Advertisement
E-Paper

কুটুম এলেই পা পড়ে ফারুখের চিড়িয়াখানায়

পদ্মপুকুরের কোল ঘেঁষে সরু রাস্তাটা থমকে গিয়েছে সজনে গাছতলায়। বৃদ্ধ আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছেন, ‘‘সজনেতলা থেকে বাঁক নিলেই পাখ-পাখালির হাঁক শুনতে পাবা।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০১:১৩
ফারুখ-ডাক্তার: নিজের চিড়িয়াখানায়। —নিজস্ব চিত্র।

ফারুখ-ডাক্তার: নিজের চিড়িয়াখানায়। —নিজস্ব চিত্র।

পদ্মপুকুরের কোল ঘেঁষে সরু রাস্তাটা থমকে গিয়েছে সজনে গাছতলায়। বৃদ্ধ আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছেন, ‘‘সজনেতলা থেকে বাঁক নিলেই পাখ-পাখালির হাঁক শুনতে পাবা। পেঁচা ডাকতেছে, ঈগল ডানা ঝাপটাইতাছে, ওইডাই হইল গিয়া ফারুক মিঞার চিড়িয়াখানা!’’ বৃদ্ধের মুখে দেঁতো হাসি।

কাজিসাহা গ্রামে ফারুকের ভিটের এটাই ‘সাবেক’ নাম। আর, আশপাশের গা-গঞ্জের বাড়িতে কুটুম এলে, কাজিসাহার নিতান্ত আটপৌরে এই আটচালায় পা তাঁদের পড়বেই।

তবে, সে বসতে পাখ-পাখালি কিংবা হিসহিসে সরীসৃপেরা তেমন সুঠাম-সুন্দর নয়। কারও পালক ওঠা পিঠ হুহু করছে। কারও বা মাজাটাই ভেঙে গিয়েছে।

খান তিনেক তীক্ষ্ণ বিষের কেউটে, গোটা দুই হেলে আর দাঁড়াস, কাকের ঠোক্করে দিন-কানা পেঁচা, মা-বাপ মরা শালিখ ছানা, আহত বাজ আর পা-ভাঙা শিকরা। সে চিড়িয়াখানায় আছে, অনাথ বেজি শাবক, পা-ভাঙা ভাম আর ডানা-ভাঙা শকুনও।

ইট পাতা রাস্তাটুকু পার হলেই তাদের সক্কলের হা-হুতাশ, ফুঁপিয়ে ওঠা কিংবা ব্যথা কাতর দ্বীর্ঘশ্বাস— সবই কানে আসে। ফারুক বলছেন, ‘‘সেরে উঠলে দেখবেন, ডাকগুলো কেমন বদলে গিয়েছে।’’ নিজেই দেখিয়ে দিচ্ছেন, প্রায় সেরে ওঠা বুলবুলিটা কেমন খাঁচার এ কোণ থেকে কোণে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। ফারুক ডাক্তারের ছোঁয়ায় আপাতত সুস্থ সে। ‘‘দিন কয়েকের মধ্যেই মাঠ ছুঁয়ে উড়ে যাবে’’, বলছেন ফারুখ।

আরও পড়ুন: আঁচড়ে, কামড়ে পালাল পবননন্দন

কথা শুনে হাসছেন নাসরিন। বলছেন, ‘‘জানেন তো এখন পেঁচারা আমার হাতে ছাড়া খেতে চায়না। বেজির বাচ্চাগুলোকেও আমাকেই খাইয়ে দিতে হয়।’’

গাঁ-গঞ্জ থেকে সাপ-বেজি-শকুন-চিল, আহত হয়েছে শুনলে, বাড়ি এনে তাদের কোলে পিঠে করে চিকিৎসা করেই ফারুখ এখন পাঁচ গাঁয়ের পশু চিকিৎসক। সঙ্গে রয়েছেন, ওবাইদুল্লা, সুরজিৎ, সুদীপ্তের মতো বন্ধুরা। ফারুখ বলছেন, ‘‘ওরাই আমার বলভরসা। খোঁজ-খবর এনে দেন, কোথায় সাপ পেটাচ্ছে গ্রামবাসীরা। কোথায় ডানা ভাঙা চিল পড়ে আছে।’’

ছেলেবেলা থেকেই ফারুখের বাবা-মা শিখিয়েছেন, ‘আর যাই কর, অবলা জীবদের আঘাত কোর না।’ ঠারেঠোরে সে কথাটাই মেনে চলতে চেয়েছেন ফারুখ। বলছেন, ‘‘এটা একেবারে মন্ত্রের মতো মনে রেখেছি সারা জীবন।’’

বন্ধুদের নিয়ে একটা সংগঠনও করেছেন তিনি। এক বনকর্তার কথায়, ‘‘ফারুখের মতো পরিবেশ সচেতন মানুষের জন্যই এখনও গ্রাম বাংলার, পাখি-বেজি-সাপ টিঁকে রয়েছে। বেঁচে রয়েছে বাস্তুতন্ত্র।’’

Veterinary Doctor Zoo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy