Advertisement
০১ মে ২০২৪

স্মার্টফোন, কন্যাশ্রীর টানেই ভোটমুখী মেয়েরা

সামান্য হলেও গত কয়েক বছরে নদিয়ায় মহিলা ভোটার বেড়েছে। একে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসাবে দেখছেন প্রশাসনিক কর্তারা। ভোটে মহিলারা এগিয়ে আসছে মানে ধরা যেতে পারে কিছুটা হলেও নিজেদের দাবি, অধিকার সম্পর্কে তাঁরা সচেতন হচ্ছেন।

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

সামান্য হলেও গত কয়েক বছরে নদিয়ায় মহিলা ভোটার বেড়েছে। একে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসাবে দেখছেন প্রশাসনিক কর্তারা। ভোটে মহিলারা এগিয়ে আসছে মানে ধরা যেতে পারে কিছুটা হলেও নিজেদের দাবি, অধিকার সম্পর্কে তাঁরা সচেতন হচ্ছেন। ক্ষমতায়নের পথে হাঁটতে চাইছেন। এই প্রবণতা যাতে জিইয়ে রাখা যায় তার জন্য এই প্রবণতার পিছনে মূল কারণ অনুসন্ধান করতে শুরু করেছে প্রশাসন। তাতে সামনে উঠে এসেছে দু’টি প্রধান বিষয়। কন্যাশ্রী এবং স্মার্টফোন!

আপাত ভাবে দু’টোর মধ্যে কোনও মিল নেই, কিন্তু এই দুইয়ের জন্য মহিলারা বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সী ও নতুন ভোটারেরা ভোটার তালিকায় নাম তুলতে ও ভোট দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পাওয়ার প্রধান শর্তই হল, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ে করা চলবে না, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। সেই কারণে স্কুলছুট মেয়ের সংখ্যা কমছে। আগের তুলনায় বেশি ছাত্রী উঁচু ক্লাসে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে। কলেজে যাচ্ছে। শিক্ষার আলো তাদের মধ্যে অধিকার আদায়ের, উন্নয়ন ও সুযোগ ছিনিয়ে নেওয়ার তাগিদ তৈরি করেছে। তারা ভোট দিতে আগ্রহী হচ্ছে। কারণ, মনে করছে, এটা তাদের পছন্দকে মান্যতা দেওয়া বা অধিকার প্রয়োগ করার পথ।

জেলা প্রশাসন মনে করছে, কন্যাশ্রীর কারণে প্রত্যন্ত গ্রামেও মানুষের ভাবনাচিন্তা ও সামাজিক চেতনায় পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের লোক মেয়েদের অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে। কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে, বিয়ে রুখে দিচ্ছে, স্কুলে মেয়েদের ফুটবল দল তৈরি হয়েছে, অক্ষরজ্ঞানহীন অভিভাবকদের কন্যাশ্রীর মেয়েরা পড়াশোনা শেখাচ্ছে— সব মিলিয়ে মেয়েদের মানুষ জ্ঞান না করা বা বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দেওয়ার যে বাতাবরণ ছিল, তা গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে। মেয়েরা নিজেরাও সচেতন হয়েছে। ১৮ বছর হলে তারা নিজেরাই ভোটার তালিকায় নাম তুলছে। ভোট দিতে যাচ্ছে।

এ ছাড়াও ভোটার তালিকায় মহিলাদের সংখ্যাবৃদ্ধির পিছনে স্মার্টফোনকেও অনেকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন। গ্রামেও এখন ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সকলের হাতে স্মার্টফোন। তাতে সিম প্রয়োজন। সিম হাতে পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ভোটার কার্ড। আর তার জন্য ভোটার তালিকায় নাম তোলা বাধ্যতামূলক। অনেক মেয়েই মোবাইল সিমের টানে ভোটার তালিকায় নাম তুলছে এবং ভোট দিচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এখন বিভিন্ন কারণে মেয়েদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করতে হচ্ছে। যেমন, মেয়েরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, মেয়েদের নামে গ্যাস আসছে, আবাস যোজনার টাকা আসছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা মেয়েরাও পাচ্ছে। এই সব কিছুর জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দরকার আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জন্য দরকার ভোটার কার্ড। অনেকে আবার জানিয়েছেন, গ্রাম থেকে পুরুষদের একটা বড় অংশ ভিন্ রাজ্যে বা ভিন্ দেশে কাজ করতে যান। তাঁরা মাসের টাকা পাঠান স্ত্রী বা মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই অ্যাকাউন্ট খুলতে ভোটার কার্ড প্রয়োজন। নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Female Voter Positive Change
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE