রোগটা খুবই চেনা। কিন্তু তা আর সারানো যাচ্ছে না কিছুতেই।
রোগটা হাসপাতালে। কিন্তু এ রোগ সারানো ডাক্তারবাবুদের কম্ম নয়। বরং এ বার তাঁরাই আক্রান্ত। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বরের একটি অংশ কার্যত দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যায়। শনিবার তেমনই দুই সশস্ত্র দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হলেন ভিন্ রাজ্যের এক পড়ুয়া চিকিৎসক।
এ রোগ সারানোর কথা যাঁদের, সেই পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্তত তাঁদের অভিযোগ তেমনই। পুলিশ সুপার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে মোটেই আশ্বস্ত
হতে পারছেন না হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা।
কখনও রোগী, কখনও সংবাদমাধ্যমের কর্মী, কখনও স্থানীয় বাসিন্দা— হাসপাতাল চত্বরে দুষ্কৃতীদের হাতে বিভিন্ন সময় আক্রন্তক হয়েছেন অনেকেই। এ বার ভিন্ রাজ্যের এক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে প্রশাসন।
শনিবার রাত আটটা নাগাদ ডিউটি সেরে নিজের কোয়ার্টারের দিকে যাচ্ছিলেন হাসপাতালের ডিএনবি কোর্স করতে আসা চিকিৎসক পঙ্কজ চেন্ডকে। তিনি মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। হাসপাতাল থেকে আবাসনে যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত আলো নেই। ওই সময় তাঁর উপরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় দু’জন দুষ্কৃতী। তাঁরা পঙ্কজকে মারধর করে। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ কর্তারা। হাজির হয় পুলিশও। আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল-সহ রাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালে ডিএনবি (ডিপ্লোম্যাট ন্যাশনাল বোর্ড) কোর্স পড়ানো হয়। তিন বছরের এই স্নাতকোত্তর কোর্স এমডি ডিগ্রির সমতুল। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এই মুহূর্তে ২১ জন এমন পড়ুয়া রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ভিন্ রাজ্যের।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা এলাকায় এমন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ। এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘অনেকদিন ধরেই হাসপাতাল চত্বরে সমাজবিরোদীদেক দাপাদাপি। কোনও কারণ ছাড়াই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চিকিৎসককে মারধর! ভাবতেই পারছি না। যে কোনও দিন তো বেঘোরে মরতে হতে পারে।’’ হাসপাতালের নার্সরা জানান রাতবিরেতে ডিউটি সেরে আবাসনে ফিরতে হয়। এখন তো ওই রাস্তা দিয়ে ফেরাটাই মুশকিল। এর আগে একাধিকবার দুষ্কৃতীরা রোগীর বাড়ির লোকের কাছ থেকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। সাফাই কর্মীদের আবাসনে জুয়ার ঠেকে হানা দিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে খোদ পুলিশকেই।
চিন্তিত জেলার মুখ্য স্বাস্থ আধিকারিক তাপস রায়ও। তিনি বলেন, “হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসক আক্রান্ত হলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। আমরা অনেকদিন ধরেই হাসপাতালের মধ্যে একটা পুলিশ ক্যাম্পের জন্য আবেদন করছি। কিন্তু হয় নি।’’
চিকিৎসকদের প্রশ্ন, এমন ঘটনা ঘটলে ভিন রাজ্য থেকে চিকিৎসকরা এখানে পড়তে আসবে তো? পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হবে।”