Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কাস্তের গানে দোলা লাগল জোড়াফুলে

পিকনিক হচ্ছে। হাজির সব দলের নেতারা। সামনের পঞ্চায়েত ভোটে লাঠালাঠি হবে, কিন্তু এ দিনটায় কারও কোনও রং নেই।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

শীতের ফিনফিনে দুপুর।

‘আমি বৌ-পাগলা’ বলে গান ধরেছেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অরুণময় দাস। দূরে দাঁড়িয়ে হাসিতে ফেটে পড়ছেন তৃণমূলের মহম্মদ মোস্তফা, এজারত আলিরা।

গান শেষ হতেই আর্জি— “আর একটা হয়ে যাক অরুণদা!”

অনুরোধের আসরে পরের ভেট— ‘ট্যাংরা তবু কাটন যায়’। সূর্য তখন ফিডার ক্যানাল লকগেটের মাথায়।

পিকনিক হচ্ছে। হাজির সব দলের নেতারা। সামনের পঞ্চায়েত ভোটে লাঠালাঠি হবে, কিন্তু এ দিনটায় কারও কোনও রং নেই।

খাওয়ার লম্বা লাইন বুফে-তে। কংগ্রেসের বিধায়ক মইনুল হক চিমটে দিয়ে এক পিস মাংস তুলেছেন, পিছন থেকে তৃণমূলের সুনীল চৌধুরীর টিপ্পনী— “দাদা, শরীরের দিকে নজর রাখবেন।” মইনুল হাসেন, “এসেছি যখন, না খেয়ে যাই কী করে!”

আইএসও শংসাপত্র পাওয়ার ফুর্তিতে পৌষের গঙ্গাপাড়ে ফরাক্কা পিকনিকের এই আয়োজন পুলিশের। দুপুরের পাতে ভাত, ডাল, আলু মটর, সব্জি, মাছ ভাজা, খাসির মাংস। শেষ পাতে চাটনি, দই, মিষ্টি।

কে নেই সেখানে? সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সত্তরোর্ধ্ব আবুল হাসনাত শারীরিক কারণেই আসতে পারেননি। তবে তাঁর ছেলে রনি খান হাজির। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ দুই নেতা সোমেন পান্ডে ও সুনীল চৌধুরীও এসেছেন। বাদ নেই বিজেপি নেতা সুভাষ মণ্ডলেরাও। পঞ্চায়েতের কর্মাধ্যক্ষ, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বাহাদুরপুরের আদিবাসী প্রধান— বাদ নেই কেউই। সপরিবারে এসেছেন কেউ, কেউ বা একাই। এসে হাজির বিডিও, এসডিপিও।

মইনুলের কথায়, “পুলিশের পিকনিকে সব দলের নেতাদের আমন্ত্রণ তো সচরাচর জোটে না। বিরোধীরা তো অচ্ছুতই বলা যায়। ফরাক্কাতেই দেখছি ব্যতিক্রম। অন্তত এখনও পর্যন্ত এখানকার পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ নেই আমাদের। তাই আর পিকনিকে না করিনি।”

হাসনাত বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট আসছে। স্বভাবতই পুলিশ চাইছে, শান্ত থাকুক এলাকা। তাই সব দলের সঙ্গে জনসংযোগের চেষ্টা আর কী! কৌশলটা ভাল।” তৃণমূলের মহম্মদ মোস্তফাও বলেন, “গত কালও কলকাতায় ছিলাম। আইসি-র ফোন পেয়ে এসেছি। এটা যদি সকলকে নিয়ে চলার বার্তা হয়, অতি উত্তম।”

ফরাক্কার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, “উপলক্ষ শংসাপত্র প্রাপ্তি, লক্ষ্য জনসংযোগ। এখন পিকনিকের মরসুম, তাই এ ভাবেই সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত হওয়া। কাউকে দূরে সরিয়ে রেখে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই কখনও পিকনিক করে, কখনও গ্রামে মিনি থানা বসিয়ে মানুষের কাছে থাকার চেষ্টা করছি।”

কতটা কী হল, তার রেজাল্ট কার্ড মিলবে পঞ্চায়েত ভোটে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Picnic TMC BJP CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE