Advertisement
E-Paper

নিজের বাড়ি ফিরল টুকটুকি

দিন কয়েক আগে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট এসে পৌঁছয় জিআরপির কাছে। তাতে নিশ্চিত করা হয় যে, উলুবেড়িয়ার ওই মহিলাই শিশুটির জন্মদাত্রী মা। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি টুকটুকিকে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া দেয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ১৩:০০
মা-মেয়ে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

মা-মেয়ে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

এক রত্তি মেয়ের টান যে এমন, তা এতদিন বুঝতে পারেননি ঘড়ি ধরে চলা পেশাদার ডাক্তারবাবুও। বোঝার সময় যখন এল, সেদিন কার্যত পালিয়ে বেড়ালেন তিনি। ভয়ে নাকি?

‘‘নাহ, তা নয়। আসলে ওর চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কঠিন। টুকটুকি ওর মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। বাচ্চাটা যে সবাইকে বড় মায়ায় বেঁধে ফেলেছিল।’’ সরল স্বীকারোক্তি শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত বিশ্বাসের। গত কয়েক মাসে তিনি টুকটুকির মামা হয়ে উঠেছিলেন। কারণ হাসপাতালে তিনিই যে তার মুখে ভাত দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবারে সেই মেয়েই নিজের মায়ের সঙ্গে পইরে গেল নিজের বাড়িতে। এর মাঝে কত ঘটনা যে ঘটে গিয়েছে তা বুঝতেও পারেনি টুকটুকি।

টুকটুকি নামটা হাসপাতালের নার্স-আয়াদের দেওয়া। কী ভাবে সে হাসপাতালে এল, তা জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ১৫ মাস।

গত বছর মার্চ মাসে শান্তিপুরগামী ট্রেনে ওই শিশুটিকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন এক মহিলা। তার আচারণ দেখে সন্দেহ হয় অন্যান্য যাত্রীদের। তারা চেপে ধরতে মহিলা স্বাকীর করে নেন শিশুটি তাঁর সন্তান নয়। যাত্রীরাই শিশু-সহ মহিলাকে আরপিএফের হাতে তুলে দেন।

ওই মহিলাকে রানাঘাট জিএরপি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। রেল পুলিশের জেরায় ওই মহিলা জানান, সদ্যজাতটি তাঁর পরিচিত এক মহিলার সন্তান। বেশি বয়সে সন্তান হওয়ায় তিনি বিষয়টি গোপন করে তাঁর হাতে শিশুটিকে তুলে দিয়েছেন। উলুবেড়িয়ার ওই মহিলাও এসে দাবি করেছিলেন, তিনিই সদ্যজাত কন্যাসন্তানের মা। দেখভালের জন্য তিনিই নিজের সন্তানকে কালীনারায়ণপুরের ওই মহিলাকে দিয়েছিলেন।

তাঁর কথায় বিশ্বাস করতে পারেনি পুলিশ। আদালত সদ্যজাত এবং উলুবেড়িয়ার ওই মহিলার ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। শিশুটিকে পাঠানো হয় শান্তিপুর হাসপাতালে। আয়া-নার্সদের আদরে সেখানেই বড় হতে থাকে সে। নাম দেওয়া হয় টুকটুকি। এই হাসপাতালেই তার মুখেভাতও হয়েছে ঘটা করে।

দিন কয়েক আগে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট এসে পৌঁছয় জিআরপির কাছে। তাতে নিশ্চিত করা হয় যে, উলুবেড়িয়ার ওই মহিলাই শিশুটির জন্মদাত্রী মা। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি টুকটুকিকে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া দেয়।

হাসপাতাল থেকে যখন টুকটুকিকে নিয়ে তার মা বাড়ির পথে হাঁটি দিলেন, তখন আয়া-নার্সদের অনেকের চোখেই জল। এক আয়া টুকটুকির মা-কে বলেন, ওকে নিয়ে আসবেন মাঝে মাঝে। তিনি বললেন, ‘‘আসবো তে বটেই। এটাও যে ওর আর একটা বাড়ি।’’

Mother Daughter টুকটুকি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy