রাসের বিসর্জন নবদ্বীপের পিরতলার খালে। ফাইল চিত্র
বৃন্দাবনের জ্যোৎস্না-পথে শ্রীমতি রাধা চলেছেন সখী পরিবৃত হয়ে। যমুনার তীরে আজ বসন্ত রাস। পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে। খুশিতে উদ্বেল সকলে। উড়ছে আবির গুলাল। অকাল হোলিতে ভাসছে চারদিক। হেমন্তসন্ধ্যার শিশির মাখা গোলাপ পাপড়ি ঝরছে রাজপথে। সখীদের পিচকারি থেকে অনর্গল রঙের ধারা। রঙ্গ সারি গুলাবি চুনারিয়া রে...
সংকীর্তনে বেরিয়ে জগাই-মাধাইয়ের কলসির আঘাতে নিত্যানন্দের মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। খবর পেয়ে সদলবল ছুটে এসেছেন মহাপ্রভু। রক্তাক্ত নিতাইকে দেখে সীমাহীন ক্রোধে ফেটে পড়লেন নিমাই। তাঁর সেই রুদ্ররূপে জড়সড় দোর্দণ্ডপ্রতাপ দুষ্কৃতীরা। কিন্তু শাস্তির বদলে নিতাইয়ের পরামর্শে তাঁদের ক্ষমা করলেন শ্রীচৈতন্য। উদ্ধার হল জগাই-মাধাই। আজ, মঙ্গলবার রাতে শহরের রাজপথ জুড়ে এমনই রংবেরঙের খণ্ডচিত্রের সাক্ষী থাকবে নবদ্বীপ। রাসের নতুন সংযোজন, কার্নিভাল নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ, মেদিনীপুর থেকে মণিপুর ঢুঁড়ে উদ্যোক্তারা খুঁজে আনছেন লোকনৃত্য, লোকনাট্য ও গানের দল। কেউ নাচে জোর দিচ্ছেন, কেউ গানে। কারও বাজি রায়বেঁশে, কারও অস্তিনে লুকনো বৃন্দাবনী নৃত্য। রণপা নৃত্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে যদি ময়দানে নামে ছৌ, তাহলে মণিপুরি নাচকে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকছে কথাকলিও।
যদিও কে কী পরিবেশন করবেন, তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ক্লাব বা বারোয়ারির কর্তারা। সকলেরই এক রা, ‘‘আর তো কয়েকটা মাত্র ঘণ্টা। তারপরেই দেখতে পাবেন সব কিছু। এটুকু গোপনীয়তা থাক না।’’ কিন্তু কেন এই লুকোচুরি? ফাঁসিতলার কৃষ্ণকালী মাতা বারোয়ারির সুব্রত গুঁই বলছেন, ‘‘আসলে এমন কিছু দেখাতে চাই যেটা স্বতন্ত্র। আমরা চাই না সেটা অন্যেরা জেনে যাক। সেই কারণে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি।’’ অন্যতম উদ্যোক্তা তথা নবদ্বীপের কাউন্সিলর গোষ্ঠবিহারী ভট্টাচার্য জানান, সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে কার্নিভালের জন্য।
নবদ্বীপের বিধায়ক ও পুরপ্রধানের পাড়া বড়ালঘাটের ভুবনেশ্বরী মাতা বারোয়ারির উদ্যোক্তারা জোর দেন কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের মতো ট্যাবলোয়। ‘বিশ্ব বাংলায় বিশ্বকাপ, নবদ্বীপ সকার কাপ’ শীর্ষক ট্যাবলোয় তাঁরা রাখছেন নিজেদের ক্লাব ফুটবল দল।
আজাদ হিন্দ ক্লাব জোর দিয়েছে মানব-মডেলের উপর। শহরের চেনা পথে কুচকাওয়াজ করবে আজাদ হিন্দ ফৌজ। সামনে তাঁদের সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কদম কদম গতির রেশ মেলাতে না মেলাতে দেখা যাবে ভারতমাতা হেঁটে চলেছেন। লালপাড় সাদাশাড়িতে শঙ্খ বাজিয়ে তাঁকে পথ দেখাবেন পঞ্চাশ মহিলা। শোভাযাত্রায় আগে থাকবে মহাপ্রভুর জীবন্ত বিগ্রহ। কীর্তন রসভারতী সরস্বতী দাস শোনাবেন পদাবলি কীর্তন। সঙ্গে মিশবে ঝুমুর গান।
রাসের কার্নিভালে সবচেয়ে বড় চমক নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন যুবদল। ইতিমধ্যে শতাধিক কার্নিভাল ইউনিফর্ম তৈরি করে হইচই ফেলে দিয়েছে তারা। যুবদলের মহিষমর্দিনী মাতার কার্নিভালে অন্যতম আকর্ষণ চন্দননগরের আলোকসজ্জা। স্বাধীনতা সংগ্রামীর কাটআউট থেকে রাজস্থানী নাচ এবং ডান্ডিয়া নৃত্য থাকবে। বাজেট দু’লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বুটিকের পোশাকে কার্নিভাল সাজাচ্ছে বামাকালী বারোয়ারী বা রাজ রাজেশ্বরী গঙ্গামাতা। মহিলা ঢাকিদের নিয়ে পথে নামছে পোড়ামাতলার পার্থসারথি বারোয়ারি। সব মিলিয়ে কে কাকে ছাপিয়ে যেতে পারে তারই তুল্যমূল্য প্রস্তুতিতে মেতে রাসের নবদ্বীপ। কার্নিভালের জন্য রেখে দেওয়া তুরূপের তাস ফেলে বাজিমাত করবে কে? অপেক্ষায় নবদ্বীপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy