্লাস’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে প্রাপকের কাঁচা বাড়ির ছবি-সহ আবেদন গ্রহণ করা হয়। তাতে ৩৩৫১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৫৬ লক্ষ পাকা বাড়ির আবেদন জমা পড়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক আগে তৃণমূল স্তরে সেই তালিকা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই গ্রামে গ্রামে ফের পাকা বাড়ি দেওয়ার সূচি নিয়ে নেমে পড়েন শাসক দলের নেতাদের একাংশ। সঙ্গে সঙ্গে নানা ভাবে কাটমানি চাওয়া হচ্ছে বলেও পঞ্চায়েত দফতরে অভিযোগ আসতে শুরু করে। তখনই ওই দফতর থেকে জেলাগুলিকে জানানো হয়, যাচাইয়ের কাজ বন্ধ রাখতে হবে।

পঞ্চায়েত ভবনের বক্তব্য, কোনও তালিকা ধরে বাড়ির বিলির আশ্বাস দেওয়া হয়নি। ৫৬ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনকারীদের ১০০ দিনের কাজের ‘জব কার্ড’ এবং আধার কার্ড সংযুক্তির কাজ হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা গ্রামে তালিকা টাঙিয়ে উপভোক্তা বাছাইয়ের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। জব কার্ড, আধার সংযুক্তির পরে আবাস-প্লাস অ্যাপের মাধ্যমেই ডি-ডুপ্লিকেশনের কাজ করা হবে। অর্থাৎ প্রকৃত উপভোক্তা বাছাই হবে সফটওয়্যার রেকর্ডের মাধ্যমে। সর্বশেষ পর্যায়ে চূড়ান্ত যাচাই হতে পারে। সেটা নির্ভর করবে দিল্লির নির্দেশের উপরে। তবে কারা বাড়ি পাবেন, তা ঠিক করা হবে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পরেই।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, গ্রামাঞ্চলে তৃণমূল নেতা মানেই ‘কাটখোর’ বলে লোকে মনে করছে। তাই ‘দুয়ারে সরকার’ অভিযানে ভাইদের আড়াল করতে সরকারি কর্মী-অফিসারদের টিফিন খাইয়ে দিনরাত খাটানো হয়েছে। এ বার প্রধানমন্ত্রী যোজনায় পাকা বাড়ি বিলি করতে নেমে পড়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। বিপদ বুঝে নবান্ন তা আটকাতে চাইছে। তা সত্ত্বেও তাবিজ-কবজ দেখিয়ে টাকা তোলার মতো বাড়ি-বুজরুকি দেখিয়ে টাকা তোলা চলছে। যাওয়ার আগে শেষ পাতটুকু চেটেপুটে খাওয়া শুরু হয়েছে।

এই অভিযোগের জবাবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘নিধিরাম সর্দারেরা রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন! হাসি পাচ্ছে আমার।”

পঞ্চায়েতকর্তারা জানান, রাজ্য সরকারের তরফে তালিকা যাচাইয়ের কোনও নির্দেশ জেলায় পাঠানো হয়নি। তবে জেলাগুলির কাছে আবেদনের নথি রয়েছে। এখন স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, গ্রামে গিয়ে নয়, জব কার্ড ও আধার সংযুক্তির কাজ হবে শুধু অনলাইনেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna West Bengal Assembly Election 2021 PMAY
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE