E-Paper

ভোটের সময় পরিযায়ীরা ছিলেন কমই

নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, মুর্শিদাবাদের তিনটি কেন্দ্রে গড়ে পুরুষদের তুলনায় ১০ শতাংশ মহিলা ভোটদানে এগিয়ে রয়েছেন।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৯:৫০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

লকডাউনের জন্য এক দিকে কাজ হারিয়েছেন, অন্য দিকে পকেটের টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে ভিন্ রাজ্য থেকে মুর্শিদাবাদের গ্রামে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে বা অন্য যানবাহনে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ৮ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বাড়ি ফিরতে না পেরে মানসিক অবসাদে দু’জন পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে আত্মহত্যা করেন। করোনা ও লকডাউন পর্বে এ ভাবে মুর্শিদাবাদের ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের ভিন্ রাজ্যে মৃত্য হয়েছিল। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের মুখে উঠে এসেছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের সে সময়ে ঘরে ফেরার অব্যবস্থার কথা এবং তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথা। পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলিকে একে অপরে দুষেছেন। আর সেই পরিযায়ী শ্রমিকেরাই লোকসভা ভোটে ভোটবাবুদের পাশে থাকলেন না।

ভোটের সময় গ্রামে না এসে কর্মস্থলে থাকলেন পরিযায়ীরা। সদ্য দু’দফায় মুর্শিদাবাদের লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন শেষ হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে একদিকে বুথে বুথে মহিলা ভোটারদের লম্বা লাইন। অন্যদিকে বুথে বুথে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনুপস্থিতি। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা মুর্শিদাবাদে দু’দফার ভোটে বুথে বুথে ঘুরে দেখেছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক যেমন দেশের বিভিন্ন রাজ্য কর্মস্থলে থেকে গিয়েছেন, তেমনই বিদেশে কাজ করতে গিয়ে থেকে যাওয়া লোকের সংখ্যাও কম নয়। ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকদের সিংহভাগই কর্মস্থলে থেকে গিয়েছেন। যার জেরে পরিযায়ী শ্রমিকদের সে ভাবে বুথে দেখা যায়নি।

নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, মুর্শিদাবাদের তিনটি কেন্দ্রে গড়ে পুরুষদের তুলনায় ১০ শতাংশ মহিলা ভোটদানে এগিয়ে রয়েছেন। এ বারে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৮১.৫২ শতাংশ। তার মধ্যে ৭৭.১৪ শতাংশ পুরুষ, ৮৬.০৭ শতাংশ মহিলা এবং ২৮.৫৭ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোটদান করেছেন। আবার জঙ্গিপুর কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৭৫.৭২ শতাংশ। সেখানে ৬৮.৯১ শতাংশ পুরুষ, ৮২.৭৫ শতাংশ মহিলা এবং ১৭.৩৯ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোটদান করেছেন। বহরমপুর কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৭৭.৫৪ শতাংশ। তার মধ্যে ৭৩.৬১ শতাংশ পুরুষ, ৮১.৬২ শতাংশ মহিলা এবং ৩২.৫৬ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোটদান করেছেন।

এই তথ্য বলে দিচ্ছে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা ভোটদানে এগিয়ে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন এমন লোকজনের দাবি, মূলত পুরুষরা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ যান। আর পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ ভোট দিতে আসেননি। যার জেরে মহিলারা ভোটদানে এগিয়ে গিয়েছেন।

বহরমপুরের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি পঞ্চায়েত ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সংখ্যা সব থেকে বেশি থাকে। কারণ পঞ্চায়েত ভোটে স্থানীয় ইস্যু যেমন থাকে, তেমনই পাড়ায় পাড়ায় প্রার্থী থাকে। ফলে নিজে থেকে যেমন তাঁরা ফেরেন, তেমনই ছোট ছোট স্তরে ভোট হওয়ায় অল্প ভোটে জয় পরাজয়ের ব্যবধান হয়। তাই অনেক সময় প্রার্থীরা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হন। পঞ্চায়েতের মতো বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে হয় না। এ বারেও লোকসভা নির্বাচনে পরিযায়ী শ্রমিকদের সিংহভাগ তাঁদের কর্মস্থলে থেকে গিয়েছেন। তাই সে ভাবে বুথে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখা যায়নি।’’

জেলা শ্রম দফতর সূত্রের খবর, জেলায় নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ। বিদেশেও জেলার আরও লাখ দুয়েক মানুষ কাজ করেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

তাঁদের একটা বড় অংশ কর্মস্থলে থেকে গিয়েছেন। তবে তাঁদের ভোটদান করতে জেলায় ফেরানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কোনও উদ্যোগও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ভোটদানে উৎসাহ দিতে দেশজুড়ে নির্বাচন কমিশন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এই জেলাতেও ভোটদানে উৎসাহ দিতে নানা সচেতনামূলক কাজ করা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Berhampore migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy