Advertisement
১৮ মে ২০২৪

আসল নকলের ধন্দে পড়ে ‘অচল’ দশ টাকার কয়েন

সাত সকালেই তুলকালাম। সব্জি বাজারে লাউ কিনে রীতিমত বিপাকে পুলিশ কর্মী অবিনাশ রায়। তারস্বরে চিৎকার জুড়েছেন লাউ বিক্রেতা শ্যামল মণ্ডলও। হই-চই শুনে এগিয়ে এলেন অনেকেই।

এই দুই ডিজাইনের কয়েনকে ঘিরে বিভ্রান্তি।

এই দুই ডিজাইনের কয়েনকে ঘিরে বিভ্রান্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

সাত সকালেই তুলকালাম। সব্জি বাজারে লাউ কিনে রীতিমত বিপাকে পুলিশ কর্মী অবিনাশ রায়। তারস্বরে চিৎকার জুড়েছেন লাউ বিক্রেতা শ্যামল মণ্ডলও। হই-চই শুনে এগিয়ে এলেন অনেকেই। কিন্তু তখনও কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না গোলমালটা কোথায়।

অবিনাশবাবুর সাফ কথা “ওই কয়েন নিতেই হবে।”

আর শ্যামলবাবুর সাফাই “অচল কয়েন নেব না।”

নাছোড় অবিনাশবাবু ছাড়তে নারাজ “তা হলে লিখে দিন, এই কয়েন চলবে না।”

পল্টা জবাব আসে, “লিখতে জানি না। ১০ টাকার কয়েন আড়ৎদারেরা নিচ্ছেন না, আমরাও তাই নেব না।”

এ বার স্পষ্ট হল সাত সকালে এত গোল কীসে? নীচে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে দু’টি ১০ টাকার কয়েন। পাশে পড়ে কচি লাউ।

পাশের দোকান থেকে ততক্ষণে এসেছেন বিকাশ হালদার। পরিচিত অবিনাশবাবুর হয়ে লাউয়ের দামটা মিটিয়ে দিতেই ইতি পড়ল ঝগড়ায়।

বিকাশ বলছেন, “লাউ বিক্রেতার কী দোষ। সারা শহরের এক বোল। ১০ টাকার কয়েন জাল। তাই নেবেন না।”

পাশাপাশি ১০ টাকার কয়েন দু’টি হাতে ধরে বিকাশ দেখালেন গোলমালটা কোথায়। একটা কয়েনের মধ্যে ইংরেজিতে ১০ লেখা, তার মাথায় ১৫টি খাঁজ।

আর অন্য কয়েনটিতে টাকার প্রতীকের নীচে ১০ লেখা। মাথায় খাঁজ রয়েছে ১০টি। তা দেখে কেউই বলতে পারছেন না কোন কয়েনটা জাল, আর কোনটাই বা আসল।

এতেই শেষ নয়। বিভিন্ন সময়ে বার বার নকশা বদল ঘটেছে ১০ টাকার কয়েনের। আর তা নিয়েই হাট, বাজার, দোকানে, বাস, রিকশা বা টোটো ভাড়া মেটাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা যাত্রীদের। সকলেরই এক রা ১০ টাকার কয়েন নেবেন না। সাফাই একটাই, “জাল বলে কেউ নেয় না, তাই আমিও নেব না।”

অরঙ্গাবাদের মুদির দোকানদার রফিকুল শেখের অভিজ্ঞতা আরও বিচিত্র। রফিকুল প্রতি শুক্রবার নামাজ শেষ করে দোকানে এসে কিছু পয়সা দান করেন গরিবেরা এলে। রফিকুল বলছেন, “গত শুক্রবার একজন এসে দোকানে দাঁড়াতেই বাক্স থেকে একটা ১০ টাকার কয়েন দিলাম তার হাতে। খুব খুশি হয়ে সে চলেও গেল। আধঘণ্টা পরে দোকানে এসে হাজির সে। বলল পয়সাটা অচল, বদলে এক টাকার কয়েন দিন।”

তবে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্কে ১০ টাকার কয়েনে লেনদেন হয় না। তাই তা অচল কী সচল তা নিয়ে বিতর্ক আসেনি। এখনও পর্যন্ত ১০ টাকার কয়েন অচল বা জাল হওয়ারও কোনও খবর নেই।

এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কথায়, “২০০৯ সালে এই সোনালি কয়েন যখন নতুন উঠল শখ করে ১০টি নিয়ে এসে বাড়িতে রেখে দিয়েছিলাম। তার গায়ে ১৫টি খাঁজ। মুখের উপর দোকানদার বলে দিলেন সেটি জাল কয়েন। নেবেন না। এরপরেও কি কিছু বলার থাকে!”

আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুকোমল রায় জানান, ১০ টাকার কয়েনটি বাই-মেটালিক, গোলাকার। ২৭ মিলিমিটার ডায়ামিটার এবং ৭.৭১ গ্রাম ওজনের। এই কয়েন ২০০৯ সালে প্রথম বাজারে আসে। পরে নানা স্মরণীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু ওজন ও আকারে কোনও হেরফের হয়নি। এমনিতেই জাল নোট নিয়ে মুর্শিদাবাদের মানুষ উদ্বিগ্ন। তাই বিভিন্ন ডিজাইনের কয়েন দেখে ১০ টাকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

10 rupees coins obsolete
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE