হারিয়ে যাওয়ার দিন চারেকের মাথায় মিলল উত্তরপত্র। চলতি মাসের ৯ তারিখে মাধ্যমিকের অঙ্কের ১৪৭টি উত্তরপত্র হারিয়ে যায়। ওই দিন কামারহাটি চিত্তরঞ্জন হাই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক অপু সরকারের মোটরবাইকের পিছন থেকে উত্তরপত্রগুলি খোয়া যায়। রবিবার রাতে তা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। ওই ঘটনায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলেছি। তাঁর তিন দফার বেতনবৃদ্ধি আটকে যেতে হবে। আজ, মঙ্গলবার পরিচালন সমিতি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা পুরোপুরি অসতর্কতার কারণে ঘটেছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন বেলা ৩টে নাগাদ কৃষ্ণনগর হাইস্কুল থেকে ওই উত্তরপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন অঙ্কের শিক্ষক অপু সরকার। তাঁর বাড়ি নাকাশিপাড়ার গাছার বেজপাড়ায়। ধুবুলিয়ায় মোটরবাইকের পিছন থেকে উত্তরপত্র-সহ ব্যাগটি পড়ে যায়। বিষয়টি নজরে আসতেই তিনি খোঁজাখুজি শুরু করেন। ওই দিনই তিনি বিষয়টি ধুবুলিয়া থানায় জানান।
তারপর থেকেই ওই শিক্ষক, তাঁর সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে উত্তরপত্রের সন্ধানে বার হন। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে গাড়িতে করে প্রচার চালান তাঁরা। সিংহাটি, ধুবুলিয়া, গাছা, কামারহাটি— সব জায়গাতেই একাধিকবার ঘুরেছে প্রচার গাড়ি। ওই শিক্ষকের আবেদন ছিল—‘‘উত্তরপত্র ফেরত দিলে, কোনও আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেগুলি পেলে জমা দিন’’
শেষমেশ তাঁর আবেদনে কাজ হল। রবিবার রাতে ওই শিক্ষক লোকজন নিয়ে ধুবুলিয়া থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নাকাশিপাড়ার শালিগ্রামে খাতা ফেরতের আবেদন জানাচ্ছিলেন। তিনি অপু সরকার বলেন, ‘‘বিদ্যুতের খুঁটির ধারে কয়েকটি প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখি। খুলতেই দেখি ৪টি প্যাকেটে রয়েছে ১৪৭টি উত্তরপত্র। তার মধ্যে দু’টির প্যাকেটের মুখ খোলা ছিল। অন্য দু’টি ‘সিল’ করা ছিল। এই কয়েকদিনে সহকর্মী ও স্বজনেরা ভীষণ ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’’ উদ্ধার হওয়ার পরপরই ওই শিক্ষক উত্তরপত্রগুলি ধুবুলিয়া থানায় জমা দেন। সোমবার সন্ধ্যায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধিরা সেগুলি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই উত্তরপত্রগুলি পর্ষদের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ওই শিক্ষকের দাবি, ধুবুলিয়ার এক টোটো চালক তাঁকে জানিয়েছিলেন লুঙ্গি পরা এবং মাথায় টোপা (মাথাল) পরা এক ব্যক্তিকে রাস্তা থেকে চারটি প্যাকেট কুড়িয়েছেন। তা থেকেই বুঝতে পারেন আশপাশের গ্রামের কেউ প্যাকেটগুলি পেয়েছেন। সেই মতো লোকজন নিয়ে ওই শিক্ষক নিরন্তর প্রচার করতে থাকেন।
উত্তরপত্র খুঁজে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অপুবাবু। জোড়া স্বস্তি নেমে এসেছে তাঁর সংসারে। রবিবার রাতে উত্তরপত্র খুঁজে পেয়েছেন। আর সোমবার সকালে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলছেন, “অনিচ্ছাকৃত ভূলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। আমার আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। ওই দিন আমার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। যার ফলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম।’’
তবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অবশ্য ওই শিক্ষককে স্বস্তি দিচ্ছে না। ঘটনার পর দিনই প্রধান শিক্ষক প্রলয়কুমার চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলেছে। প্রলয়বাবু বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”