Advertisement
E-Paper

দুধে ভেজাল, অভিযান 

স্বাস্থ্য দফতরের এক খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক জানাচ্ছেন, দফতর বহু দিন ধরেই খাদ্যে ভেজাল ধরার কাজ করছে। তবে, ইদানীং এ বিষয়ে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২২
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

বেশ কয়েক বছর ধরেই নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ভেজাল দুধের কারবার হচ্ছে বলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের দাবি। আর এ বার সেই ভেজাল ঠেকাতে উঠে-পড়ে লেগেছে স্বাস্থ্য দফতর-সহ একাধিক দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি কমিটি। ওই কমিটিতে রয়েছে জেলার কিসান মিল্ক ইউনিয়নের আধিকারিকেরাও।

স্বাস্থ্য দফতরের এক খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক জানাচ্ছেন, দফতর বহু দিন ধরেই খাদ্যে ভেজাল ধরার কাজ করছে। তবে, ইদানীং এ বিষয়ে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাসখানেক আগে দুধে ভেজাল প্রতিরোধের জন্য ব্লক স্তরেও কমিটি তৈরি হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক, সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও, ব্লক প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, এলাকার থানার ওসি বা আইসি-রা ওই কমিটিতে রয়েছে। কমিটির লোকজন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষকে ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতন করছেন। শেখানো হচ্ছে, কী ভাবে ঘরোয়া উপায়ে দুধ বা ঘিয়ের ভেজাল চিহ্নিত করা যায়।

সূত্রের খবর, জেলার যে সব এলাকায় দুধের চিলিং প্ল্যান্ট রয়েছে, সেগুলিতে নিয়মিত হানা দিচ্ছে ওই কমিটি। কিসান মিল্ক ইউনিয়নের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ভেজাল দুধের রমরমার তালিকায় নদিয়ার নাম বেশ উপরের দিকেই রয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযানও চলছে নিয়মিত। তিনি জানান, মাসখানেকের মধ্যেই বার্নিয়া, ধরমপুর, দেবগ্রাম, ভালুক মতো বেশ কিছু জায়গার চিলিং প্ল্যান্টে অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে কিছু প্ল্যান্টের দুধে ভেজালের সন্ধান মিলেছে।

জেলার ১৭০টি গ্রাম থেকে কিসান কিসান মিল্ক ইউনিয়ন দুধ সংগ্রহ করে। তাদের জেলা জুড়ে ১০টি চিলিং প্ল্যান্ট রয়েছে। ওই ইউনিয়নের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উৎসব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমাদের প্ল্যান্টের দুধ তো কলকাতার সরকারি ডেয়ারিতে যায়। আর কিসানে সংগ্রহ করা দুধ রীতিমতো যাচাই করেই তা কলকাতায় সরকারি ডেয়ারিতে পাঠানো হয়। তাই ভেজাল মেলে না।’’

কিন্তু বেসরকারি ডেয়ারিগুলিতে সে রকম নজরদারি নেই বলেই জানাচ্ছে ভেজাল-প্রতিরোধ কমিটি। যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রামে গ্রামে ভেজাল দুধ তৈরি হচ্ছে। সেই দুধই চিলিং প্ল্যান্ট ঘুরে কলকাতায় যাচ্ছে।

কী ভাবে চলে এই ভেজালের কারবার? দুধ ব্যবসায়ীদের একাংশ ও ভেজাল প্রতিরোধে তৈরি কমিটির আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, চাষিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে গোয়ালারা নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার পর ওই দুধের ক্রিম তুলে নেওয়া হয়। ক্রিম বিক্রি করা হয় ছানার কারবারিদের। আবার, অনেক দুধ থেকে ছানা তৈরি হয়। ক্রিমহীন দুধ বা ছানা করার পরের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। পাতলা হয়ে পড়ে সেই দুধ। অভিযোগ, এখানেই গোয়ালাদের একাংশ কারসাজি করে। তাঁরা সেই পাতলা-ফ্যাটহীন দুধে বিভিন্ন ধরনের ভেজিটেবল বা প্রাণীজ ফ্যাট মেশান। পাম তেল বা ওই ধরনের জিনিস মিশিয়ে পাতলা দুধকে ঘন করে তোলেন। এর ফলে দুধে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। ক্রিমহীন ওই দুধ কোনও ডেয়ারিই নেয় না। দুধের মূল্যও নির্ধারণ করা হয় ফ্যাটের মাত্রা বিচার করে। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা ফ্যাট মিশিয়ে তা বিভিন্ন চিলিং প্ল্যান্টে পাঠান। সেটাই চলে যায় ডেয়ারিতে।

কিসান মিল্ক ইউনিয়নের সংগ্রাহক ও সম্প্রসারণ আধিকারিক নারায়ণ ঘোষ বলছেন, ‘‘তেহট্ট মহকুমা এলাকাতে তো এক সময়ে ভেজাল দুধের বিরুদ্ধে রীতিমতো আন্দোলন হয়েছিল। তবুও এই কারবার বন্ধ করা যায়নি। এ সব ভেজাল দুধ খেলে নানা ধরনের পেটের সমস্যা, এমনকী ক্যানসারও হতে পারে। এর বিরুদ্ধে তাই নতুন করে ব্লক স্তরের কমিটি তৈরি করে অভিযান শুরু হয়েছে।’’ এরই মধ্যে বার্নিয়ার এক চিলিং প্ল্যান্টে দুধে ভেজাল মিলেছে। নিজস্ব চিত্র

Adulteration Kalyani Milk Dairy Products
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy