Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাম্বুল্যান্স না, মৃত্যু শিশুর

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪টি নিশ্চয়যান রয়েছে। তবু ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রেফার করা এক সদ্যোজাতকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের দেখা মিলল না। শেষ পর্যন্ত শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠায় পরিবারের লোকজন বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে যখন মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছলেন ততক্ষণে তার দেহে প্রাণ নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আহিরণ শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪টি নিশ্চয়যান রয়েছে। তবু ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রেফার করা এক সদ্যোজাতকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের দেখা মিলল না। শেষ পর্যন্ত শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠায় পরিবারের লোকজন বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে যখন মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছলেন ততক্ষণে তার দেহে প্রাণ নেই।

সুতি-১ ব্লকের আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালের এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়ায়। বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান কংগ্রেস নেতারাও। তাঁদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আসে। বিক্ষোভের চাপে অ্যাম্বুল্যান্স মালিকের পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার। জঙ্গিপুর মহকুমার স্বাস্থ্য আধিকারিক শাশ্বত মন্ডল বলেন, “এ ব্যাপারে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। গাফিলতি প্রমানিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সোমবার ভর্তি হন মদনা গ্রামের এক প্রসূতি। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। প্রায় তিন কিলো ওজনের শিশুটি স্বাভাবিকই ছিল। শিউলির এটি দ্বিতীয় সন্তান।

মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ হঠাৎই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসক তাকে রেফার করেন জঙ্গিপুর হাসপাতালে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যেই ছিল দুটি নিশ্চয়যান। কর্তব্যরত নার্স দুই অ্যাম্বুল্যান্স চালককেই ফোন করেন। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।

এরপর দুই চালকের বাড়িতে পাঠানো হয় রোগীর পরিবারের লোকজনকে। বাড়িতেও তাদের দেখা মেলেনি। ইতিমধ্যে ঘন্টা দু’য়েক কাবার। মদনা গ্রাম থেকে শিশুটির দাদু শাজাহান শেখ খবর পেয়ে ততক্ষণে পৌঁছে গেছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তিনি কংগ্রেসের সাদিকপুর অঞ্চলের সভাপতি। তিনিই অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ার সমস্যার কথা জানিয়ে ভোরেই লোকজনকে ফোন করেন। তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে দিলে প্রসুতি বৌমা ও সদ্যোজাত নাতিকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান শাজাহান শেখ। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মারা গিয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেখানে ছুটে যান কংগ্রেস নেতারা।

স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক রজত দাস বলেন, “গ্রামাঞ্চলে সব সময় গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই সরকারি নিশ্চয় যান হিসেবে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি চালু হওয়ায় প্রসুতিরা হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। খাতায় কলমে ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চালু রয়েছে দেখিয়ে মাসে মোটা টাকা বিল তোলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওই সব নিশ্চয় যান কাজই করে না। অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে ভাড়ায় খাটানো হচ্ছে।” মঙ্গলবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি নিশ্চয় যান দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্যারাজে। কিন্তু কোনও চালক নেই। এক নার্স বলেন, “নিশ্চয় যানের চালকেরা কখনই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হাজির থাকেন না। ওই যানের চালকদের ফোন করে বার বার অনুরোধ করেও লাভ হয় না। রাতে তো তারা ফোনই ধরে না। এ দিনও ফোনই তোলেনি তারা। তাই সময়ে সদ্যোজাতকে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি। এমনটা না হলে হয়ত শিশুটিকে বাঁচানো হত।’’ মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, কেন ওই সদ্যোজাতকে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেল না, সে উত্তর দিতে হবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance refused baby Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE