ধুলিয়ানের বহু ওয়ার্ডে এ ভাবেই জল জমে রয়েছে।— নিজস্ব চিত্র।
মাস দেড়েক আগে ধুলিয়ানের মহব্বতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে জমা জলে পড়ে মারা গিয়েছিল আট বছরের এক পড়ুয়া। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের জমা জলে ডুবে মারা গেল দু’বছরের এক শিশু। ঘটনাস্থল সেই ধুলিয়ান। রবিবার সকালে ওই শিশুটি খেলতে খেলতে বাড়ির উঠোনের কাছে জমা জলের মধ্যে পড়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে তার নিথর দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ ধুলিয়ান শহরের বেহাল নিকাশি নিয়ে ফের সরব হয়েছে।
ধুলিয়ানে বেহাল নিকাশির কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। বছরের মধ্যে প্রায় প্রায় ১০ মাসই ধুলিয়ান শহরের ৬ , ৮ ,১১, ১২ , ১৩ , ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জলে ডুবে থাকে। সেই জমা জল উঠোন ছাড়িয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়ে বহু বাড়িতে। একাধিক বার এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় পুরসভাকে জানানো হলেও নিকাশি সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি বলেই অভিযোগ ধুলিয়ানের বাসিন্দাদের। তবে জমা জল মাড়িয়ে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত ওই এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এ রকম মৃত্যুর ঘটনা আগে কোনওদিন ঘটেনি।
এ দিনের শিশু মৃত্যুর ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তৃণমূল পরিচালিত ধুলিয়ান পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, কিছুদিন পাম্প চালিয়ে জল বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল পুরসভা। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে ফের সেই পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বার বার বলা সত্ত্বেও আর পাম্প চালানো হয়নি। এরমধ্যে বেশ কয়েক বার বৃষ্টিও হয়েছে। ফলে বহু জায়গাতেই এখনও বাড়ির পাশেই হাঁটু কিংবা কোমর সমান জল জমে রয়েছে।
ধুলিয়ানের ওই শিশুর বাড়ি লাগোয়া গোটা এলাকা এখনও জলে ভাসছে। এ দিন সকালে ওই শিশুটি বাড়ির বারান্দাতে খেলছিল। তারপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পরে বাড়ির উঠোন লাগোয়া জমা জল থেকে তার দেহ ভাসতে দেখা যায়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। সামশেরগঞ্জের ওসি সম্রাট ফণি জানান, ওই শিশুটির পরিবার লিখিত ভাবে গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা ধুলিয়ানের প্রাক্তন পুরপ্রধান সফর আলি এই নিকাশি সমস্যার জন্য সরাসরি পুরকর্তাদেরই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ধুলিয়ানের অন্তত ৭টি ওয়ার্ড নিচু এলাকায়। তাছাড়া ওই এলাকার নিকাশিও বেহাল। সেই কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় ওই এলাকায় জল জমে থাকে। আগে পরিস্থিতি বুঝে ঠিক মতো পাম্প চালিয়ে জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করত পুরসভা। পুরসভার পক্ষ থেকে সেই কাজটি নিয়মিত করা হলে এমন ঘটনা ঘটত না।’’
ধুলিয়ানের পুরপ্রধান তৃণমূলের সুবল সাহা বলেন, ‘‘শিশু মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। জমা জল সরাতে ৬টা পাম্প চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলরদের বলা হয়েছিল, পাম্প যেন কোনও অবস্থাতেই বন্ধ না হয়। সেই দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করা হয়নি। আমরা এই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত।’’
পুরপ্রধান জানান, অপরিকল্পিত ভাবে এই শহর গড়ে ওঠার কারণেই এই সমস্যা। আগের পুরকর্তারাও এই বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দেননি। জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলিতে বাস্তবে এখনও পর্যন্ত কোন নিকাশি নালাই তৈরি করা হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যাচ্ছে। তাছাড়া বেশ কিছু নিকাশি নালার উপরে বেআইনি ভাবে নির্মাণ গড়ে উঠেছে।
তাহলে এতদিন এগুলো নিয়ে পুরসভার তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি কেন? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি পুরপ্রধানের কাছে। তাঁর আশ্বাস, ‘‘যে ভাবেই হোক এই জমা জলের সমস্যার সমাধান আমরা করবই। আর যেন কোনও শিশুকে এ ভাবে প্রাণ দিতে না হয়।’’ ধুলিয়ানের আক্ষেপ, পুর কর্তৃপক্ষের এই বোধোদয়টা আগে হলে এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy