Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দুয়ার আঁটা হাসপাতাল, মাঠেই প্রসব

নীলিমা মণ্ডলের বাড়ি চাকদহে। মাস কয়েক ধরে বাপের বাড়ি, মার্টিয়ারি বাগানপাড়ায় আছেন। শুক্রবার রাতে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ায় বাড়ির লোক তাঁকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। বানপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, ভিতরে আলো ও পাখা চললেও সাড়া নেই কারও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৮
Share: Save:

গ্রামের আঁতুরঘর আর নয়, হাসপাতালেই প্রসব— স্বাস্থ্য দফতরের এই অনর্গল প্রচার আর বিবিধ কর্মসূচির মধ্যেই, সরকারি হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক কিংবা প্রশিক্ষিত নার্স না থাকায় হাসপাতাল চত্বরের কোলা মাঠে সন্তান প্রসব করলেন এক মহিলা। আর সময় মতো সেখানে হাজির হয়ে সদ্যোজাতের নাড়ি কাটলেন এক ধাইমা।

জানাজানি হতে, স্থানীয় গ্রামবাসীরা শনিবার সকাল থেকে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ক্ষোভ আছড়ে পড়ে লাগোয়া পঞ্চায়েতেও। সেখানে প্রধানের ঘরেও তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। দুপুর নাগাদ কালীগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে তাঁদের।

নীলিমা মণ্ডলের বাড়ি চাকদহে। মাস কয়েক ধরে বাপের বাড়ি, মার্টিয়ারি বাগানপাড়ায় আছেন। শুক্রবার রাতে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ায় বাড়ির লোক তাঁকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। বানপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, ভিতরে আলো ও পাখা চললেও সাড়া নেই কারও। নীলিমার সঙ্গে এসেছিলেন গ্রামের স্বাস্থ্য কর্মী লাকি বিবি। তিনি বলেন, “প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ডাকাডাকি করেও সাড়া পাইনি। এ দিকে মেয়েটা যন্ত্রণার ছটফট করছে। যে কোনও অবস্থায় খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে।’’ বাধ্য হয়ে তাঁরা নীলিমাকে ধরাধরি করে হাসপাতালের সিঁড়ির পাশে ভেজা মাঠে শুইয়ে দেন। মিনিট কয়েকের মধ্যেই সেখানেই প্রসব হয় তাঁর।

এই পরিস্থিতিতে বাড়ির লোক কান্নাকাটি জুড়ে দেন। কান্না শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়েরা। খবর দেওয়া হয় পাশের গ্রাম বরুইপাড়ার বাসিন্দা পেশায় ধাই রিজিয়া বিবিকে। তাঁকে আনতে সাইকেল নিয়ে ছোটেন নীলিমার বাবা। সাইকেলের কেরিয়ারে বসে সে মহিলা এলেন বটে, কিন্তু নাড়ি কাটবেন কি দিয়ে!

শেষ পর্যন্ত গ্রামের ভিতর থেকে অনেক খুঁজে নতুন ব্লেড নিয়ে আসেন স্থানীয় যুবকেরা। তাই নিয়ে নাড়ি কেটে কাপড় থেকে সুতো বের করে নাড়ি বাঁধেন রিজিয়া। হাসপাতালের দরজা তখনও বন্ধ। হাসপাতালের গায়েই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের আবাস। অভিযোগ, তাঁরা কেউই গেট খুলতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ভোরের আলো ফুটতে মোবাইলে বার্তা পাঠান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। খোলে হাসপাতালের দরজা।

তবে, সেখানে আর ভর্তি করানোর ভরসা করেননি নীলিমার বাড়ির লোক। এ দিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। সাড়ে দশটা নাগাদ চিকিৎসক এলে তাঁকে তালা বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। স্থানীয় মার্টিয়ারি-বানপুর গ্রাম পঞ্চয়েতের প্রধান তৃণমূলের সীমা নন্দী এলে তাঁকেও তালাবন্ধ করে রাখা হয়। সীমা অবশ্য বলেন, “গ্রামের মানুষের এই ক্ষোভ স্বাভাবিক।”

১০ বেডের এই হাসপাতালটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার কথা। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরেই রাতে তালা বন্ধ থাকছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “নার্সিং স্টাফ মাত্র তিন জন। আমি একমাত্র চিকিৎসক। তাও কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় সেখানে ছিলাম। কী করব বলুন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE