জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনগুলিতে শহরে অপ্রীতিকর ঘটনা ও বারোয়ারি বা ক্লাব পুজোগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এড়াতে পুজো কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক কেন্দ্রীয় কমিটি গড়া হল কৃষ্ণনগরে।
পুজোর দিনগুলিতে বা প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় শোভাযাত্রায় একাধিক বারোয়ারির মধ্যে গণ্ডগোল বা তার জেরে আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনার নজির কম নেই। প্রশাসনিক নজরদারি সত্ত্বেও প্রতি বছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কারণ হিসেবে অনেকেই ক্লাব বা বারোয়ারিপুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছেন। সেই ফাঁক পূরণ করার জন্য প্রশাসনের একাংশও দীর্ঘদিন ধরে একটি কেন্দ্রীয় কমিটির কথা বলে আসছিলেন। তাঁদের মতে, শহরের সমস্ত পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি করা হলে প্রশাসনের কাজের যেমন সুবিধা হবে, তেমনই ক্লাবগুলির নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ও বাড়বে। উত্সবের দিনগুলি আরও আনন্দমুখর হয়ে উঠবে। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এমন একটা কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি হওয়াটা খুবই জরুরি ছিল। এই ধরনের কমিটি থাকলে আমাদের পক্ষে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা বা কোনও বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ অনেক সহজ হয়।”
শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও কৃষ্ণনগরে পুজোর দিনগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি গড়া হয়েছিল। শহরের পরিচিত নাম প্রণব চৌধুরী, কিরণ চক্রবর্ত্তী, খোকন চক্রবর্ত্তীরা এই কমিটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সদস্যদের বার্ধক্যজনিত কারণে কমিটি ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। একসময় তা বন্ধ হয়েও যায়। দীর্ঘদিন পরে আবার এই ধরনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন শহরের বাসিন্দারা। বিশেষ করে যে ভাবে প্রতিবছর শহরের রাজপথে মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে তাতে সেই বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য পরিষেবা দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ছিল। তাই দিনকয়েক আগে কয়েকটি পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা মিলে কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙার কাছে একটা হলে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরির রূপরেখা তৈরি করেন। শহরের বিভিন্ন বারোয়ারি কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। শেষ পর্যন্ত ওই হলেই শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও বারোয়ারি পুজো উদ্যোক্তারা আলোচনায় বসেন। কমিটির রূপরেখা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রীয় উত্সব কমিটির কার্যকরী সভাপতি ব্যাসদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো হল প্রধান উত্সব। শহরের বাইরে থেকেও বহু মানুষও ঠাকুর দেখতে আসেন। তাই এই উত্সবকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে উপনিত হতে পারব।”
কমিটির সদস্যরা জানান, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পানীয় জলের সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিত্সার ব্যবস্থা ছাড়া পুজো কমিটিগুলি যাতে প্রশাসনিক নিয়মকানুন মেনে চলেন তার দিকেও নজর রাখার হবে। সংগঠনের সম্পাদক গৌরব সরকার বলেন, “প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যাতে বিভিন্ন বারেয়ারিগুলির মধ্যে কোনও গণ্ডগোল না হয় সে বিষয়েও আমরা সজাগ থাকব। যে সব পুজো কমিটি বা বারোয়ারিগুলি প্রায় বছরই গণ্ডগোলে জড়িয়ে না পড়ে বা মুখোমুখি না হতে পারে সেই মতো সময়সূচি তৈরি করা হবে। এছাড়াও গণ্ডগোলের আগাম খবর পেলে দ্রুত প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করব।” গতবছর শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২৭টি পুজোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও অনুমোদনহীন আরও প্রায় ৩০টির মত পুজো হয়েছিল। এবারও যে সংখ্যার কোনও হেরফের হবে না সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত প্রশাসন। তাই এই বিশাল কর্মকাণ্ডে এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন শহরের মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy