Advertisement
E-Paper

টাকা ব্যাঙ্কে, দেড়শোয় চাপে মাজদিয়ার স্কুল

দেড়শো বছরে পা দেওয়া বলে কথা। তাই বাজেট বাড়তে-বাড়তে ৪৫ লক্ষ টাকা ছুঁয়েছিল। কিন্তু এখন অকূল পাথারে পড়ে গিয়েছেন মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২১

দেড়শো বছরে পা দেওয়া বলে কথা। তাই বাজেট বাড়তে-বাড়তে ৪৫ লক্ষ টাকা ছুঁয়েছিল। কিন্তু এখন অকূল পাথারে পড়ে গিয়েছেন মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ।

টাকার অঙ্কটা উৎসবের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বাজেট তৈরি হয়েছিল বছরখানেক আগে। স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘টাকা নিয়ে ভাববেন না স্যার। সব জোগাড় হয়ে যাবে। কিন্তু অনুষ্ঠান করতে হবে তাক লাগানোর মতো। না হলে এলাকার যে মান থাকে না!’

সেই ‘মান’ রাখতে এখন ছাত্রদের দোরে দোরে যেতে হচ্ছে শিক্ষকদের, যদি কিছু নগদ মেলে এই আশায়।

সৌজন্যে, নোট বাতিল।

সেই ধাক্কায় এখন কার্যত পণ্ড হতে বসেছে স্কুলে সার্ধশতবর্ষ সূচনার সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান। গত দেড় মাস বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকার জোগাড় অনেকটাই করে ফেলেছেন। কিন্তু সেই টাকা রয়েছে ব্যাঙ্কে। হাতে পাওয়ার উপায় নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৫০ দিন পরে সমস্যার সুরাহা হয়নি, সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা ২৪ হাজারই রয়ে গিয়েছে। তাতেই চাপে পড়ে গিয়েছে স্কুলটি।

১৮৬৮ সালের ১২ জানুয়ারি পথ চলা শুরু হয়েছিল মাজদিয়া রেল বাজার হাইস্কুলের। ব্রিটিশ জমানায় প্রথমে সেটি ছিল মাজদিয়া মিডিয়ম ইংলিশ স্কুল। ১৮৯১ সালে সেটি হাই ইংলিশ স্কুলে উন্নীত হয়। পরে নাম হয় মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুল। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এটিই ছিল এলাকার এক মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র।

অশীতিপর রামচন্দ্র মল্লিক জানান, এই স্কুল নিয়ে এলাকাবাসীর আবেগ অন্য রকমের। তাঁরা চেয়েছিলেন স্কুলের দেড়শো বছর উদ্‌যাপন হোক ধুমধাম করে। এক বছর আগেই তার রূপরেখা তৈরি হয়ে যায়। কয়েক মাস আগেই সঙ্গীতশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য, শম্পা কুণ্ডু এবং কয়েকটি স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে বায়না করা হয়েছে। পুরুলিয়ার ছৌ নাচের দল, বীরভূমের আদিবাসী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, জেলার নাটকের দলের সঙ্গে কথা পাকা হয়ে রয়েছে নোট বাতিলের আগে থেকেই। গত ৮ নভেম্বর যখন পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল হচ্ছে, তখন সবে স্কুল ভবন সংস্কার ও রঙ করার কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচিল দেওয়ার কাজ চলছে। শহর জোড়া জমকালো গেট তৈরির কথা ছিল।

কিন্তু প্রশ্ন একটাই— টাকা কই? প্রধান শিক্ষক রতন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই এক টাকার চিন্তাতেই ঘুম উড়ে গিয়েছে। এত বড় বাজেট, অথচ হাতে টাকা নেই।’’ অধিকাংশ মানুষই চেকে চাঁদা দিয়েছেন। সেই টাকা স্কুল হাতে পাচ্ছে না। ঠিকাদারদের প্রথম দিকে চেকেই টাকা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে না বলে তাঁরাও চেক নিতে চাইছেন না।

পাটিগণিতের হিসেব বলছে, সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা করে তুললে ৪৫ লক্ষ টাকা হাতে আসতে ১৮৮ সপ্তাহ অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় লাগে! এর কিছুটা হাতে আছে ঠিকই, বাকিটা ব্যাঙ্কে। ‘‘কত টাকা উঠল, আর বাকিটা কী ভাবে তোলা যাবে ভাবলেই রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে’’— বলছেন রতনবাবু। অন্য এক শিক্ষক বলেন, ‘‘কোনও রকমে বাইরের শিল্পীদের জন্য নগদ জোগাড় করছি। বাকিটা যে কী হবে, জানি না!’’

‘মিত্রোঁ... আজ রাত ১২টার পর থেকে যত খুশি টাকা তোলা যাবে’— এই ঘোষণা শুনতেই এখন কান খাড়া করে আছে গোটা রেলবাজার।

Demonetisation school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy