Advertisement
E-Paper

দেবজ্যোতি সুস্থ আছে তো

শেষতক হাতছাড়া হল কান্দি। অগুন্তি পুলিশ, ধর্না মঞ্চে অধীর চৌধুরীর উপস্থিতি, থেকে থেকেই ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা— বিকেল নাগাদ সব শেষ হল সদ্য দলবদল করা গৌতম রায়ের গাল এঁটো করা হাসিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৬
তখন চলছে তলবি সভা। ছবি—গৌতম প্রামাণিক।

তখন চলছে তলবি সভা। ছবি—গৌতম প্রামাণিক।

শেষতক হাতছাড়া হল কান্দি। অগুন্তি পুলিশ, ধর্না মঞ্চে অধীর চৌধুরীর উপস্থিতি, থেকে থেকেই ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা— বিকেল নাগাদ সব শেষ হল সদ্য দলবদল করা গৌতম রায়ের গাল এঁটো করা হাসিতে। এক ভোটে জিতে কংগ্রেসের ছয় দশক ধরে কান্দির দখলদারি হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কার বিনিময়ে?

কংগ্রেস বলছে দেবজ্যোতির। কারণ এ দিন তলবিসভায় তিনি হাজির থাকলে অবধারিত ভোটটা দিতেন কংগ্রেসকে। আর তার জেরে পাটীগণিতের নিয়মে ফের সমান সংখ্যক আসন পেয়ে কান্দিতে কায়েম থাকত কংগ্রেসের শাসন।

কিন্তু ‘অপহরণের’ পর প্রায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও দেবজ্যোতির হদিস মেলেনি। পুলিশও নির্বিকার গলায় জানিয়েছে, ‘‘উপেক্ষা করুন উনি ফিরে আসবেন!’’ মানে? যা শুনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ কী করে জানল অপহৃত কাউন্সিলর ফিরে আসবেন। কি করেই বা তা রা এত নির্বিকার থাকে?

আঙুল তাদের এখনও তোলা শাসক দল এবং তাদের ‘তাঁবেদারি’ করা পুলিশের দিকেই বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি। পাল্টা দাবি করে তৃণূল নেতা মান্নান হোসেন এ দিনও বলছেন, ‘‘এই নাটক শুরু করেছিল কংগ্রেস, ওরাই ফিরিয়ে আনুক দেবজ্যোতিকে।’’ কিন্তু তিনি গেলেন কোথায়?

ফলের অপেক্ষায় বাইরে উৎসাহী দুই দলের কর্মীরা।

এ দিনও সে প্রশ্নের জবাব কান্দির মানুষের কাছে নেই। আর, তার জেরেই ক্রমাগত বুজকুড়ি কাটছে নানাবিধ জল্পনা। সেই জল্পনার বোনা তাঁতে কখনও উঠে আসছে—আত্মীয়ের বাড়িতেই রয়েছেন দেবজ্যোতি। এক প্রবীণের প্রশ্ন, ‘‘ না হলে ওঁর স্ত্রীকে এমন নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে কেন?’’ কিন্তু, তা যদি নাটকই হয়, তাহলে কংগ্রেসই বা এত আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে কেন? কেনই বা তারা ওই কাউন্সিলরের নিশ্চিত ভোট হারিয়ে কান্দিই খুইয়ে বসল প্রায়।

তৃণমুল নেতারা তার একটা ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন— কান্দির চেয়েও কংগ্রেসর বড় প্রাপ্তি হতে পারে এই ‘অপহরণ’। নির্বাচনের মুখে সেই প্রচারই কংগ্রেসের ভোট বাক্স ভরিয়ে দিতে পারে। কংগ্রেস অবশ্য একে তৃণমূলের সহজাত ‘সৌজন্যহীনতা’ বলেই ধরিয়ে দিচ্ছেন। কংগ্রেসের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূলের কাছে কোনও দিন ভদ্রতা দেখেছেন! দলনেত্রীর ঔদ্ধত্যই তৃণমূলের শক্তির উৎস!’’

এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই কান্দি জুড়ে ছিল উত্তেজনা। সামাল দিতে হাজার কয়েক পুলিশের বড় বহিনীও মজুত ছিল শহরে। তবে তা সত্ত্বেও তলবি সভায় দু’পক্ষ পরস্পরকে গালমন্দ কম করেননি বলেই জানা গিয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তলবি সভায় সভাপতি নির্বাচিত করার সময় দু’পক্ষ থেকে দু’জনের নাম প্রস্তাব করা হয়। ফলে সভাপতি নির্বাচন করতেও ভোট করতে হয়। সেখানে পুরপ্রধানের পক্ষে গুরুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আটটি ভোট পান, বিপক্ষে গৌতম রায় নয়টি ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। গোপন ব্যালটে ভোট প্রক্রিয়া হওয়ার পরে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ন’জন কাউন্সিলর ভোট দেন। তাতে তৃণমূল অনাস্থা ভোটে জয়ী হয়।

তবে, দেবজ্যোতি রায় ফিরে এসে যদি ভোট দিতে চান, তাহলে এ দিনের তলবিসভার সিদ্ধান্ত সব ভেস্তে যাবে। এবং পুনরায় তলবি সভা করতে হবে। সেই সময় যদি কংগ্রেস ও তৃণমূলের হাতে আঠারোটি কাউন্সিলরের মধ্যে উভয়ের হাতে ন’জন করে কাউন্সিলর থাকে সে ক্ষেত্রে ভোটাভুটির পর টসের মাধ্যেমে পুরপ্রধান নির্বাচন করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের তলবি সভার রিপোর্ট হাইকোর্টের কাছে পাঠান হবে। এ দিনের তলবিসভার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অনন্যা জানা বলেন, “তলবিসভার সমস্ত রিপোর্ট জেলা শাসকের মাধ্যমে হাইকোর্টে পাঠান হবে। এখন পুরসভার পরিচালন করবে উপ-পুরপ্রধান। হাইকোর্টের পরবর্তি নির্দেশ অনুযায়ী পুরপ্রধান গঠন হবে।”

এ দিন, অপহৃত কাউন্সিলরকে উদ্ধারের দাবিতে কান্দি থানার সামনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস একত্রিত হয়ে অবস্থান করে। ওই অবস্থান বিক্ষোভে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার ও জেলার বারো জন বিধায়ক, হাজির ছিলেন সকলেই। সভা থেকে অধীর বলেন, “যারা কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছে তারা হাটের গরু ছাগল বিক্রির মতো তৃণমূলের কাছে বিক্রি হয়েছে। ওরা যে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিল সেটা বলতেও আমার ঘেন্না লাগে।’’

প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রাখছেন তিনি— “থানার ওসি থেকে জেলার এসপি, সব তৃণমূলের পা চাটা হয়ে গিয়েছে। দেবজ্যোতিকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে লক্ষ লক্ষ লোক এনে থানা থেকে সব পুলিশকে বের করে আনব। আমার নাম অধীর চৌধুরী আমি যা বলি সেটা করেও দেখাই।” মঞ্চে অধীরের পাশেই গোলাপি শাড়ি পড়ে বসেছিলেন সান্ত্বনা, দেবজ্যোতির স্ত্রী। তিনি শুধু বলছেন, ‘‘ও সুস্থ শরীরে পিরুক, এটাই চাইছি।’’

সেই ‘দেখা’র অপেক্ষায় আপাতত দিন গুনছে কান্দি।

abducted congress TMC kandi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy