ফিরে এলেন জয়ে। — নিজস্ব চিত্র
অবিকল বিশ বছর আগের মতো। এখনও মনে পড়ে?
‘‘হ্যাঁ, স্পষ্ট, সে বার ছিল লাল রঙের একটা হাতল ছাড়া চেয়ার।’’ আর এ বার, চেয়ারটা কিঞ্চিৎ রংচটা।
চেয়ার টেনে সেই যে কাউন্টিং সেন্টারের সামনে বসে একটা হাল্কা হাসি ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, দিনভর মেঘ-রোদ্দুর পিঠে নিয়ে, মাঝে মধ্যে ভাঁড়ের চায়ে সুড়ুৎ করে একটা চুমুক দিয়ে সেই হাসিটা ঠোট থেকে আর মোছেননি। যখন মুছলেন, তখন পড়ন্ত বেলায় চোখটা চিকচিক করছে। মাইকে তখন ঘোষণা শুরু হয়েছে— কেন্দ্র, রানাঘাট (উত্তর-পশ্চিম), জয়ী শঙ্কর সিংহ...।
কুড়ি বছর আগে, শেষবার কাউন্টিং সেন্টারে এসেছিলেন তিনি। তার পরে আর নয়। বাড়িতে বসেই শুনতেন, সামনের রাস্তায় কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে ছেলেরা জয়োৎসব করছে। মুচকি হাসতেন শঙ্কর, রানাঘাট রাজনীতির জমিদার।
সিংহের বয়স হয়েছে। বিশ বছর পরে কালো প্যান্ট আর হলুদ হাতওয়ালা ফতুয়াটা পরে সেই ফেলে আসা স্বভাবটাই টেনে হিঁচড়ে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কাউন্টিং সেন্টারে। তেইশ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে এ বারও হাসছেন তিনি, ‘‘দেখলে ট্রিকটা কেমন খেটে গেল, কাউন্টিং সেন্টার থেকে কখনও সরতে নেই!’’
অথচ জোট প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রথম থেকে বেঁকে বসেছিলেন তিনি। যে প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে তাঁর মুখ দেখাদেখিই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শেষতক তাঁর ফোনেই বরফটা গলেছিল। তাতে যে আখেরে দলেরই লাভ, পোড় খাওয়া অধীর চৌধুরীর তা বুঝতে ভুল হয়নি। জোটের ভরাডুবির আবহে পুরনো সাম্রাজ্য রানাঘাটে ফের থাবা বসিয়ে তাই শঙ্কর ঘনিষ্ঠদের কাছে বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস জোর করেছিল, না হলে পলিটিক্যাল লাইফটাতেই হয়তো দাঁড়িই পড়ে যেত!’’
আড়বান্দি পঞ্চায়েতটা বরাবরই কংগ্রেসের গাঁট। টেবিলে আড়বান্দির ইভিএম দেখে দলের নেতারা প্রথম থেকেই তাই অস্বস্তিতে ছিলেন। চেয়ার থেকে ইশারায় শঙ্কর বলেছিলেনে, ‘‘আরে দেখ না, খেলা তো সবে শুরু!’’
মিনিট পনেরোর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল— আড়বান্দি ১-ই তাঁকে এগিয়ে দিয়েছিল প্রায় আড়াইশো ভোটে। ছুটন্ত ট্রেনটা আর থামেনি। সেই ব্যবধান বেড়ে এক সময়ে দাঁড়িয়ে ছিল সাড়ে তেইশ হাজার। শঙ্কর বলছেন, ‘‘মাঠ ছেড়ে কখনও পালাবি না জানিস, দেখবি এক সময়ে জয় এসে হামাগুড়ি দিয়ে বসেছে তোর সামনে!’’
শুধু আড়বান্দি কেন, রানাঘাট পুরসভার দু’টি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সর্বত্রই এগিয়ে ছিলেন শঙ্কর। দিন সাতেক আগেও, ঘনিষ্ঠদের কাছে শঙ্কর কবুল করেছিলেন, পঞ্চায়েতগুলো নিয়ে চিন্তা নেই, সমস্যা রানাঘাট পুরসভাটা।
যে পুরসভার দখল নিয়ে গত সাত বছর ধরে মৌরুসি পাট্টা যাঁর একদা তিনি ছিলেন শঙ্করের শিষ্য। সেই পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায় এ বার ছিলেন তাঁর প্রতিপক্ষ। দিন কয়েক আগেও যিনি জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘জয়টা নিছক সময়ের অপেক্ষা।’’ দলনেত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকেও সে কথা জানিয়ে এসেছিলেন তিনি। তা হলে এমন ভরাডুবি কেন? শঙ্করের এক লক্ষ ৯ হাজার ৬০৭ ভোটের জবাবে পার্থর ঝুলিতে ৮৬ হাজার ১৮৭।
মালা-মিষ্টিতে মাখামাখি শঙ্কর বলছেন, ‘‘ঔদ্ধত্য মারাত্মক ক্ষতিকর জানেন তো, ওটাই সকলের কাল
হয়, আর ওটা ভুলতে পারলেই আড়বান্দিও বাধা নয়!’’ শিশুর মতো হাসছেন সিংহ শঙ্কর।
বিশ বছর পরে গণনাকেন্দ্রে গিয়ে কুড়িয়ে আনলেন জয়
নিজস্ব সংবাদদাতা: অবিকল বিশ বছর আগের মতো। এখনও মনে পড়ে?
‘‘হ্যাঁ, স্পষ্ট, সে বার ছিল লাল রঙের একটা হাতল ছাড়া চেয়ার।’’ আর এ বার, চেয়ারটা কিঞ্চিৎ রংচটা।
চেয়ার টেনে সেই যে কাউন্টিং সেন্টারের সামনে বসে একটা হাল্কা হাসি ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, দিনভর মেঘ-রোদ্দুর পিঠে নিয়ে, মাঝে মধ্যে ভাঁড়ের চায়ে সুড়ুৎ করে একটা চুমুক দিয়ে সেই হাসিটা ঠোট থেকে আর মোছেননি। যখন মুছলেন, তখন পড়ন্ত বেলায় চোখটা চিকচিক করছে। মাইকে তখন ঘোষণা শুরু হয়েছে— কেন্দ্র, রানাঘাট (উত্তর-পশ্চিম), জয়ী শঙ্কর সিংহ...।
কুড়ি বছর আগে, শেষবার কাউন্টিং সেন্টারে এসেছিলেন তিনি। তার পরে আর নয়। বাড়িতে বসেই শুনতেন, সামনের রাস্তায় কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে ছেলেরা জয়োৎসব করছে। মুচকি হাসতেন শঙ্কর, রানাঘাট রাজনীতির জমিদার।
সিংহের বয়স হয়েছে। বিশ বছর পরে কালো প্যান্ট আর হলুদ হাতওয়ালা ফতুয়াটা পরে সেই ফেলে আসা স্বভাবটাই টেনে হিঁচড়ে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কাউন্টিং সেন্টারে। তেইশ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে এ বারও হাসছেন তিনি, ‘‘দেখলে ট্রিকটা কেমন খেটে গেল, কাউন্টিং সেন্টার থেকে কখনও সরতে নেই!’’
অথচ জোট প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রথম থেকে বেঁকে বসেছিলেন তিনি। যে প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে তাঁর মুখ দেখাদেখিই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শেষতক তাঁর ফোনেই বরফটা গলেছিল। তাতে যে আখেরে দলেরই লাভ, পোড় খাওয়া অধীর চৌধুরীর তা বুঝতে ভুল হয়নি। জোটের ভরাডুবির আবহে পুরনো সাম্রাজ্য রানাঘাটে ফের থাবা বসিয়ে তাই শঙ্কর ঘনিষ্ঠদের কাছে বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস জোর করেছিল, না হলে পলিটিক্যাল লাইফটাতেই হয়তো দাঁড়িই পড়ে যেত!’’
আড়বান্দি পঞ্চায়েতটা বরাবরই কংগ্রেসের গাঁট। টেবিলে আড়বান্দির ইভিএম দেখে দলের নেতারা প্রথম থেকেই তাই অস্বস্তিতে ছিলেন। চেয়ার থেকে ইশারায় শঙ্কর বলেছিলেনে, ‘‘আরে দেখ না, খেলা তো সবে শুরু!’’
মিনিট পনেরোর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল— আড়বান্দি ১-ই তাঁকে এগিয়ে দিয়েছিল প্রায় আড়াইশো ভোটে। ছুটন্ত ট্রেনটা আর থামেনি। সেই ব্যবধান বেড়ে এক সময়ে দাঁড়িয়ে ছিল সাড়ে তেইশ হাজার। শঙ্কর বলছেন, ‘‘মাঠ ছেড়ে কখনও পালাবি না জানিস, দেখবি এক সময়ে জয় এসে হামাগুড়ি দিয়ে বসেছে তোর সামনে!’’
শুধু আড়বান্দি কেন, রানাঘাট পুরসভার দু’টি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সর্বত্রই এগিয়ে ছিলেন শঙ্কর। দিন সাতেক আগেও, ঘনিষ্ঠদের কাছে শঙ্কর কবুল করেছিলেন, পঞ্চায়েতগুলো নিয়ে চিন্তা নেই, সমস্যা রানাঘাট পুরসভাটা।
যে পুরসভার দখল নিয়ে গত সাত বছর ধরে মৌরুসি পাট্টা যাঁর একদা তিনি ছিলেন শঙ্করের শিষ্য। সেই পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায় এ বার ছিলেন তাঁর প্রতিপক্ষ। দিন কয়েক আগেও যিনি জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘জয়টা নিছক সময়ের অপেক্ষা।’’ দলনেত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকেও সে কথা জানিয়ে এসেছিলেন তিনি। তা হলে এমন ভরাডুবি কেন? শঙ্করের এক লক্ষ ৯ হাজার ৬০৭ ভোটের জবাবে পার্থর ঝুলিতে ৮৬ হাজার ১৮৭।
মালা-মিষ্টিতে মাখামাখি শঙ্কর বলছেন, ‘‘ঔদ্ধত্য মারাত্মক ক্ষতিকর জানেন তো, ওটাই সকলের কাল
হয়, আর ওটা ভুলতে পারলেই আড়বান্দিও বাধা নয়!’’ শিশুর মতো হাসছেন সিংহ শঙ্কর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy